গাজা দখল করে জনগণকে অভুক্ত রাখার নির্দেশ দিলেন ইসরায়েলি মন্ত্রী

ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীরা গাজায় চলমান যুদ্ধ কৌশল নিয়ে সেনাপ্রধান ইয়াল জামিরের সঙ্গে উত্তপ্ত বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁরা মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রকাশ্যে গাজার জনগণকে অনাহারে রাখার পক্ষে মত দেন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে রোববার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল—১২ এর বরাতে এই খবর জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি।
স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংঘাত হয়। সেখানে আলোচনায় ছিল অপারেশন গিদিওন’স চ্যারিয়টস–২। এটি মূলত গাজায় ব্যাপক হামলার পাশাপাশি গণ উচ্ছেদ ঘটানোর পরিকল্পনা।
অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন। তিনি সেনাপ্রধানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা আপনাদের দ্রুত অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছি। আমার মতে, তাদের অবরুদ্ধ করতে পারেন। যারা সরে যাবে না, তাদের সরতে দেবেন না। পানি নয়, বিদ্যুৎ নয়—তাদের অনাহারে মরতে দিন অথবা আত্মসমর্পণ করতে দিন। আমরা এটাই চাই। আর আপনারা সেটা করতে সক্ষম।’
তবে সেনাপ্রধান জামির এর বিরোধিতা করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সামরিকভাবে বাস্তবসম্মত নয়। যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতির ওপরই তা নির্ভর করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্য জায়গায়ও অভিযান চালাচ্ছি, খান ইউনিস ও রাফাহে। তাই সামরিক বাস্তবতায় সময় ও সুপরিকল্পনা জরুরি।’
এ সময় কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির আলোচনায় হস্তক্ষেপ করেন। তিনি জামিরকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘আপনি কি সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেলের ভয়ে আছেন?’ পরে স্মতরিচ জামিরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সরকারের নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘এটা কী রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশনা নয়? আপনি হামাসকে পরাজিত করতে চান না।’
জবাবে জামির বলেন, ‘আপনি কিছুই বোঝেন না। ব্রিগেড বা ব্যাটালিয়ন কী, তা জানেন না। এতে সময় লাগে।’ চ্যানেল—১২ জানায়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মন্ত্রিসভায় উপস্থিত জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা—ইসরায়েল কাতজ ও রন ডারমার এ সময় নীরব ছিলেন। তাঁরা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তে থাকা চাপের বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং দ্রুত সমাধান চাওয়া হচ্ছে বলে জানান।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, মন্ত্রিসভা আবার বৈঠকে বসবে আগামীকাল মঙ্গলবার। সেখানে গাজায় নতুন অভিযান ও সম্ভাব্য বন্দী বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলবে।
গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ৭০০–এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ সামরিক অভিযানে পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে দুর্ভিক্ষ চলছে।