ঢাকা বুধবার, ১৮ই জুন ২০২৫, ৪ঠা আষাঢ় ১৪৩২


ট্রাম্প প্রশাসনের দায়িত্ব ছাড়ছেন ইলন মাস্ক


২৯ মে ২০২৫ ১৪:১৯

আপডেট:
১৮ জুন ২০২৫ ০০:৪৪

ফাইল ছবি

গত বছর নির্বাচনের আগে দুই ধনকুবেরের মেলবন্ধন ছিল আলোচিত বিষয়; ভোটের পরে টের পাওয়া যাচ্ছিল সেই বাঁধনে আলগা ভাব। এবার বিচ্ছেদের সুরই বেজে উঠল। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে সরে যাচ্ছেন।

বুধবার এই ঘোষণা দিয়ে সোশাল মিডিয়া এক্স-এ তিনি লিখেছেন, “সরকারি বিশেষ কর্মকর্তা হিসাবে আমার নির্ধারিত সময় শেষ হচ্ছে। অপচয়মূলক ব্যয় কমাতে সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”

ট্রাম্প এই বছরের শুরুতে হোয়াইট হাউসে ফিরেই সরকারি ব্যয় কমানোর ঘোষণা দিয়ে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিইওজি)’ বিভাগ খুলে তার প্রধান করেন মাস্ককে।

টেসলা, স্পেসএক্স, এক্স এর মালিক মাস্ক গত বছর নির্বাচনের আগেই রিপাবলিকান ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৩০ কোটি ডলার লগ্নি করেন। ডিইওজি বিভাগের দায়িত্ব পেয়েই বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ নেন মাস্ক। তার পরামর্শে ইউএসএআইডির মতো আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রকল্প। এক পর্যায়ে মাস্কের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাবশালী কয়েকজনের সঙ্গে বেধে যায় মাস্কের। আবার সরকারে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে নিজের ব্যবসার দিকে আগের মতো চোখ রাখতে পারছিলেন না মাস্ক। ফলে বছরের প্রথম তিন মাসে টেসলার আয় কমে যাওয়ায় প্রশাসনে সময় দেওয়া কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গত মাসেই কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এখন পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার কথাই জানালেন।

মাস্কের এই প্রস্থান আবার কাকতালীয়ভাবে ‘বিশেষ সরকারি কর্মচারী’র ১৩০ দিনের সময়সীমার সঙ্গে মিলে গেছে। নিজে বিদায় নিলেও মাস্ক আশা প্রকাশ করেছেন, ডিওজিই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও শক্তিশালী হবে। গত জানুয়ারিতে এই দপ্তরে যোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বাজেট থেকে কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে ডিওজিইর ওয়েবসাইটের তথ্য দেখাচ্ছে, সাশ্রয় করা গেছে মাত্র ১৭৫ বিলিয়ন ডলার।

হোয়াইট হাউসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রয়টার্স এবং এপিকে মাস্কের প্রস্থানের খবরটি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, ব্যয় কমানোর প্রক্রিয়াটি অব্যাহত থাকবে।

ট্রাম্প ভোটের আগে-পরে মাস্ককে উচ্চ প্রশংসায় ভাসালেও সম্প্রতি দুজনের সস্পর্কের আগে উষ্ণতা না থাকার বিষয়টি আঁচ করা যাচ্ছিল। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের আনা একটি বিল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মাস্ক। তিনি বলেছিলেন, “আমি বিপুল ব্যয়ের বিল দেখে হতাশ হয়েছি। সত্যি বলতে এটি বাজেট ঘাটতি কমাচ্ছে না, বরং বাড়াচ্ছে এবং ডিওজিইর কাজটি দুর্বল করছে।”

বিলটিতে ট্রাম্পের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের জন্য ব্যয় বরাদ্দ করা হয়, যেমন মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ এবং অভিবাসন ও কাস্টমস দপ্তরের জন্য তহবিল বৃদ্ধি। বিলটি প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়েছে। এখন তা সেনেটে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। বিলটি নিয়ে মাস্কের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বিলটি নিয়ে আলোচনা করব। এর কিছু দিক নিয়ে আমিও খুশি নই, তবে কিছু দিক নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত।”

ট্রাম্প সরাসরি সমালোচনা এড়িয়ে গেলেও তার প্রশাসনের কারও কারও সঙ্গে মাস্কের বনিবনা হচ্ছিল না, যার মধ্যে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। পলিটিকো জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পর মাস্কের প্রস্থান এপ্রিল থেকেই আলোচনায় ছিল। ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসি নিউজের এপ্রিলের একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মাস্কের কাজের প্রতি সমর্থন মাত্র ৩৫ শতাংশের।

তারপরই প্রশাসন থেকে নিজের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যে মনোযোগ ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন মাস্ক। তিনি লিখেছিলেন- “আবারও সপ্তাহের সাত দিনই কাজ এবং সম্মেলন/সার্ভার/কারখানার কক্ষে ঘুমানোর দিকে ফিরে যাচ্ছি।”