ঢাকা বুধবার, ১৮ই জুন ২০২৫, ৪ঠা আষাঢ় ১৪৩২


ট্রাম্পের মন্তব্যে ইসরায়েল এবার একঘরে


২৮ মে ২০২৫ ১৩:২৭

আপডেট:
১৮ জুন ২০২৫ ০০:৪১

ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় আঠারো মাসের যুদ্ধ চলার পর ইসরায়েলের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন বিদেশি নেতারা এবং সাহায্য সংস্থাগুলো। তবে দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্ররা এখনও খুব কমই প্রকাশ্যে বা ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু ক্রমশ পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো মিত্র দেশগুলো ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানোর পরই মূলত এই চাপ দেওয়া শুরু হয়েছে। নিউ জার্সিতে সম্প্রতি ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা চাই এই পরিস্থিতির যত দ্রুত সম্ভব সমাধান হোক।” এমন বক্তব্য দিয়েই তিনি এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠেন।

এই বক্তব্যের সঙ্গে গত জানুয়ারিতে ট্রাম্পের প্রকাশ্য অবস্থানের পার্থক্য রয়েছে। সে সময় তিনি হামাসকে দোষারোপ করতেন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান দেখানোর চেষ্টা করতেন। আর যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স একত্রে ইসরায়েলের গাজায় অভিযান বিস্তারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার পরই ট্রাম্প ওই মন্তব্য করেন।

গত সপ্তাহে ওই তিন দেশ এক যৌথ বিবৃতি দেয়। এতে তারা বলে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হওয়া হামলার জবাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া এক পর্যায় পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হলেও, এখনকার অভিযান “সম্পূর্ণ অতি মাত্রায় চলে গেছে।” তারা সতর্ক করে জানায়, ইসরায়েল তার পথ না বদলালে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।

ট্রাম্পের মন্তব্যের পরেই যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে। পাশাপাশি তারা পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের সঙ্গে জড়িত চরমপন্থী ইসরায়েলিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

গত বছর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর এ ধরনের পদক্ষেপ এই প্রথম। অন্যদিকে ফ্রান্স সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে জুন মাসে একটি সম্মেলনের আয়োজন করছে। সেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি আলোচিত হবে। অথচ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছেন নেতানিয়াহু। তবুও এই দেশগুলো এখনও বাস্তবিক দিক থেকে ইসরায়েলকে সহায়তা করে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক, অর্থনৈতিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্র এখনও ইসরায়েলকে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আর এই সহায়তাই গাজায় তাদের সামরিক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি গত রবিবার ইসরায়েল সফর করেন। তিনি নেতানিয়াহুসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মচারীর মৃত্যুতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন। গত বছর ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইসরায়েলকে সহায়তা করেছিল। ভবিষ্যতেও তারা একই পদক্ষেপ নিতে পারে।

এছাড়া কিছু দেশ যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছিল, তখন এই মিত্র দেশগুলো প্রায়ই সমালোচনামূলক অবস্থান নেয়। তবুও তাদের সাম্প্রতিক বার্তাগুলোর ভাষায় পরিবর্তন এবং ইসরায়েলি স্বার্থের ওপর কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, এই শক্তিশালী মিত্র দেশগুলো নেতানিয়াহুর ওপর ধৈর্য হারাতে শুরু করেছে। তবে ইসরায়েল এখনও নিজের অবস্থানে অনড়। ইউরোপীয় হুমকির জবাবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সাআর বলেন, আরও পদক্ষেপ নেওয়া হলে ইসরায়েল নিজেই ‘একতরফা ব্যবস্থা’ নেবে।

গাজায় ইসরায়েলি সেনারা এখনও অগ্রসর হচ্ছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে অঞ্চলটির প্রায় ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

সোমবার ইসরায়েলি বিমান বাহিনী গাজায় একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে একটি স্কুল-আশ্রয়কেন্দ্রও রয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, সেখানে সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নিয়েছিল। গত সপ্তাহে ইসরায়েল ৮০ দিন ধরে চলা খাদ্য অবরোধ শেষ করে কিছু সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেয়। তবে সাহায্য সংস্থাগুলোর মতে, এই খাদ্য এখনও সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজনে থাকা মানুষের কাছে পৌঁছায়নি।

এদিকে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য বিতরণের নতুন ব্যবস্থা চালু করতে চায়। যার ফলে অনেকে উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে পালাতে বাধ্য হবে বলে সমালোচকেরা মনে করছেন। নেতানিয়াহু এসব সমালোচনার জবাবে বলছেন, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স হামাসকে সাহস দিচ্ছে।

গত সপ্তাহে এক ভাষণে তিনি সরাসরি এসব দেশের নেতাদের বলেন, “আপনারা মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং ইতিহাসের ভুল পাশে দাঁড়িয়েছেন।”

ইসরায়েলের ভেতরে এসব ঘটনাকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রভাবশালী পত্রিকা ইয়েদিয়ত আহারনোতের কূটনৈতিক প্রতিবেদক ইতামার আইচনার লেখেন, “৫৯৩ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল এখন কূটনৈতিকভাবে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে পৌঁছেছে। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু — যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা — একসঙ্গে বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে।”

তিনি আরও লেখেন, “ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এর আগে কখনও এমন বিবৃতি আসেনি। এখন দেশটি যেন একঘরে হয়ে পড়ছে। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো — যুক্তরাষ্ট্র, যে সবসময় ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলেছে, এবার চুপ রয়েছে।”