নানাকে নিয়ে স্থৃতিচারণা ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রাব্বানী
নানাকে দেখেই বঙ্গবন্ধু হাসিমুখে আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলেন:গোলাম রাব্বানী

গোলাম রাব্বানী,
“জাতির জনকের জন্য হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা ও আমার রাজনীতির হাতেখড়ি”আমার আশেপাশের কিছু তথাকথিত সুশীল, অরাজনৈতিক, ভিন্ন মতাদর্শীরা যখন অজ্ঞতাবশত বা স্রেফ হুজুগে ছাত্রলীগ নিয়ে বিরুপ ধারণা পোষণকারী আমাকে ‘আমি ছাত্রলীগ কেন করি’ টাইপ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, আমি এই জাতীয় প্রশ্নে কোনরূপ ত্যানা না প্যাঁচিয়ে, আমার আদর্শিক অবস্থানের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্কের দোকান খুলে না বসে, স্রেফ “আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসি, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন, ছাত্রলীগ করতে আমার আর কোন যুক্তি বা কারণের প্রয়োজন নেই” বলে এক কথায় উপক্রমণিকা টেনে দেই!
আর বঙ্গবন্ধুকে কেন ভালবাসি এই প্রসঙ্গে আমার বলার মত একান্ত নিজস্ব কিছু কথা আছে! আমার মস্তিষ্কের হার্ডডিস্কে অতি যত্নে রাখা কিছু কথা ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছে বহুদিনের, তাই কীবোর্ড চাপা শুরু করলাম…
আমার অন্তর্যামীর শপথ! আমার যৌবনের ভালবাসা,আবেগ-উচ্ছ্বাস আর পরম নির্ভরতার ঠিকানা,প্রাণের প্রতিষ্ঠান,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ”এর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসেই!
আমরা নতুন প্রজন্মের যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে লালন করে পিতার অসমাপ্ত কাজ, সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখি, আমাদের সৌভাগ্য হয়নি সহস্রাব্দের শ্রেষ্ঠ বাঙালীকে নিজ চোখে দেখার! তাই বঙ্গবন্ধুকে জানার মাধ্যম হিসেবে আমরা পেয়েছি কিছু ইতিহাসের বই, সমকালীন সংবাদপত্র, কিছু দুর্লভ ভিডিও চিত্র, আর স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির কিছু প্রবীণ মুজিবসেনাকে। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে আরও নিবিড়ভাবে জানার আকুতি খানিকটা নিবৃত করতে জননেত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল “বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী”, আর “কারাগারের রোজনামচা” আমরা আশীর্বাদস্বরূপ হাতে পেয়েছি!
আর অল্পকিছু মানুষের সুযোগ হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে যারা একদম কাছ থেকে দেখেছেন, তার স্নেহের পরশ পেয়েছেন এমন কারও মুখে পিতার অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর বিচক্ষণতা আর মাহাত্ম্যের গল্প শোনার!
গর্ব করে বলি, আমি সেই স্বল্পসংখ্যক সৌভাগ্যবানদের একজন !
আর যে মহান ব্যক্তিটির সৌজন্যে আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু লেখার দুঃসাহস করছি, তিনি আমার পরম শ্রদ্ধেয় মাতামহ মাদারীপুর জেলার অন্তর্গত রাজৈর উপজেলা আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি (১৯৬৪-৭৪), চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মরহুমঃ আলহাজ্ব শামসুদ্দিন আহম্মেদ। একজন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা হয়েও সৎ, নির্লোভ, নির্ভীক, ত্যাগী, ব্যক্তিত্ববান এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর সুনজরে এসেছিলেন, এবং নেতার প্রতি গভীর আনুগত্যের প্রমাণ দিয়ে একজন স্নেহধন্য কর্মী হিসেবে জাতির পিতার ভালবাসায় সিক্ত হওয়ার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছিলেন!
