মন্ত্রিপরিষদ সচিব
প্রত্যাশা কম থাকলে প্রাপ্তির হিসাবে অমিল থাকে না: শফিউল আলম
দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা পেয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, ক্যাডার সার্ভিসের চাকরি জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। সব কর্মস্থলেই সবার সহযোগিতা পেয়েছি। প্রত্যাশা কম থাকলে প্রাপ্তির হিসাবে অমিল থাকে না। সেবার মনোবৃত্তি থাকলে হতাশা স্পর্শ করে না। আর দায়িত্ব পালনে সততা সাফল্য এনে দেয়।
১৯৮২ বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম দৈনিক জাগরণকে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
তিনি ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। চলতি বছরের ২ নভেম্বর তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। মোহাম্মদ শফিউল আলম ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন। নভেম্বরেই তার নতুন এ দায়িত্বে যোগদান করার কথা রয়েছে।
কর্মময় জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি। পড়ন্ত বিকেল এখন। সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়েই প্রতিটি মানুষের জীবন। তবে নীতি-নৈতিকতা থাকলে কর্মময় জীবনে সাফল্য আসবেই।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্বের প্রায় চার বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ২ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে আমার মেয়াদ শেষ হবে। এর পর নতুন কর্মস্থল বিশ্ব ব্যাংকে যোগদান। নতুন এই দায়িত্বও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে সবার সহযোগিতা পাবো বলে বিশ্বাস করি।
বর্ণাঢ্য জীবন : মোহাম্মদ শফিউল আলম ১৯৫৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের রুমখা পালং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম ছৈয়দ হোসাইন ও মাতা আলমাছ খাতুন। তিনি পালং মডেল হাই স্কুল থেকে ১৯৭৫ সালে এসএসসি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ঢাকা থেকে ১৯৭৭ সালে এইচএসসি, চট্টগ্রাম ওমর গণি এমইএস কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে বিএ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে ইংরেজি বিষয়ে এমএ, চট্টগ্রাম বঙ্গবন্ধু ‘ল’ টেম্পল থেকে ১৯৯০ সালে এলএলবি এবং বৃটেনের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে উন্নয়ন প্রশাসন (ডেভেলপমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশন) বিষয়ে প্রথম বিভাগে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
মোহাম্মদ শফিউল আলম ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত ১ম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৩ সালে ২৭ অক্টোবর সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। সিভিল অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমি (কোটা) থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৮৪ সালে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে সুনামগঞ্জ সদরে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে ঢাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বদলি করা হয়। তিনি সেখানে চার মাস কর্মরত থাকার পর পদোন্নতি পেয়ে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ বিসিএস প্রশাসন একাডেমীতে উপ-পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। বিসিএস প্রশাসন একাডেমি থেকে ১৯৯২ সালে বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য যুক্তরাজ্য গমন করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে মোহাম্মদ শফিউল আলম ১৯৯৪ সালে ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার থানা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সাত মাস পরেই তাকে ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৯৭ সালে তাকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০০ সালে তাকে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয় এবং ২০০১ সালে উপ-সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান এবং মাগুরা জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি হন। ২০০৩ সালে তাকে মাগুরা থেকে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে ২০০৪ সালের ১৯ জুলাই তাকে সাভারের বিপিএটিসিতে বদলি করা হয়। ২০০৬ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেলে তাকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৭ সালে রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৮ সালে আবার বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন সংস্থার (বিএফআইডিসি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৮ সালে তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ২০০৯ সালের ৪ মার্চ রাষ্ট্রপতির ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তিনি সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে রাষ্ট্রপতির সচিব এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন।