ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫, ৪ঠা মাঘ ১৪৩১


অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ এর মূল শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিং


৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৪৬

আপডেট:
৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৪৯

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিভিন্ন ধরণের শুমারি পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শুমারিগুলো হলো জনশুমারি, কৃষি শুমারি ও অর্থনৈতিক শুমারি। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানিক কার্যক্রমসমূহের একটি হলো অর্থনৈতিক শুমারি যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৩ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। দেশের সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক শুমারি ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়, এরপর ২য় অর্থনৈতিক শুমারি ২০০১ এবং ২০০৩ সালে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়, ৩য় অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশে ৪র্থ অর্থনৈতিক শুমারি ১০-২৬ ডিসেম্বর ২০২৪-এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

অর্থনৈতিক শুমারির মূল লক্ষ্য হলো সময়ের বিবর্তনে একটি দেশের অর্থনীতিতে যে কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে, সে সম্পর্কে সম‌্যক ধারণা লাভ করা। শুমারির অন্যান্য উদ্দেশ্য হলো-অকৃষিমূলক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কাঠামো নির্ধারণ; System of National Accounts (SNA), 2008 এবং Bangladesh Standard Industrial Classification (BSIC), 2020 ও জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ অনুসরণে পল্লি ও শহর এলাকার শিল্প এবং সেবা খাতে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুত করা; শ্রেণিবিন‌্যাস অনুযায়ী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত সকল প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মৌলিক তথ‌্য সরবরাহ করা; অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত জনবলের হিসাব নিরূপণের পাশাপাশি তাদের ধরন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা; শিল্প বা ব‌্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ‌্যমান মৌলিক সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা;বিনিয়োগকৃত মূলধন ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী শিল্প ও ব‌্যবসা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন‌্যাসকরণ এবং তাদের সংখ‌্যা নির্ধারণ এবং শিল্পোন্নয়নের জন‌্য দেশের নীতিনির্ধারক, পরিকল্পনাবিদ, গবেষকসহ বিভিন্ন অংশীজনদের হালনাগাদ তথ‌্য-উপাত্ত সরবরাহ করা।

অর্থনৈতিক শুমারির আইনগত ভিত্তি হলো Allocation of Business অনুযায়ী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অর্থনৈতিক শুমারি পরিচালনা করে থাকে; পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারি সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে; পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নিয়োজিত শুমারিকর্মীগণকে তথ্য সরবরাহ করা সকল নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং অপরদিকে সরকার ব্যক্তিগত পর্যায়ের সকল তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করতে সকলকে নিশ্চয়তা প্রদান করছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর চূড়ান্ত কার্যক্রম ১০-২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সারাদেশব্যাপী সম্পন্ন করা হবে। এ উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর সোমবার সকাল ১১.৩০ ঘটিকায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর মূল শুমারির মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং ‘বিবিএস অডিটরিয়াম, পরিসংখ্যান ভবন আগারগাঁও ঢাকায় আয়োজন করা হয়। উক্ত প্রেস ব্রিফিং এ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা, গণমাধ্যমকর্মী এবং সুশীল সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত যুগ্মসচিব (পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা) ড. দিপংকর রায় বলেন, শুমারির তথ্য-উপাত্তের গুণগতমান নিশ্চিতকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে ০৩ ধাপে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ১ম ধাপে মাস্টার ট্রেইনারগণের (বিভাগীয় ও জেলা শুমারি সমন্বয়কারী) প্রশিক্ষণ; ২য় ধাপে উপজেলা শুমারি সমন্বয়কারী, জোনাল অফিসারগণ ও আইটি সুপারভাইজারগণের প্রশিক্ষণ এবং ৩য় ধাপে গণনাকারী ও সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তিনি অর্থনৈতিক শুমারির মাধ্যমে দেশের প্রকৃত আর্থিক চিত্র তুলে ধরে বলেন যে, যা ভবিষ্যতে উন্নয়ন নীতি প্রণয়নে সহায়ক হবে।তার জন্য যা কিছু প্রয়োজন সব কিছু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

উপস্থিত অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন), পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা মোঃ হামিদুল হক বলেন যে, মূল শুমারি সঠিক ভাবে সম্পন্নের জন্য দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এখন ১০-২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ এ ১৫ দিন ব্যাপী শুমারিকর্মীদের তথ্য সংগ্রহের গুনগতমান রক্ষা করার জন্য আপনারা -আমরা সকলে তা পরিবীক্ষণ করবো ফলে তা সফলতা পাবে।

এস এম শাকিল আখতার, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব),শুমারির টেকনিক্যাল এক্সপার্ট এবং সুশীলজনদের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মুল শুমারি চূড়ান্ত প্রস্ততি হিসেবে ইতোমধ্যে প্রকল্প টিম বিভিন্ন প্রস্তুতিমুলক কার্যক্রম যেমন,বিভাগীয় শুমারি সমন্বয়কারী এবং জেলা শুমারি সমন্বয়কারীগনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপজেলা/থানা শুমারি সমন্বয়কারী এবং জোনাল অফিসারগণের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং মাঠ পর্যায়ে এক লক্ষ ষোল হাজার ছয়শত তালিকাকারীদের প্রশিক্ষন ও সার্বক্ষনিক মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এ দেশের সকল জনসাধারণ-কে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে প্রকল্প টিম ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। প্রচারের অংশ হিসেবে শুমারি চলাকালীন টিভি স্ক্রলিং মেসেজ, TVC (Television Commercial), RDC (Radio Commercial), Animation Film (Character & Infographics based), TV PSA (Public Service Announcement), Theme song, Facebook, You Tube, Online Paper এ বিজ্ঞাপন প্রচার, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার এবং ক্রোড়পত্র, ডকুড্রামা, প্রামাণ্য চিত্র, টক শো ইত্যাদি টেলিভিশন ও বেতারে সম্প্রচারের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে। র‍্যালি, মাইকিং, সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জনসাধারণকে তথ্য প্রদানে উৎসাহিত করার নিমিত্ত ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

মো.মাহবুব হোসেন, সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ বলেন, "শুমারি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে Geographic Information System (GIS) ও Geocode সমন্বয় করে ডিজিটাল ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত ট্যাবলেটসমূহ Mobile Device Management (MDM) সফটওয়্যার ব্যবহার করে কেন্দ্রীয়ভাবে ডিভাইসসমূহ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল) এর সমৃদ্ধ ডেটা-সেন্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায় থেকে বিডিসিসিএল হয়ে বিবিএস সার্ভারে আসার পূর্ব পর্যন্ত সংগৃহীত সকল তথ্য-উপাত্ত encrypted অবস্থায় থাকবে; যার মাধ্যমে পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী একদিকে তথ্য সংগ্রহে শুমারিকর্মীগনকে সহযোগিতা করা অপরদিকে এই আইন দ্বারা জনসাধারণের প্রত্যকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা হবে। শুমারির যাবতীয় কার্যক্রম এবং মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম Integrated Census Management System (ICMS) এর মাধ্যমে মনিটর করা হবে। সর্বোপরি, আধুনিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ সহজতর হবে এবং স্বল্পতম সময়ে শুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।

উক্ত প্রেস ব্রিফিং-এ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেন যে ,অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও প্রবণতা সম্পর্কে সঠিক ও আপডেটেড তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিবিএস-এর কর্মকর্তারা শুমারির প্রতিটি ধাপে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ ও সময়মত সম্পন্ন করার জন্য নিবেদিত বদ্ধপরিকর থাকার কথা জানান।
শুমারি একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। সকলকে এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে সকলকে অনুরোধ করেন।