আমাদের বাড়ি থেকে নানাবাড়ি মাত্র মাইল পাঁচেকের দূরত্ব। ছোটবেলার অনেকটা সময় আমার ওখানেই কেটেছে। যখন থেকে কিছুটা বুঝতে শিখেছি, নানা প্রায়দিনই সন্ধ্যায় আমাকে কোলে-কাঁধে নিয়ে বাড়ির উঠোনে হাঁটে বেড়াতেন, মজার সব ছড়া বলার ফাঁকে বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনাতেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন দিনগুলোর গল্প করতেন। নানার সব গল্পই খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতাম, অনেক ছড়া এখন আর পুরোটা মনে করতে পারি না, কিন্তু বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধের শিহরণ জাগানিয়া গল্পগুলি স্মৃতির পাতায় চির অমলিন!
নানার মুখ থেকেই শুনেছি, বঙ্গবন্ধু কিভাবে তার আশ্চর্য জাদুকরী ক্ষমতায় মুহূর্তেই সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন, নেতা-কর্মীদের একদম ঘরের মানুষের মত অধিকার নিয়ে “তুই” বলে সম্বোধন করতেন, একবার শুনেই কিভাবে শত-সহস্র নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষের নাম মনে রাখতে পারতেন, কারও সাথে প্রথম পরিচয়ের পর যতদিন পরই দেখা হোক, তিনি একদম নির্ভুল ভাবে তার নাম ধরে ডাকতেন, দ্বিতীয়বারের জন্য কাউকে নাম বলতে হতো না!
নানা ছাত্র হিসেবে খুব মেধাবী ছিলেন, ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম শ্রেণী। জমিদার বাবার একমাত্র ছেলে, শখ করে ঢাকা গেলেন কাস্টমস এর চাকুরী নিয়ে, বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলেন মিষ্টি নিয়ে দোয়া চাইতে। বঙ্গবন্ধু মিষ্টি খেলেন, দোয়াও করলেন, যাবার সময় কেবল আফসোসের স্বরে বললেন, “শামসু, তোর মতো স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে যদি ঢাকায় এসে চাকরি করে, তাহলে মাদারীপুরে আমার রাজনীতি কে করবে!
ব্যস, তৎক্ষণাৎ নানা বঙ্গবন্ধুকে সালাম করে বললেন, “শেখ সাব আমি চাকরি করবো না, আপনার আদর্শে রাজনীতি করতে চাই।” বঙ্গবন্ধু নানাকে জড়িয়ে ধরে প্রাণভরে দোয়া করে হাসিমুখে বিদায় দিলেন।
১৯৬৮, আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু ভারতের আগরতলায় কারাবন্দী। নানা ব্যক্তিগতভাবে বর্ডার পেরিয়ে জীবনের ঝুঁকে নিয়ে তাঁর প্রিয় নেতাকে দেখতে তিনবার আগরতলায় গিয়েছিলেন,আর কারামুক্তির পর বঙ্গবন্ধু যখন টুঙ্গীপাড়ায় এলেন, হেলিকপ্টার থেকে নেমে দুইদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো সব সিনিয়র নেতাদের সাথে করমর্দন করতে করতে এগুচ্ছেন। সদ্য চল্লিশ পেরোনো নানা লাইনের মাঝামাঝি,
সেদিনের পর থেকে বঙ্গবন্ধুকে আজীবন ভালবেসে যেতে, সত্যিকার মুজিবসেনা হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকের গহীনে ধারণ করে পথ চলার অঙ্গীকার করতে আমার আর কোন প্রেরণা, আর কোন কারণের প্রয়োজন হয় নি!আমার সাফ কথা, যতদিন সুযোগ পাবো, পাওয়া না পাওয়ার হিসেব না মিলিয়ে, সকল ব্যক্তিস্বার্থকে তুচ্ছজ্ঞান করে, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ” এর একজন কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধু তনয়া, জননেত্রী শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ রাখতে সকল আন্দোলন-লড়াই-সংগ্রামে রাজপথ থাকবো! আর যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে “বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ” এর জন্য আমার স্বীয় অবস্থান থেকে কাজ করে যাব! কারণ একটাই, ওটা বঙ্গবন্ধুর দল!
যতদিন রবে পদ্মা-যমুনা-গৌরী-মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান!