৪০ বছরেও কাটেনি নাম বিভ্রান্তি

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ অঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গার দুলালপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার চার দশক পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে বিভ্রান্তির সমস্যা রয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ, বিভাগ ও পরিবহনসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি নাম একেক সময় একেকভাবে লেখা হচ্ছে। আর এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত ১৯৭৯ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টে লেখা আছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হইবে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’। নামের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের ৩নং ধারার ১নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে। অ্যাক্টে আরও বলা হয়েছে, ‘এই আইনের বিধান অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইবে, যাহা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামে অভিহিত হইবে।’ অথচ অ্যাক্টের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে, পরিবহন বাসে, ক্যালেন্ডারে, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের নিজ নিজ বিভাগীয় ব্যানারে, নিজ নিজ বিভাগের নোটিসে বিকৃতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখায় ব্যবহৃত নামগুলোর মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-বাংলাদেশ, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত নাম নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতেও নামের বিকৃত রূপ ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া শহরে শিক্ষার্থীদের বহনকারী দ্বিতল বাসের গায়ে লেখা হয়েছে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ।’ অন্যদিকে নিজস্ব বাসগুলোতে শুধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ও ভাড়ায় চালিত গাড়িগুলোতে ‘ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া’ নামটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি প্রকাশিত হয়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ক্যালেন্ডার ও ডায়েরিতে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও এ দপ্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বার্তাগুলো দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো ই-মেইলেও সাবজেক্ট হিসেবে ‘কুষ্টিয়া আইইউ নিউজ’ শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যায়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিকৃতির অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে এটিকে চিহ্নিত করেছেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সভা-সেমিনার কিংবা জাতীয় দিবসগুলোতে নিজ নিজ বিভাগগুলোর ব্যানারগুলোতে নাম বিকৃতির বিষয়টি দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কুষ্টিয়া না ঝিনাইদহ হবে এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। দুই অঞ্চলের প্রভাবশালী মহল বিশ্ববিদ্যালয়টির পাশে নিজেদের জেলার নাম লেখায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দেয় বলে জানা গেছে। ফলে কোনো প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় নামটির সুরাহা করতে পারেনি।
তবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি ইবিতে চতুর্থ সমাবর্তন হয়। এ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে থাকা কুষ্টিয়া- ঝিনাইদহের বদলে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি ব্যবহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই সময়ে এ নামটি ব্যবহারের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুই অঞ্চলের মানুষের রোষের মধ্যে পড়তে হয় বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০১৯ সালের ডায়েরি এবং ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিডাঙ্গা, দুলালপুর, কুষ্টিয়া ৭০০৩ লেখা হয়েছে। এত নামের ফলে প্রতিনিয়ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। সম্প্রতি বিষয়টি সমাধানে ফেইসবুকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কয়েকবার স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেই বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার হোক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। আর এ নামটি সব দপ্তরে প্রচলন করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. নওয়াব আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্নে বিশ^বিদ্যালয়টি কুষ্টিয়া ও যশোর জেলার অধীনে ছিল। পরে ঝিনাইদহ জেলা হয়ে যায়। তখনই বিপত্তি ঘটে। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল বিষয়গুলো কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ দুই জেলার পোস্ট অফিসে যেত। সে সমস্যার সমধানে বিশ^বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে পোস্টাল কোড হয় কুষ্টিয়া। সেই হিসেবে এখন ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় কুষ্টিয়া ৭০০৩ লেখা হয়।’
অন্যদিকে উপাচার্য হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, ‘মূল নাম হচ্ছে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, বাংলাদেশ। কিন্তু অফিশিয়াল হিসেবে কুষ্টিয়া ৭০০৩ লেখা হয়। তবে যে নামই লিখি না কেন, তেমন কোনো অসুবিধার কারণ নেই।’