বিদায় পঁচিশ, স্বাগত ছাব্বিশ
প্রকৃতির নিয়ম শুরু মানেই শেষের জন্য এগিয়ে যাওয়া, আর শেষ মানেই নতুনের সূচনা। ইংরেজি নতুন বছর তেমনই এক বাস্তবতা, যেখানে বিদায়ের বেদনাকে ছাপিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জেগে ওঠে বিশ্বের সকল দেশের মানুষের জীবনে। মানব জীবনের মতোই বছরের শুরুটা স্বপ্ন আর প্রত্যাশায় মোড়া, অথচ শেষটা প্রায়ই পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব নিয়ে দাঁড় করায় আমাদের আত্মসমীক্ষার মুখোমুখি।
আমরা জানি নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সবসময়ই একটু বেশি। নতুনকে বরণ করে নিতে মানুষের আগ্রহের কমতি যেমন নেই, তেমনই পুরনোকে বিদায় জানাতে আসে নতুন সময়, নতুন সম্ভাবনা, নতুন বছর। নতুনের আবাহন, স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি একটি বছর পর পয়লা জানুয়ারি আমাদের মধ্যে আসে ইংরেজি নববর্ষের আনন্দ উৎসবের বিভিন্ন আয়োজন। 'পুরোনো দিনের ইতি, নতুন দিনের প্রতিশ্রুতি'তে নতুন বছর হরষ জাগায় প্রাণে প্রাণে।
আমাদের স্বপ্নকে জাগিয়ে তোলতে যেমন আসে বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ ঠিক তেমনি খ্রিস্ট নববর্ষ বিশ্বের সকল জাতি গোষ্ঠীর নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে আসে বছর ঘুরে নিউ ইয়ার উদযাপনের মধ্য দিয়ে। বছরের শেষে পুরোনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরন করা হয়, যেখানে আনন্দ, স্মৃতি, নতুন আশা এবং অভিজ্ঞতার মিশ্রণ, যা সময়ের পরিবর্তন এবং নববর্ষের আগমনী বার্তা।
চলে যাচ্ছে আরও একটি ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সাল ২০২৫ খ্রি.। সময়কে থামানো যায় না; চাই বা না চাই, সে এগিয়েই যায় তার নিজস্ব গতিতে। পুরোনোর বিদায়ের মধ্য দিয়েই আসে নতুনের ডাক। আর নতুন বছরের ভেতর জমা থাকে অগণিত পরিকল্পনা, আশা-ভরসা আর ভালো কিছুর প্রত্যাশা। গণমুখী এবং জনকল্যাণমূলক উদ্যোগে এগিয়ে যাবে নতুন বছর এমন প্রত্যাশা সকলের। বাংলাদেশ সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় আগামীর পথে।
সাফল্য ও ব্যর্থতার মিশেলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ দাঁড়িয়ে আছে ইংরেজি নববর্ষ তথা নতুন বছরের দোরগোড়ায়। এমন সন্ধিক্ষণে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে কী পেলাম, কী হারালাম? কী চেয়েও পেলাম না? এই পাওয়া-না পাওয়ার মাঝেই জীবন, সময় ও বাস্তবতার পথচলা। বাস্তবতাকে মেনেই মানুষ ও সমাজ আগামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যায়।
অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়, আবার অনেক স্বপ্ন জন্মের আগেই ঝরে যায়। তবু জীবন থেমে থাকে না। হতাশাকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমেই সামনে এগোতে হয়। 'যা চেয়েছি তা পাইনি' এই আক্ষেপ নয়, বরং নতুন বছরে বলার সাহস হোক যা নাই তা চাই এবং সেটা অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রেখে কাজের উদ্যম।
নতুন বছর ২০২৬ হোক জাগ্রত সামাজিক মূল্যবোধের বছর। গনতান্ত্রিক যাত্রায় দু'হাজার ছাব্বিশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে এই আশায় বিভেদহীন সমাজ, গণতান্ত্রিক চর্চা ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা পাক দেশের মানুষ। বিশ্বজুড়ে সকল মানুষ স্বস্তির জীবন পাক। যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই...। বিশেষ করে নির্যাতিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী ফিরে পাক তাদের মৌলিক অধিকার ও সম্মান- আত্মমর্যাদা।
নতুন বছরে সকলের প্রত্যাশা একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিময় ও উন্নত জীবন, যেখানে থাকবে না কোনো বিভেদ, দুর্নীতি, ভয়, বরং থাকবে শান্তি, সমৃদ্ধি, ন্যায়বিচার এবং ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে অগ্রগতি ও আনন্দ। নতুন বছরে নতুন আলোর খোঁজে মানুষ অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাবে এবং দেশ ও বিশ্ব বিভেদ মুক্ত হবে, এমনটাই এই মূহুর্তে সবার কামনা।
'নিউ ইয়ার দু'হাজার ছাব্বিশে আসুক জয়,
পুরোনো ক্লান্তি মুছুক নতুন স্বপ্ন হোক নির্ভয়।
ভুলগুলো থাকুক শিক্ষা হয়ে, আকাশজুড়ে আশা- ভালোবাসা থাকুক উছল নতুন সুরে।
আগামীর প্রতিজ্ঞা হোক স্বপ্নে ভরা,
নব উদ্যমে জাগুক বিবেক, সাজুক বসুন্ধরা।'
নতুন বছর কেবল উৎসবের নয় এটি হোক আত্মসমালোচনা, ভুল সংশোধন ও নতুন সংকল্পে এগিয়ে যাওয়ার সময়। নব উদ্যমে শুরু হোক আমাদের জীবন। ইংরেজি নতুন বছর ২০২৬ সবার জন্য বয়ে আনুক শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধির সুবাতাস।
সফিউল্লাহ আনসারী
কবি- গণমাধ্যমকর্মী
