ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


রিক্রুটিং লাইসেন্স জালিয়াতির ভয়ংকর অভিযোগ প্রতারক রানার বিরুদ্ধে


৭ অক্টোবর ২০২১ ০০:৫৫

আপডেট:
৭ অক্টোবর ২০২১ ০৪:২১

প্রতারক রানা

নাম মাসুদ রানা, কখনো পরিচয় দেন আবদুল মান্নান (রানা) , আবার কখনো পরিচয় দেন মোহাম্মদ নুরুল হক (রানা) আবার কখনো বা পরিচয় দেন আশিকুর রহমান (রানা)। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বৈধ লাইসেন্সধারীদের নামের শেষে ব্র্যাকেটের মধ্যে এইভাবে (রানা) লিখেই একাধিক অবৈধ লাইসেন্সের মালিক বনে গেছেন তিনি। অথচ বৈধ লাইসেন্স তো দূরের কথা একটি অফিস পর্যন্ত নেই তার। নেই কোন ট্রেড লাইসেন্স। প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে বিভিন্ন নামে বানিয়েছেন ভিজিটিং কার্ডও। এইভাবে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের কাছে হাতিয়ে নিচ্ছেন থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা। 

প্রতারক রানার ভিজিটিং কার্ড

এই প্রতারক রানাই আবার ফটোশপ জালিয়াতির মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন ওভারসিজ (যার আরএল নাম্বার-১৬৭৮) এবং সামিহা ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক বা কোম্পানির চেয়ারম্যান সেজে বসে আছেন, নির্বিঘ্নে সিংগাপুরসহ বিভিন্ন এজেন্সীর সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ ব্যবসা, এদিকে চ্যাম্পিয়ন ওভারশিজের প্রতিষ্ঠানের মালিক আবদুল মান্নান এবং সামিহা ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ নুরুল হক ( যার আরএল নাম্বার-১২৩২) এই প্রতারণার বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনটাই জানিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে প্রতারক রানার এমন ভয়ংকর তথ্য ।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, চ্যাম্পিয়ন ওভারসিজের মালিক আবদুল মান্নান ও সামিহা ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক মোহাম্মদ নুরুল হকের পোর্টফোলিও জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো ( বিএমএটি) থেকে ডাউনলোড করে তাদের ছবি সরিয়ে প্রতারক রানার ছবি বসিয়ে এই ভুয়া পোর্টফোলিও পাঠিয়ে সিংগাপুরসহ বিভিন্ন এজেন্সির থেকে ভাগিয়ে নিচ্ছেন কাজ। হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
একেই পদ্ধতি ব্যবহার করে, ফটোশপ জালিয়াতির মাধ্যমে করেছেনও ট্রেড লাইসেন্স, এদিকে, বিদেশ ইচ্ছুকগামীদের কাছে থেকে প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময় প্রতারক রানার বিরুদ্ধে বাংলাদেশী কয়েকটি এজেন্সির কাছে অভিযোগ করেছেন সিংগাপুর রিক্রুটিং এজেন্সি। এতে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির সম্পর্কে বিরুপ ধারণা তৈরি হচ্ছে তাদের বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট বিশেজ্ঞরা।

ডানে আসল লাইসেন্স,বামে নকল লাইসেন্স

এই বিষয়ে চ্যাম্পিয়ন ওভারসিজের আসল মালিক আবদুল মান্নান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গত এক বছর থেকেই জানতে পারি, রানা নামে একজন আমার লাইসেন্স জালিয়াতের মাধ্যমে সিংগাপুর বিভিন্ন এজেন্সিতে ব্যবসা করে যাচ্ছেন, আমি শোনার সাথে সাথেই পল্টন থানায় একটি মামলা করি এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো ( বিএমএটি)তে অভিযোগ দেই,গোয়েনদা ও র্যার অফিসে জানাই। তারপরেও প্রতারক রানা আমার বৈধ রিক্রুটিং লাইসেন্স চ্যাম্পিয়ন ওভারসিজ (যার আরএল নাম্বার-১৬৭৮) ফটোশপ জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তিনি প্রশাসনকে এই বিষয়ে দ্রুত অ্যাকশন নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।ডানে আসল লাইসেন্স,বামে নকল লাইসেন্স

সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মাদ নুরুল হক বলেন, গতকাল আমি জানতে পেরেছি আমার লাইসেন্স সামিয়া ইন্টারন্যাশনাল ( যার আরএল নাম্বার-১২৩২) রানা নামে একজন প্রতারক সিংগাপুর ব্যবসা করছেন এবং বহু মানুষের কাছ থেক লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আমি খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে রানার কাছে প্রতারণার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তী স্বীকার করেন এবং সাংবাদিককে বিভিন্ন প্রলোভন ও ঘুষ সাধেন এবং পরবর্তী নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন, সাংবাদিককে প্রলোভন দেখিয়ে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে কখনো র্যাব সেজে আবার কখনো আবার ডিএমপি কমিশনারের ছোট ভাই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন নাম্বার থেকে হুমকি ধামকি দেন। পরবর্তী শাহবাগ থানায় সাংবাদিক প্রতারক রানার বিরুদ্ধে জিডি ( সাধারণ ডায়েরী) করেন।

 

ডানে আসল লাইসেন্স,বামে নকল লাইসেন্স

 

এবিষয়ে শাহবাগ থানার (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, বিভিন্ন হুমকি ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার জন্য রানা নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাংবাদিক সাহেব সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন। শাহবাগ থানার ওসি আরও বলেন, যারা কোন ধরনের যাচাই বাছাই ছাড়া এ ধরনের প্রতারকদের সাথে নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করছে তারাও সমান অপরাধী এবং এদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।


এবিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো ( বিএমএটি) মহাপরিচালক বলেন, চ্যাম্পিয়ন ওভারসিজের আসল মালিক আবদুল মান্নান (যার আরএল নাম্বার-১৬৭৮) সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের আসল মালিক মোহাম্মাদ নুরুল হক যার আরএল নাম্বার-১৬৭৮)। আমার কাছে অভিযোগ আছে রানা নামে এক ব্যক্তি প্রতারণা ও জালিয়াতের মাধ্যমে মানুষের কাছে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এবং অন্যের লাইসেন্স ফটোশপের মাধ্যমে জালিয়াতি করে প্রতারক রানা তার ছবি বসিয়ে সিংগাপুরের বিভিন্ন এজেন্সিতে পাঠিয়েছে। তার বিরুদ্ধে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো ( বিএমএটি) মামলা করবে বলে জানান।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরোর মহাপরিচালক সতর্ক বার্তা দিয়ে আরো বলেন, আপনারা রানার মতো এ ধরনের প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হবেন না এবং আমরা খুবই দ্রুত এধরনের প্রতারকদের ব্যাপারে বাংলাদেশ এবং সিংগাপুরসহ অন্যান্য দেশের ইমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিকে অবহিত করবো তারা যেনো এ ধরনের প্রতারকদের সাথে কোন প্রকার অবৈধ ব্যবসায় লিপ্ত না হয়।