ঢাকা সোমবার, ১২ই মে ২০২৫, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩২


বাতিল হতে পারে পাপুলের এমপি পদ


২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৫৫

আপডেট:
১২ মে ২০২৫ ১৮:৫০

কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের রায়ের কপি নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে জাতীয় সংসদ কর্র্তৃপক্ষ। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই তার এমপি পদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনপ্রণেতারা বলছেন, সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী পাপুলের এমপি পদ থাকার কোনো সুযোগ নেই।

পাপুলের এমপি পদ বাতিলের বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য না দিলেও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রায়ের কপি সংসদ সচিবালয়ে এসে পৌঁছেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

সংসদ সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, কুয়েতে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মামলা ও তার গ্রেপ্তারের পর থেকেই সচিবালয় বিষয়টি নজরে রেখেছে। যেহেতু কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে এবং সেখানে অনেক বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী কাজ করছেন, তাই আগ বাড়িয়ে কোনো কিছু করা থেকে বাংলাদেশ বিরত থেকেছে। বাংলাদেশ অপেক্ষা করছিল কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার।

সংসদ সচিবালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের আদালতে যে রায় হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর তথ্যপ্রমাণও তারা (কুয়েত কোর্ট) পেয়েছে। সেই অনুযায়ী তার এমপি পদ থাকার কোনো সুযোগ নেই।

সাবেক আইনমন্ত্রী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘এখন আর পাপুলের এমপি পদ বহাল রাখার কোনো সুযোগ সংবিধানে এবং কার্যপ্রণালি বিধিতে আছে বলে আমার মনে হয় না।’

সংসদকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তিনি শুধু অপরাধই করেননি, একজন এমপি হিসেবে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ করেছেন। সংসদের কাছে রেকর্ড পৌঁছালে ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই এমপির আসন শূন্য ঘোষণা করার কথা।’

সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না।’ ওই অনুচ্ছেদেই বলা আছে, ‘কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলেও কেউ আর এমপি হিসেবে থাকতে পারবেন না।’

অর্থ ও মানব পাচার এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গত বছরের জুনে কুয়েতে গ্রেপ্তার হন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি পাপুল। গত ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। বাংলাদেশের কোনো আইনপ্রণেতার এভাবে বিদেশে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।

সংসদ সচিবালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান বলেন, মামলার রায়ের কপি সংসদে এসেছে। আমরা কাজ শুরু করেছি। স্পিকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই স্পিকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পূর্বাচল ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রায়ের কপি পেয়ে ইতিমধ্যে সেটি জাতীয় সংসদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ৬১ পৃষ্ঠার রায়টি আরবি ও ইংরেজি ভাষায় লেখা। আইন অনুযায়ী, রায়ের কপি স্পিকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছি। বাকি অ্যাকশন (ব্যবস্থা) তারা নেবে।

ড. মোমেন বলেন, ‘আমাদের দেশের মতো কুয়েতেও ভারডিক্ট (রায়) আসতে অনেক দেরি হয়, লিখতে অনেক সময় লাগে। আমরা এটা নিয়ে পেরেশানিতে ছিলাম। আপনাদের মিডিয়া প্রায়ই গিয়ে এটা নিয়ে জানতে চান, স্পিকারও প্রায়ই এটা নিয়ে ফোন করেন। রায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা যথাস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

পাপুলের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাপুলের বিরুদ্ধে এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা পার্লামেন্ট ঠিক করবে। তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

এমপি পাপুল বাংলাদেশ সরকারের কাছে কোনো আইনি সহায়তা চেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো আইনি সহায়তা চান নাই। ওখানে তিনি (পাপুল) ব্যবসায়ী হিসেবে থাকেন এবং আমাদের কোনো ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে তিনি যাননি। তিনি আমাদের মিশনের কোনো সাহায্য চাননি। কারণ সেখানে ওনার নিজেরই ভালো অবস্থান রয়েছে। ওনার ভিআইপি পাসপোর্ট আছে।’

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি পাপুলকে গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেওয়ার কাজ করলেও এ কাজে সীমাবদ্ধ থাকেনি প্রতিষ্ঠানটি। পাপুল কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই মানব পাচার শুরু করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি দেশটিতে বসবাসের অনুমতিও নিয়ে নেন বলে জানা গেছে।

গত ২৮ জানুয়ারি এমপি পাপুলকে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের একটি আদালত। কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান এ রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাকে ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম আল-কাবাস ও আল-রাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাপুলের কাজে সহযোগিতা করায় কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ দেশটির দুই কর্মকর্তাকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন পাপুল। তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত আসনের এমপি।