ঢাকা রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


পালিয়েছেন জেলেনস্কি, দাবি রাশিয়ার


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:১৭

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০৭:৫২

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে শুরু হওয়া বৃহত্তম আগ্রাসনের তৃতীয় দিনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলার মুখে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ যখন পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে, ঠিক তখনই এই শহরটি ছেড়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভ অঞ্চলে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

শনিবার রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমার স্পিকার ভায়াচেসলাভ ভলোদিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের লভিভে পালিয়ে যাওয়ার দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদসংস্থা স্পুটনিক। তিনি বলেছেন, জেলেনস্কি ইতোমধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী ত্যাগ করেছেন।

নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে স্পিকার ভায়াচেসলাভ ভলোদিন লিখেছেন, জেলেনস্কি দ্রুত কিয়েভ ছেড়েছেন। গতকাল তিনি ইউক্রেনের রাজধানীতে ছিলেন না। দলবল নিয়ে তিনি কিয়েভ ছেড়ে লভিভে পালিয়েছেন। সেখানে তিনি এবং তার সহযোগীরা আগেই থাকার জায়গা ঠিক করে রেখেছিলেন।

ভলোদিন আরও বলেছেন, জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ভিডিও প্রকাশ করেছেন, তা আগেই রেকর্ড করে রাখা ছিল। ইউক্রেনের আইনসভার সদস্যদের কাছে থেকে জেলেনস্কির পালিয়ে যাওয়ার তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছেন রুশ এই স্পিকার।

এদিকে, রাশিয়ার প্রবল হামলার মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তার সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে গুঞ্জন ওঠার পর ফের নতুন একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। নিজের ধারণ করা এই ভিডিওতে তিনি ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে অনেক ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছে। আমি সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দিয়েছি ও নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছি এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমি এখানেই আছি। আমরা অস্ত্র ছাড়ব না এবং দেশ রক্ষা করব।’

ইউক্রেনের রাজধানীর রাস্তায় এখন গুলির লড়াই চলছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর। হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক রাজধানী ছেড়ে প্রতিবেশীে দেশগুলোতে পালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই আটকে পড়েছেন। রাজধানীতে রুশ সৈন্যদের তীব্র হামলার মুখে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

কিন্তু মার্কিন এই ‘সাহায্য’ ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। জেলেনস্কি বলেছেন, ‘লড়াই এখানে; আমার গোলাবারুদ দরকার, আমাকে সরিয়ে নেওয়ার দরকার নেই।’

মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি বলছে, কিয়েভে ব্যাপক সংঘর্ষের কারণে শত শত হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কামানের গোলার আঘাতে কিয়েভের অনেক আবাসিক ভবন, সেতু ও স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া হামলার মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনের সরকারকে উৎখাত করতে পারে, এমন ইঙ্গিতও জোরালো হয়েছে।

ইউক্রেনের হাতে ৩৫০০ রুশ সেনা নিহত

রুশ সৈন্যদের তীব্র আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় রাস্তায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। মস্কোর সর্বাত্মক আক্রমণের মুখে প্রতিরোধের চেষ্ট করছে ইউক্রেনও। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির দাবি, রুশ আক্রমণ শুরুর পর ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি সেনা নিহত হয়েছেন।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় ২০০ রুশ সেনাকে বন্দি করা হয়েছে।

ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী আরও দাবি করেছে, হামলা করতে এসে রাশিয়া এখন পর্যন্ত ১৪টি যুদ্ধবিমান, ৮টি হেলিকপ্টার এবং ১০২টি ট্যাংক হারিয়েছে। বিবিসি অবশ্য দেশটির এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। অন্যদিকে রাশিয়াও এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির কোনো কথা স্বীকার করেনি।

অন্যদিকে, গত তিন দিন আগে শুরু হওয়া রুশ সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ১৯৮ জন বেসামরিক ইউক্রেনীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিন জন শিশুও আছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ১১৫ জন এবং তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা ৩৩ জন।

বিদেশি নাগরিক ও কোম্পানির অর্থ জব্দের ঘোষণা রাশিয়ার

ইউক্রেনে হামলার জেরে বিদেশে রুশ নাগরিক ও কোম্পানির অর্থ জব্দের জবাবে রাশিয়ায় থাকা বিদেশি নাগরিক এবং কোম্পানির অর্থ জব্দের ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। শনিবার রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপ্রপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ এই ঘোষণা দিয়েছেন।

দিমিত্রি মেদভেদেভের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদ সংস্থা আরআইএ বলেছে, রাশিয়ায় থাকা বিদেশি নাগরিক এবং কোম্পানির অর্থ জব্দ করছে মস্কো। বিদেশে রুশ বিভিন্ন নাগরিক এবং কোম্পানির অর্থ জব্দের জবাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য অঞ্চলে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর সম্পদও রাশিয়ার জাতীয়করণ করার সম্ভাবনার কথা বলেছেন দিমিত্রি মেদভেদেভ।

যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে, আশঙ্কা ম্যাক্রোঁর

ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। শনিবার ফ্রান্সের সাংবাদিকদের এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বিশ্বকে প্রস্তুতি নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এই দিন প্যারিসে শুরু হওয়া বার্ষিক কৃষি মেলা উদ্বোধন করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইউরোপে যুদ্ধ ফিরে এসেছে। এই যুদ্ধ বেছে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং একটি দুঃখজনক মানবিক পরিস্থিতিতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

‘ইউক্রেনের জনগণ যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং ইউরোপ এই প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

‘এখন আপনারা যদি আমার কাছে এ ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করেন, সেক্ষেত্রে আমি বলব—এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে, এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং বিশ্বে এই যুদ্ধের পরবর্তী ফলাফলের প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। তাই আমাদের উচিত হবে, এখন থেকেই আসন্ন এই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা।’

এক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রতিরোধে পালাল রুশ সৈন্যরা

পশ্চিম ইউক্রেনের ব্রোডির কাছের লভিভ অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলা প্রতিহত করার দাবি করেছে ইউক্রেনের সৈন্যরা। শনিবার টেলিগ্রাম বার্তায় লভিভের মেয়র এ তথ্য জানান।

লভিভের মেয়র আন্দ্রে সাদোভি বলেছেন, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে ব্রোডির কাছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টার অবতরণ করেছে। এতে প্রায় ৬০ সৈন্য ছিল। তিনি বলেন, ‌‘ইউক্রেনের সৈন্যরা দখলদার বাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছি।’

এদিকে, আগ্রাসন তৃতীয় দিনে গড়ানোর সাথে সাথে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ সৈন্যরা গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন প্রান্তে রুশ সৈন্যরা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি।