ঢাকা রবিবার, ৪ঠা মে ২০২৫, ২২শে বৈশাখ ১৪৩২


নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা


৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২২

আপডেট:
৪ মে ২০২৫ ০৮:১৯

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কী ভাবছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় ছায়া জাতিসংঘের সভাপতি মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, ‘আমার মনে হয় ইশতেহারে কোন দল কী বলল তা নয়; কারা তরুণদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে, তরুণেরা তাদের পক্ষেই থাকবে। তাই সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো মোকাবিলায় দলগুলোর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেছেন, এসবের মধ্যে রয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, উদ্যোক্তা হওয়ার পরিবেশ বিনির্মাণ, চাকরির পরীক্ষার ফি কমানো, দলীয় সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করা ইত্যাদি। তরুণদের সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলো দেখলেও এসব বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘দেশে বেকারের সংখ্যা বেশি, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকট হচ্ছে। দলগুলো তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে কী কী পদক্ষেপ নেবে, তার দিকে তাকিয়ে আছে তরুণসমাজ।

ঢাবির টেলিভিশন, ফিল্ম এবং ফটোগ্রাফি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রুবায়েত খন্দকার বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা ভোটের ফলকে প্রভাবিত করবে; বিশেষ করে যারা প্রথম বারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছে। আর এই মুহূর্তে তরুণসমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যার জায়গা হলো কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা। তাই যে দল বা জোট তরুণদের এই ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে, তারাই নির্বাচনে ইতিবাচক ফল পাবে।’

বাংলাদেশের তরুণসমাজ সামগ্রিক অর্থে ঐক্যবদ্ধ না হলেও তাদের মধ্যে প্রচন্ড দেশপ্রেম, গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষা আর দেশকে সত্যিকার সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার মানষিকতা তরুণদের রয়েছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম। তাই তারুণ্যের ভোটই আসন্ন নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিশ্চিত করতে পারে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, সংখ্যা হিসেবে আড়াই কোটি তরুণ জনগণ বিরাট জনগোষ্ঠী। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের তরুণসমাজ ঐক্যবদ্ধ নয়। তাদের ভিতরে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করে। তারা কিছুটা হতাশও। এরপরও রাজনৈতিকদলগুলো তরুণদের আকাক্সক্ষার সাথে একাত্ম হয়ে যদি কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করে তাহলে তারা ভালো ফল পেতে পারে।

ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ইসিয়াম বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যারর তিন ভাগের এক ভাগ তরুণ। বাংলাদেশের সব বড় অর্জনের পেছনে তরুণদের ভূমিকাই প্রধান। আমি মনে করি, আসন্ন নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা অনিবার্য নির্ধারণী ভূমিকা পালন করবে। তবে সংশয়ের কথা হলো, এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব দলের অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যাশিত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা যায়নি। এটা তৈরি হলেই আসন্ন নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের ভূমিকা কার্যকরী হবে।

’চলতি বছরে ঘটে যাওয়া কোটা আন্দোলন, সড়ক আন্দোলন, বয়সবৃদ্ধির আন্দোলনসহ তরুণদের এই অরাজনৈতিক আন্দোলনগুলো নির্বাচনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল মাহদী।

তিনি বলেন, ‘তরুণরা নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা পালন করবে। এক্ষেত্রে কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো বিষয়গুলো তাদের প্রভাবিত করবে। কেননা, সরকার এ আন্দোলনগুলোকে যেভাবে মোকাবিলা করেছে, তাতে তরুণসমাজের মাঝে খানিকটা আস্থাহীনতার তৈরি হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দীপ বিশ্বাস বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তরুণদের নেতৃত্ব চাই। আমি চাই, যে দলই ক্ষমতাই আসুক বিরোধীদলের প্রতি সহিংসপরায়ণ না হয়ে সবাই মিলেমিশে কাজ করবে।

জাবির বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাসুমের চাওয়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। তিনি বলেন, সব দল সমানভাবে প্রচারণার সুযোগ পেলে তরুণরা উৎসবমুখর আমেজ নিয়ে ভোট দিতে পারবে। এই আমেজ তৈরি করা গেলে তরুণরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারবে। নির্বাচনের মাধ্যমে তরুণরা উঠে এলে ভালো হবে। কারণ তরুণরাই পারবে নতুন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।’

জাবির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ আল আমিন তরুণদের ক্ষমতায়ন চান। তরুণ উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করার মনোভাব যাদের থাকবে তরুণরা তাদেরই ভোট দেবে বলে মনে করেন তিনি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবে আড়াই কোটির বেশি তরুণ। তাই যে দল তরুণদের ভোট বেশি পাবে তারাই জিততে পারবে।’জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুবা তন্বী বলেন, ‘নারীবান্ধব একটি সরকার চাই। আমরা ভোট দেয়ার সময় চিন্তা করবো নারীর ক্ষমতায়ন এবং বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য বেশি ভূমিকা রাখবে কোন দেন। যারা তারুণ্যকে প্রাধান্য দেবে, তাদেরই ভোট দেবো।’ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী গোলাম ফারুখ বলেন, ‘এখন তরুণরা অনেক বেশি সচেতন। এবছর নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে তাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আড়াই কোটি তরুণ ভোটার।’মাহমুদুল হাসান তারিফ উদ্দিন নামের এক তরুণ রাজনীতিবিদ বলেন, ‘দেশে তরুণ ভোটার প্রায় আড়াই কোটি। তাই যে রাজনৈতিকদল তরুণদের চাহিদাকে প্রাধান্য দেবে নির্বাচনে জয়ী হওয়া তাদের জন্য বেশি সহজ হয়ে যাবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিনি ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমরা মনে করি তরুণদের ভাবনা রাজনৈতিক দলগুলোর নিবার্চনী ইশতেহারে থাকা উচিত। তবে অতীতের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে আমরা যেমন দেশের ছাত্রসমাজ, কৃষক, শ্রমিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবিড় মেলবন্ধন দেখতে পেতাম তা এখন অনেকটাই দেখি না। এ কারণে আমরা দেশের সকল ছাত্রসমাজ এবং অন্যদের দাবি-দাওয়া সংবলিত আমাদের ভাবনাগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তুলে ধরতে চাই। আমরা মনে করি এটা পুরো দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। আমরা আস্থা রাখি দেশের রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের ভাবনাকে গুরুত্ব দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বি আহমেদ বলেন, প্রতিহিংসা জিইয়ে রেখে বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা আমাদের জাতীয় সংকট তৈরিকে ত্বরান্বিত করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের সংস্কৃতি যদি এ দেশে প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা দলতান্ত্রিক; জাতীয়বাদতান্ত্রিক হতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ না করতে পারে তাহলে তারা যেন প্রেস ব্রিফিং করে তাদের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে দেয়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে ক্ষমতাসীনদের আরো উদার হওয়া প্রয়োজন। মূলত, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের সংস্কৃতির একটা স্থায়ী কাঠামো নিশ্চিত না করা গেলে এই হানাহানির ডামাডোলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের কাছে ইতিবাচক ভাবমূর্তি হারাবো