ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১


ঢাকায় লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ওষুধের ফার্মেসি!


২৩ জানুয়ারী ২০২১ ২০:২৪

আপডেট:
২৩ জানুয়ারী ২০২১ ২০:২৬

আয়নাল হোসেন: ওষুধ ব্যবসা কিংবা ফার্মেসি স্থাপন করতে হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স বা সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক। ঢাকা জেলায় সাড়ে ছয় হাজারের মতো ফার্মেসির খুচরা ওষুধ বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এসব লাইসেন্সের একটিরও মেয়াদ নেই! ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এমন তথ্য দেয়া আছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ওষুধের দোকানকে মডেল ফার্মেসিতে রূপান্তরের তাগিদ ছিল, কিন্তু সে তাগিদ বাস্তবায়িত হয়নি।

ওষুধবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের সব ওষুধের দোকানকে মডেল ফার্মেসি বা মডেল মেডিসিন শপ করার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। কারণ খুচরা ওষুধের দোকানে নকল, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও মানহীন ওষুধ বিক্রি করা ছাড়াও অধিকাংশ সময় অস্বাভাবিক দাম রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব বন্ধ করার লক্ষ্যে সব ওষুধের দোকানকে মডেল ফার্মেসিতে রূপান্তর করার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তারা।

১৯৪০ সালের ওষুধ আইনের ১৮ ধারায় বলা আছে, ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রি, মজুত বা বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা যাবে না। এই আইনের ২৭ ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই ধারা লঙ্ঘন করা হলে তিন বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে খুচরা ওষুধের লাইসেন্স রয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার ২৭০টি। আর বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির (বিসিডিএস) তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান রয়েছে এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজারের মতো।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক জসিম উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, আগামী মে মাসে সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ভোট প্রদান কিংবা অংশগ্রহণের জন্য অবশ্যই সবার লাইসেন্স হালনাগাদ করতে হবে। যদি লাইসেন্স নবায়ন করা না হয়েও থাকে তাহলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

এদিকে যেসব খুচরা ওষুধের দোকানের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি, সেগুলো মডেল মেডিসিন শপে রূপান্তর না করা পর্যন্ত নবায়ন করা উচিত হবে না বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, খুচরা ফার্মেসি থেকে মানুষ ওষুধ কেনার পাশাপাশি সেবা পাবেন। কিন্তু দেশের খুচরা ফার্মেসিতে কোনো ফার্মাসিস্ট না থাকায় মানুষ কোনো ধরনের সেবা পাচ্ছেন না। এ জন্য মডেল শপে রূপান্তর করা হলে সেখানে অন্তত

যেকোনো গ্রেডের একজন ফার্মাসিস্ট থাকবেন। এতে ভোক্তারা উপকৃত হবে। একইসঙ্গে সেখানে নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি অস্বাভাবিক মূল্য নেয়ারও সুযোগ থাকবে না।

রাজধানীর তেজগাঁও থানা এলাকার মেসার্স চৌধুরী ফার্মেসির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২০০৪ সালের ২ জুলাই। লাইসেন্স নম্বর ২৯৫৩। এরপর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স আর নবায়ন করা হয়নি। একই এলাকার মেসার্স সেবা মেডিকেল ফার্মেসির লাইসেন্স (নম্বর ডিএইচএ-০৪৬২৬) মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৫ সালের ২ জুলাই। এর পর থেকে আর সেটি নবায়ন করা হয়নি।

রাজধানীর ডেমরা থানা এলাকার মেসার্স হোসেন ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৯ সালের ২৮ নভেম্বর। যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার মেসার্স জনতা ফার্মেসির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। কলাবাগানের রাইপ ফার্মার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১০ সালের ১২ জুন। কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকার মেসার্স বিছমিল্লাহ ফার্মেসির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ও শরীফ মেডিকেলের লাইসেন্সের মেয়অদ শেষ হয়েছে ২০০৫ সালের ১৫ অক্টোবর। কোতোয়ালি থানা এলাকার মেসার্স বনানী মেডিকেল স্টোরের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৭ সালের ২১ অক্টোবর। দুলাল ফার্মেসির ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে এবং হিরা ড্রাগ হাউসের ২০০৭ সালের ১৩ জুলাই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর পর থেকে এসব প্রতিষ্ঠান আর লাইসেন্স নবায়ন করেনি। এমন হাজার হাজার উদাহরণ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ওষুধ ব্যবসায়ী সম্মিলিত পরিষদের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রনি বলেন, ‘ফার্মেসির লাইসেন্স হালনাগাদ করা ছাড়া ওষুধ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি সেটি নবায়ন না করে থাকে, তাহলে তাদের কাছে কোনো কোম্পানি যেন ওষুধ বিক্রি না করে।’ তবে লাইসেন্স নবায়ন করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তাদের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য দেয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলার ৫৭টি থানায় মোট খুচরা ওষুধের লাইসেন্স রয়েছে ছয় হাজার ৭৪৭টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাইসেন্স রয়েছে কোতোয়ালি থানা এলাকায়। এখানে লাইসেন্স রয়েছে ৫৮১টি। মিরপুর থানা এলাকায় ৩৭৩টি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ৩৩৯টি। এসব লাইসেন্সের মধ্যে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানেরই লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল না। এমনও ফার্মেসি আছে, যার লাইসেন্সের মেয়াদ দেড় যুগ আগে শেষ হলেও অদ্যাবধি নবায়ন করা হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আইয়ূব হোসেন বলেন, রাজধানীসহ ঢাকা জেলায় শতভাগ লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার বিষয়টি হয়তো সঠিক নয়। নবায়ন করা হলেও হয়তো সে বিষয়ে অনলাইনে হালনাগাদ তথ্য দেয়া হয়নি। লাইসেন্স নবায়ন যাতে হালনাগাদ করা হয়, সেজন্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে। এছাড়া ওষুধ ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গেও এ বিষয়ে যোগাযোগ রয়েছে। যাদের মেয়াদ নেই জরিমানা দিয়ে নবায়নের বিধান চালু রয়েছে।