কে হচ্ছেন গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী

কে হচ্ছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী– এমন আলোচনায় সরগরম গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ সংস্থাটির সব দপ্তর। সরকারে গ্রেড-১-এ পদে থাকা বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বর।
ফলে সরকারের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার পেতে দৌড়ে রয়েছেন চার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। তারা হলেন গণপূর্ত ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম, ড. মইনুল ইসলাম, মোসলেহ উদ্দিন আহম্মেদ ও উৎপল কুমার দে।
উৎপল কুমার দে (রিজার্ভ) ও বাকি তিনজন বর্তমানে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে বিভিন্ন জোনে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে থাকা মো. সাহাদাত হোসেনও এ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন বলে আশাবাদী।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বিধান অনুযায়ী প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার কথা রয়েছে ১৫তম ব্যাচের প্রথম স্থানে
থাকা মো. আশরাফুল আলমের। বগুড়ার বাসিন্দা আশরাফুল আলম সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি ঝিনাইদহ জেলায় উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, বগুড়া, রাজশাহী, শেরেবাংলা নগরে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে শেরেবাংলা নগর (ডিভিশন-১), গাইবান্ধা, জাতীয় গৃহায়ন কতৃ©পক্ষ (ঢাকা-ডিভিশন-১), মেডিকেল ডিভিশনে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেল ও বর্তমানে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে রংপুর জোনের দায়িত্বে রয়েছেন। চাকরিতে থাকাকালে নিজ দপ্তর বা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে কোনো ধরনের জটিলতা না থাকলে আশরাফুল আলমই পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার কথা রয়েছে।
নিজ ব্যাচে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মেট্রোপলিটন জোন) ড. মইনুল ইসলাম। বরিশালের বাসিন্দা মইনুল ইসলামের প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার বিষয়টিও বেশ জোরেশোরে আলোচনায় এসেছে।
১৫তম ব্যাচের প্রায় সবাই সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর যোগদান করলেও তিনি ১৯৯৬ সালের ১২ আগস্ট যোগদান করেন। এরপর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে মানিকগঞ্জ, শেরেবাংলা নগরে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী হয়ে খুলনা ও চুয়াডাঙ্গায় এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকা সার্কেল-৪ ও সংস্থাপনে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে চাকরি জীবনে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি তার নিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। ৯ বছর ৮ মাস ২২ দিন চাকরিতে না থাকায় এ প্রকৌশলী গত কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে চ‚ড়ান্ত অব্যাহতিও পেয়েছিলেন।
পরে তিনি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় আপিল আবেদনের মাধ্যমে চাকরি ফিরে পান। যদিও ড. মইনুল ইসলাম কাছে দাবি করেন, তিনি ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে যান। তবে সেটা কতদিনের জন্য এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি।
এছাড়া বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে শামীমের কোম্পানির নামে পাওয়া র্যাব সদর দপ্তর নির্মাণের দরপত্র আহ্বানেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী এ দরপত্রটি ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল-৩ থেকে আহ্বানের কথা ছিল। কিন্তু এটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মইনুল ইসলামের দপ্তর থেকে করা হয়েছে এবং তিনি ছিলেন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রধান।
বিসিএস (গণপূর্ত) ক্যাডারের ১৫ ব্যাচের তৃতীয় স্থানে রয়েছেন মোসলেহ উদ্দিন আহম্মেদ। নোয়াখালীর বাসিন্দা মোসলেহ উদ্দিন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব শুরু করে পরবর্তী সময়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ফেনী ও শেরেবাংলা নগরে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতির পাওয়ার পর শেরেবাংলা নগর ও দীর্ঘ সময় প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে সমন্বয় বিভাগে ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চট্টগ্রাম জোনে দায়িত্ব পালন করেন এ প্রকৌশলী। বর্তমানে মোসলেহ উদ্দিন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা-জোন) হিসেবে কর্মরত। বিএনপি-জামায়াত আমলে ২০০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ৭ অক্টোবর চার বছরেরও অধিক সময় তিনি সংসদ ভবন অর্থাৎ শেরেবাংলা ডিভিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া জোট সরকারের প্রধান প্রকৌশলীর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এমন একজনেরও স্টাফ অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এসব বিবেচনায় মোসলেহ উদ্দিন কিছুটা পিছিয়ে আছেন।
এছাড়া একই ব্যাচের চতুর্থ স্থানে থাকা ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সামছুদ্দোহা, পঞ্চম স্থানে থাকা নজিবুর রহমান (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত), ষষ্ঠ স্থানে থাকা আবুল খায়ের, সপ্তম স্থানে থাকা মো. শামীম আক্তার, অষ্টম স্থানে থাকা শফিকুল ইসলাম নবম স্থানে থাকা প্রদীপ কুমার বসু ও দশম স্থানে থাকা উৎপল কুমার দে’র নাম আলোচনায় রয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ১৫তম ব্যাচের ১০ জন প্রকৌশলীর চাকরিকালীন নানা বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে বলে জানা যায়।
সরকারের গ্রেড-১-এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যাচের মেধাতালিকা অনুযায়ী গুরুত্ব পায়। এছাড়া এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও দক্ষতা বিবেচনা করতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় রয়েছে। তাই সব দিক বিবেচনা করে এ পদে যোগ্য কেউ আসবে এমন প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এদিকে বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে থাকা মো. সাহাদাত হোসেনও এ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর সংস্থাটির কাজের ড়্গেত্রে গতি মন্থরসহ নতুন প্রকল্প তেমন না থাকলেও প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব নেওয়ার পর বদলি বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত হননি বলে দাবি তার। ফলে পুনরায় এ পদে ফিরে আসার ব্যাপারে আশাবাদী এ প্রকৌশলী। বিসিএস ৮২তম ব্যাচের মো. সাহাদাত হোসেন মনে করেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর পদটি সরকারের গ্রেড-১ হওয়ায় সেখানে ১৫তম ব্যাচ থেকে নিয়োগ দেওয়া হলে অন্য ক্যাডারের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আবার ইতিমধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারেও বিসিএস ৮২ ব্যাচের দুজন দায়িত্ব পালন করছেন। তাই সরকার হয়তো প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে তাকেই এ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেবে।