প্রযুক্তি সেবার আওতায় আসবে প্রতিটি গ্রাম

ঢাকা: নির্বাচনি ইশতেহারের ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দিতে সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হবে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পঞ্চম প্রজন্মের সুপার ফাস্ট ইন্টারনেট সেবা ফাইভজি চালুর লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে সরকার। একই সময়ে স্থাপন করা হবে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল, নিশ্চিত করা হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ যেন আধুনিক প্রযুক্তি সেবার উপকারভোগী হয়, তা নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করে যাবে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে নতুন মন্ত্রিসভার ঘোষণার পর নতুন করে আগের মন্ত্রিসভার দায়িত্ব ফিরে পেয়ে সারাবাংলাকে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
গত মন্ত্রিসভার শেষের দিকে টেকনোক্র্যাট কোটায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে যুক্ত হন মোস্তাফা জব্বার। মূলত নিজ প্রতিষ্ঠানের তৈরি বিজয় কিবোর্ড দিয়েই তিনি আলোচিত। আইসিটি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি তিনি, সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিরও (বিসিএস)। অবশ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি তিনি। তবে নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভার ঘোষণা এলে দেখা যায়, ফের টেকনোক্র্যাট হিসেবে একই মন্ত্রণালয়ের জন্যই ডাক পেয়েছেন মোস্তাফা জব্বার। ফলে গত মেয়াদের শেষ ভাগে দায়িত্ব পেলেও এবারে সরকারের শুরু থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।
নতুন মন্ত্রিসভায় ডাক পাওয়ার পরপরই পথচলার লক্ষ্য জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, আগামীতে ফাইভজি চালুর লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। এরই মধ্যে আমরা ফোরজি সেবা চালু করেছি। সামনের দিনগুলোতে সারাদেশে ফোরজি সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্য রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ করা হবে।
টেলিযোগাযোগ খাতের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিতের কথা জানিয়ে জব্বার বলেন, আমাদের দু’টি সাবমেরিন ক্যাবল আছে। এখন তৃতীয় সাবমেরিক ক্যাবল স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাব আমরা।
সাইবার হামলা মোকাবিলার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল আইন করার পর অনেকেই আমার সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু অনলাইনের নিরাপত্তা তো আগে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা নতুন আইন করার পরে এই নির্বাচনের সময়ে কিন্তু কেউ তেমনভাবে গুজব বা অপপ্রচার চালাতে পারেনি। যারা চেষ্টা করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে। আগে পুলিশের হাতে ছিল বন্দুক-লাঠি, এখন তাদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস। এখন সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।
এক প্রশ্নের উত্তরে নতুন সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, মহাকাশে এখন স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। ভবিষ্যতে এই স্যাটেলাইটের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সরকারি বিনিয়োগের টাকা উঠিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎপক্ষেপণের লক্ষ্যও রয়েছে আমাদের।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা এতদিন ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি রচনা করেছি। এখন সেই ভবন গড়ে উঠবে।
এদিকে, দশম সংসদের মতো একাদশ সংসদেও নাটোর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন জুনাইদ আহমেদ পলক। শুধু তাই নয়, গত মন্ত্রিসভার মতো নতুন মন্ত্রিসভাতেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি।
দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভায় ডাক পাওয়ার পর পলক সারাবাংলাকে বলেন, আমার মূল লক্ষ্যই থাকবে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প-২০২১ পূরণ করার জন্য চারটি স্তম্ভকে সুসহংত করে গড়ে তোলা। প্রথমত, মানবসম্পদ উন্নয়ন; দ্বিতীয়ত, গ্রাম পর্যন্ত সব ধরনের সংযোগ নিয়ে যাওয়া; তৃতীয়ত, ই-গভর্ন্যান্সকে আরও শক্তিশালী করা; এবং চতুর্থত, আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রিকে আরও সুসংহত করে গড়ে তোলা।
এবারের নির্বাচনি ইশতেহারের টার্গেট তুলে ধরে পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবারে বলেছেন, প্রতিটি গ্রামকে শহরে পরিণত করতে চান এবং তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগিয়ে একটি দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চান। আমি মনে করি, এসব লক্ষ্য পূরণে আইসিটি-ই হতে পারে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আমি সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাব।
পাঁচ বছরের লক্ষ্য জানিয়ে পলক আরও বলেন, চারটি লক্ষ্য নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই— দেশের প্রত্যেকটি গ্রামকে আধুনিক প্রযুক্তির সেবার আওতায় আনা, দেশের প্রতিটি তরুণকে প্রযুক্তি জ্ঞান দিয়ে দক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তর, প্রতিটি সেবাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, এবং সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করা।
সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে নতুন সরকারের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সাইবার সিকিউরিটি রেসপন্স টিম (সার্ট) করেছি। একে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় যে চারটি প্রতিষ্ঠান আমরা তৈরি করব তার মধ্যে প্রথম হবে ডিজিটাল সিকিউরিটি কাউন্সিল। একে একে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব ও সাইবার সিকিউরিটি রেসপন্স টিম গড়ে তোলা হবে। এই চারটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা গেলে আমরা সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় অনেক দূর এগিয়ে যাব। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যে শঙ্কা, ভবিষ্যতে আমরা তাও দূর করতে পারব।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আগামী পাঁচটি বছরের প্রতিটি ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ড আমি আমার শ্রম ও মেধা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশগুলো পূরণে সচেষ্ট থাকব।