ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৯শে মে ২০২৫, ১৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশে আসছে চীন


২৬ মে ২০২৫ ১২:৩৮

আপডেট:
২৯ মে ২০২৫ ০৬:০৭

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও প্রায় ৩০০ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীর বিশাল দল নিয়ে আগামী ৩১ মে তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় কোনো বিদেশি ব্যবসায়িক দল এর আগে কখনও আসেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)।

বিডার কর্মকর্তারা জানান, চীনা প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মূলত টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, ইলেকট্রনিক্স ও কৃষি খাতের ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারী। এ সফরকে ঘিরে যৌথ বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বিডা, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো লজিস্টিক ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি শুরু করেছে।

৩১ মে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকায় অবতরণ করবেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী। বিকেলে তিনি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

১ জুন দিনভর পাঁচটি সেশনে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ম্যাচমেকিং করবেন চীনা ব্যবসায়ীরা। ওইদিন সকালেই একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

উদ্বোধনের পরদিন বাংলাদেশি ও চীনা ব্যবসায়ীরা পৃথক পাঁচটি সেশনে অংশ নেবেন। বিডা সূত্র জানিয়েছে, সেশনগুলো মূলত গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স, এবং অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতকে ঘিরে হবে।

বিডা ও বেজা সূত্রে জানা গেছে, চীনের ব্যবসায়ীদের অনেকেই প্রধান উপদেষ্টার আগের চীন সফরের পর অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। ওই সম্মেলনে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা জানান, "চীনা বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো ইকোনমিক জোনে জমি বরাদ্দ দিতে চেষ্টা করবে বেজা ও বিডা। এমনকি পিপিপি ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ইকোনমিক জোনগুলোও তাদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজে বের করতেই ম্যাচমেকিং সেশনগুলো আয়োজন করা হবে।"

১ জুন রাতে চীনা প্রতিনিধিদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

পরদিন ২ জুন বাংলাদেশ-চীন যৌথ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিশনের বৈঠকে চীনের পক্ষের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও। বাংলাদেশের পক্ষের নেতৃত্ব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী।

এরপর একইদিনে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চীনা ব্যবসায়ীদের ম্যাচমেকিং সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ'র কর্মকর্তারা। এতে চীনের ১৪টি কোম্পানির ৩০ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন।

বিজিএমইএ'র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "চীনা কোম্পানিগুলো ম্যান মেড ফাইবার, টেক্সটাইল গ্রিন ইনোভেশন ও হোম টেক্সটাইল খাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সহযোগিতার সম্ভাবনা খুঁজবে, যা বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রযুক্তি ও দক্ষতা হস্তান্তরে সহায়ক হবে।"

এছাড়া ২ জুন চীনা ব্যবসায়ীদের একটি অংশ গাজীপুরের লিজ ফ্যাশন গার্মেন্টস পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে। ওইদিন রাতেই চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন।

বেজা ও বিডার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর এ সফরে আনুষ্ঠানিক কোনো বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা না থাকলেও, দ্বিপাক্ষিক আমদানি-রপ্তানিতে যেকোনো প্রকার বাধা দূরীকরণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। মার্চ মাসে চীন এই এমওইউর খসড়া বাংলাদেশকে পাঠিয়েছে।

চীনের ব্যাপক আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও, চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি তুলনামূলক কম।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৭১৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা মোট রপ্তানির মাত্র ১.৬১ শতাংশ।

অন্যদিকে, একই অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি হয়েছে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলারের, যা বাংলাদেশের মোট আমদানির এক-তৃতীয়াংশ। এসবের মধ্যে বেশিরভাগই শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি।

চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি বিশেষ চাইনিজ ইকোনমিক জোন চূড়ান্ত করেছে বেজা। পাশাপাশি চাঁদপুর ও ভোলায় আরও দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন দিয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীনা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে, যার পেছনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও সাম্প্রতিক বিনিয়োগ সম্মেলনগুলোতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবো'র বাংলাদেশ সফর এই আগ্রহ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।