অপ্রকাশিত ভালোবাসার নাম বাবা
ছোটবেলায় বাবাকে বুঝে উঠতে পারিনি। মনে হতো, কেন তিনি সবকিছুতে বারণ করেন, কেন এত পরামর্শ “এভাবে চল”, “এটা করিস না”, “ওইটা কর”— এইসব কথায় বিরক্তি আসত। এখন বুঝি, সেসব কথাই ছিল আমার জীবনের গাইডলাইন। বাবার প্রসঙ্গে বলতেই হয়— শৈশবে তাঁর শাসনকে মনে হতো কঠিন, প্রাচীরসদৃশ। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুঝেছি, সেই প্রাচীরের গায়ে ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসার আঁচড়, ছিল স্নেহের দেওয়ালচিত্র। বাবা ছিলেন আমার জীবনের সবচেয়ে নিঃশব্দ অভিভাবক— যাঁর ভালোবাসা শব্দে প্রকাশিত নয়, কিন্তু প্রতিটি কাজে অনুরণিত। “বাবা” শুধু একটি শব্দ নয়, এর ভিতর লুকিয়ে আছে পুরো একটা জীবন। ছোট্ট হাত ধরে হাঁটতে শেখানো মানুষটা আজও নিঃশব্দে পথ দেখান, কখনো শাসনের মুখোশে, কখনো ভালোবাসার নিঃশব্দ ভাষায়। আমরা বড় হই, ভুল করি, ভেঙে পড়ি আর তিনি চুপচাপ পাশে থাকেন। না বলা অনেক কথায়, না কাঁদা চোখের জলেই বুঝিয়ে দেন, “আমি আছি, ভয় পাস না!” বাবা মানেই আশ্রয়, বাবা মানেই পাহাড়সম ভরসা। তাঁর কাঁধে চড়ে দেখা প্রথম আকাশটা আজও চোখে ভাসে। তাঁর নিঃশব্দ ত্যাগেই দাঁড়িয়ে আছি আজ এই জায়গায়। বাবার কাঁধটা কী অন্য সবার চেয়ে চওড়া? তানা হলে কী করে এত দায়িত্ব বয়ে বেড়ান? বাবার পা কি অন্য সবার চেয়ে দ্রুত চলে? না হলে সংসারের সব ঝড় সামলে এতো দূর কীভাবে এগিয়ে যান তিনি? বাবার ছায়া শেষ বিকেলের বটগাছের ছায়ার থেকেও বড় যেখানে শীতল আশ্রয় আর নির্ভরতার প্রশান্তি মেলে। বিশ্ব বাবা দিবস আজ। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল ‘বাবা’ নামক মহাপুরুষরা। এরকম হাজারও কথা বলা যাবে বাবাকে নিয়ে, তবুও শেষ হবে না সন্তানের প্রতি, সংসারের প্রতি তাঁর অবদানের কাহিনি। বাবা শাশ্বত, চিরন্তন। আর বাবার তুলনা বাবা নিজেই। আমরা সন্তানেরা সবসময় মুখ ফুটে বলতে পারি না “ভালোবাসি বাবা।” তবু প্রতিটি আচরণে, প্রতিটি শূন্যতা পূরণে, প্রতিটি না বলা অনুভবে তুমি আমাদের পুরো পৃথিবী। আজ আমি শুধু বলতে চাই— “বাবা, তুমি মানুষ হিসেবেই অসাধারণ। তোমার মতো হতে না পারি, কিন্তু তোমার মতো হওয়ার চেষ্টা করতে চাই।” আর একটি কথা যা মুখ ফুটে কখনো বলা হয়নি ভালোবাসি বাবা, অনেক অনেক ভালোবাসি। আল্লাহ যেন পৃথিবীর প্রতিটি বাবাকে পূর্ণ হায়াত দান করেন, যেন তাঁরা তাঁদের সন্তানদের সাফল্য দেখে যেতে পারেন গর্বভরে। একজন সন্তান হিসেবে আমার একটাই স্বপ্ন একদিন যেন তোমার মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটাতে পারি, যেন তুমি গর্ব করে বলতে পারো “এই আমার ছেলে।”
মুজাহিদ ইসলাম জীবন
শিক্ষার্থী,
সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সদস্য, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার কলাম অ্যান্ড কনটেন্ট রাইটার্স
