ঢাকা রবিবার, ৪ঠা মে ২০২৫, ২২শে বৈশাখ ১৪৩২


কুয়েট

অচলাবস্থা কাটেনি, ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা


৪ মে ২০২৫ ১৬:১৯

আপডেট:
৪ মে ২০২৫ ১৯:৫৬

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটে ৭৪ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকরা ক্লাসে যাননি। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে কবে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলে ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের আরেকটি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় পুনরায় ৪ মে থেকে সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এবং ভিসিসহ শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারী ব্যক্তিদের সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরবেন না।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সাহিদুল ইসলাম বলেন, ১৮ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা আজ ক্লাসে যাননি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষা নেবেন না।

এ ব্যাপারে কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কুয়েট কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবার সঙ্গে বসছেন। ডিনসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বসেছেন, আজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বসছেন, এ রকম বিভিন্ন ফোরামের সঙ্গে বসছেন। এভাবে একটা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

এ ব্যাপারে কুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, “আমরা এরই মধ্যে ভুল-ত্রুটির জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। শিক্ষকদের সঙ্গে আমরা কোনো বিদ্বেষমূলক আচরণে যেতে চাই না। আবারও শিক্ষকদের কাছে গিয়ে আমরা ক্ষমা চাইব।”

তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলন ছিল কুয়েটের উপাচার্যের বিরুদ্ধে; শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো আন্দোলন করিনি। এরই মধ্যে দুই মাসেরও বেশি সময় ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। আমরা চাই, দ্রুত ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।”

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।

এরপর আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না আসায় ২১ এপ্রিল অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার ১৮ এপ্রিল সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন। তবে দীর্ঘ সময় বুঝিয়েও তিনি অনশন ভাঙাতে পারেননি।

এরপর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পাশাপাশি সব হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে শুরু হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত আসে।

আমরণ অনশন কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তারা।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির তিন সদস্যও কুয়েট ক্যাম্পাসে যায়। রাতে উপাচার্য ও উপ উপাচার্যের অপসারণের বার্তা দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।