ঢাকা শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ২০শে বৈশাখ ১৪৩২


জাদুঘরে জাগ্রত ভাষাশহীদ আবুল বরকত


২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:১৮

আপডেট:
২ মে ২০২৫ ২০:২৮

ছবি: আমাদের দিন

বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ১৯৫২সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১’র এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, সবখানেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা। যার কোনোটি সবার কাছে পরিচিত, আবার এমনও অনেক স্থাপনা আছে যা তেমন পরিচিত নয়। তেমনই একটি স্থাপনা ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা। ভাষাশহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালায় পা রাখতেই ঘিরে ধরে বরকতের অনেক স্মৃতি। মনে হয় আজও জাগ্রত আমাদের এই শ্রেষ্ঠ সন্তান।


১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, আবুল বরকত ছিলেন অন্যতম। তাঁর ডাক নাম আবাই। ১৯২৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুরের বাবলা গ্রামে জন্ম বরকতের। ১৯৪৫ সালে তালিবপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৭ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন তিনি। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে তার পরিবার ঢাকায় চলে আসে। ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ হয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে এবং একই বিভাগে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন।বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) সামনে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র-জনতা। পুলিশ মিছিলে গুলি চালালে হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন আবুল বরকত। তাঁকে ঢামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি করালে রাত আটটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতেই আবুল বরকতের আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাঁকে। এ ভাষা শহীদের মা হাসিনা বেগমই ১৯৬৩ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।

আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর পলাশীর মোড়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে অবস্থিত। হলের পেছনের গেট দিয়ে ঢুকে হাতের বাম দিকে তাকালেই দেখা যাবে পোড়ামাটি রঙের দৃষ্টিনন্দন দোতলা এক ভবন, যার গায়ে বড় করে লেখা ‘ভাষাশহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা’।

জাদুঘরটির নিচতলায় রয়েছে আবুল বরকতের ছোটবেলার খেলনা, শিক্ষাগত যোগ্যতার বিভিন্ন সনদপত্রের অনুলিপি, বাবাকে লেখা চিঠি, পরিবারের সসদস্যদের ছবি,ব্যবহৃত তিনটি কাপ এবং পিরিচ, ভাষা আন্দোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন পেপার কাটিং, ভাষা শহীদদের ছবিসহ নানা ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন। এছাড়াও এখানে রয়েছে ক্যানভাসে আঁকা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে ছাত্রদের মিছিলসহ বিভিন্ন আলোকচিত্র। আবুল বরকত ছাড়াও ভাষা শহীদ রফিকের ম্যাট্রিকুলেশন সার্টিফিকেট, শহীদ শফিউর রহমানের রক্তমাখা শার্ট ও কোর্টের ছবিসহ নানা ঐতিহাসিক জিনিস রয়েছে এখানে।

২০০০ সালে ভাষা শহীদ আবুল বরকত পেয়েছিলেন একুশে পদক (মরণোত্তর), সেটির রেপ্লিকাও সংরক্ষিত রয়েছে এখানে। রয়েছে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের কপিও।

দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি লাইব্রেরি। লাইব্রেরিটিতে ভাষা আন্দোলন নিয়ে সাড়ে চারশো ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত প্রায় চার শতাধিকসহ মোট আট শতাধিক বই সংগৃহীত আছে বলে জানিয়েছেন জাদুঘরটির পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, ভাষা আন্দোলনের ওপর যত বই বের হয়েছে তার একটা গ্রন্থবিবরণী বের করা হবে এখান থেকে। যা থেকে ধারণা পাওয়া যাবে, ভাষা আন্দোলন নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট কী পরিমাণ বই বের হয়েছে।

আমাদের সরাসরি কথা হয় শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালার দায়িত্বপ্রাপ্ত ও জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ ড. ফারুক শাহ্ স্যারের সাথে তিনি আমাদের জানান যে এখানে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের আগমন খুব কম থাকে। সংগ্রহ শালায় আরো কিছু আকর্ষণীয় উপাদান যুক্ত করা গেলে এবং বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করা গেলে শিক্ষার্থীদেরকে সংযুক্ত করা যাবে।