ঢাকা শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩২


ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ

ঘর ছাড়ছে সীমান্ত পাড়ের আতঙ্কিত মানুষ


১০ মে ২০২৫ ১৪:১৩

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ২০:৫৫

ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরুর পর থেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাশের এলাকাগুলোতে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ। প্রাণভয়ে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। প্রায় খালি হয়ে গেছে অনেক গ্রাম ও শহর। বিবিসি জানিয়েছে, দুই দেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম-শহরগুলোর অনেক বসতবাড়ি গোলা পড়ে ধ্বংস হয়েছে।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের উরি আর কুপওয়ারা ঘুরে বিবিসির সংবাদদাতা আমীর পীরজাদা জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলের স্থানীয় মানুষ সীমান্তের অপর দিক থেকে গোলাগুলির ঘটনায় অভ্যস্ত। তবে কুপওয়ারা ক্রালপোরা গ্রামের মানুষ কখনো দেখেননি যে তাদের গ্রামে গোলা এসে পড়েছে।

গ্রামটির বাসিন্দা তনভির আহমেদ বলেন, ‘জীবনে এই প্রথম আমাদের গ্রামে গোলা এসে পড়ল।’ শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ তার বাড়িতে একটা গোলা এসে পড়ে।

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার একটা ট্রাক ও মাটি কাটার যন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে।

হামলার সময় পরিবারের সবাই মাত্র ৫০০ মিটার দূরে একটা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন। তাদের গ্রামে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো বাংকার বানানো হয়নি।

উরির বাসিন্দা নিসার হুসেইন বলেন, ‘রাতে আমরা একটা মসজিদের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলাম।

এটা বছর দশেক আগে বানানো হয়েছে। সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখতে পাই আমার বাড়ির আশপাশেই তিনটা গোলা পড়েছে। বাড়ির কিছুটা অংশ ভেঙে গেছে।’
আরো পড়ুন

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার সুরানকোট ঘুরে বিবিসির সংবাদদাতা ডেভিনা গুপ্তা জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে পুঞ্চ জেলার বহু মানুষ এখন ঘরছাড়া। বুধবার মাঝরাতের পরে পাকিস্তানে ভারতীয় হামলার পর থেকে গোলাবর্ষণ বহুগুণ বেড়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সোবিয়া নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘হঠাৎ একটা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে এক মাসের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দৌড়াই আমি।’ তিনি বলেন, ‘একটাও গাড়ি পাওয়া যায়নি। বহুদূর পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়েছে। এত গোলাবর্ষণ হচ্ছিল যে পুরো রাস্তা আমি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে হেঁটেছি।’ সুরফিন আখতারের বাড়ির সামনেই একটা গোলা এসে পড়েছিল। তারপরেই ঘর থেকে পালিয়েছেন তারা।

নিয়ন্ত্রণরেখার ভারতীয় অংশে যেমন সুরফিন আখতাররা সারা রাস্তা কেঁদেছেন, তেমনি পাকিস্তানের দিকে চাকোঠি গ্রামের বেশির ভাগ কম বয়সী নারী ও বাচ্চারা সারা রাত কেঁদেছেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা কিফায়াত হুসেইন বলছিলেন, ‘ওরা তো জীবনে এত বেশি গোলাবর্ষণ দেখেনি। এর আগে এত বেশি গোলাবর্ষণ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, তখন তো বাচ্চারা কেউ জন্মায়নি।’ ছয় তারিখ রাতটা তিনি পরিবারকে নিয়ে একটা সিমেন্ট ঢালাই করা বাথরুমে বসে কাটিয়েছেন।

চাকোঠিসহ পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের বেশির ভাগ গ্রামের বাড়িতে ২০০৫ সালে ভূমিকম্পের পর থেকেই টিনের ছাদ দেওয়া হয়। ওই সব ছাদ গোলাগুলি একেবারেই আটকাতে সক্ষম নয়। কিফায়াত হুসেইন বলেন, ‘গোলাগুলি শুরু হতেই সব বাসন আর অন্যান্য জিনিসপত্র মাটিতে আছড়িয়ে পড়তে শুরু করল আর বাচ্চারা খুব জোরে কাঁদতে শুরু করল।’

পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার ধারে নীলম উপত্যকা থেকে রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদ শহরে পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন মুহাম্মদ শাগির। বাড়ির সামনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার পরেই তিনি পরিবারকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা, বিশেষ করে ছোটগুলো ব্যাপক ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমরা ওদের শুধু বোঝাচ্ছিলাম যে একটা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাব। ভয়াবহ রাত ছিল। পরের দিন সকালেই আমি বাচ্চাদের নিয়ে পাশের শহরে বোনের বাড়িতে চলে যাই।’