ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে জুলাই ২০২৫, ১৬ই শ্রাবণ ১৪৩২


তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনপ্রক্রিয়ায় জামায়াতের তিন প্রস্তাব


প্রকাশিত:
১৭ জুলাই ২০২৫ ১২:০৪

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ।

প্রথমটি হচ্ছে - প্রধানমন্ত্রী , বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব ।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে - স্পিকারের তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রী , বিরোধীদলীয় নেতাসহ ১০ সদস্যের সমন্বয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি গঠন । প্রথম দুই প্রস্তাব গৃহীত না হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করার কথা বলছে জামায়াত। তবে ১/১১ - এর মতো পরিস্থিতি এড়াতে রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে চায় না দলটি।

গত সোমবার জাতীয় সংস্কার নিয়ে সংলাপে প্রথম প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী , বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতি নিয়ে বাছাই কমিটি। » প্রথম দুটি গৃহীত না হলে ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহালের প্রস্তাব। » রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান চায় না দলটি।

ঐকমত্য কমিশনের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তাব তিনটি জমা দিয়েছে জামায়াত । ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন বিষয়ে একমত হয়েছে । কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের নিয়োগপদ্ধতি নিয়ে জট বেঁধেছে সংলাপে । কমিশনের পক্ষ থেকে শুরুতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল ( এনসিসি ) গঠন করে তার মাধ্যমে নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল । কিন্তু দলগুলোর আপত্তির মুখে এনসিসির প্রস্তাব থেকে পিছু হটে কমিশন । এমন অবস্থায় ১০ জুলাই বিকল্প দুটি প্রস্তাব দিয়েছিল কমিশন । তবে তাতেও একমত হয়নি দলগুলো । কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দিতে প্রস্তাব করা হয়েছিল ।

গত রোববার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাব দেয় জামায়াত । পরের দিন সোমবার দেয় রূপরেখা । এর আগে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে রূপরেখা দিয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি ( এনসিপি ) । আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এ প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে ।

জামায়াতের প্রস্তাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ১২০ দিনের কথা বলা হয়েছে । এই সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে । কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়বে । জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫-৩০ দিন আগে এবং মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে, ভঙ্গ হওয়ার সর্বোচ্চ ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে । সংসদের মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে : প্রধান বিচারপতি , প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সমন্বয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে একটি বাছাই কমিটি হবে । এর সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি । এ কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে সভা করবে ।

প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য কমিটির কাছে সরকারি দল / জোট পাঁচজন , প্রধান বিরোধী দল / জোট পাঁচজন এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য বিরোধী দল দুজন করে নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারবে । কমিটি নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে । বিকল্প প্রস্তাবে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫-৩০ দিন আগে জাতীয় সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় সংসদীয় কমিটি হওয়ার কথা বলা হয়েছে ।

এতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী / সংসদ নেতা / সরকারি দলের সংসদীয় দলনেতা , বিরোধীদলীয় নেতা , সংসদের স্পিকার , ডেপুটি স্পিকার ( বিরোধীদলীয় সদস্য ) , সংসদ উপনেতা , সংসদের প্রধান হুইপ , বিরোধীদলীয় উপনেতা , বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ এবং সংসদের অন্যান্য বিরোধী দলের দুজন প্রতিনিধি । এ কমিটি নিজেদের মধ্যে আলাপ করে

একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাছাই করবে । এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য সংসদের সরকারি দল / জোট পাঁচজন , সংসদের প্রধান বিরোধী দল / জোট পাঁচজন এবং সংসদের অন্যান্য বিরোধী দল তিনজন — অর্থাৎ মোট ১৩ জন নির্দলীয় ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে ।

কমিটি ওই ১৩ জনের মধ্যে একজনের নাম প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করবে । প্রথম দুটি পদ্ধতিতে একমত হওয়া না গেলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করা তবে রাষ্ট্রপতিকে প্ৰধান উপদেষ্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার ব্যবস্থাটি বাদ দেওয়া হবে ।

জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়েছে , কোনো কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে । সে ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাবিত তিনটি পদ্ধতির যেটি গ্রহণ করা হবে , তার আলোকে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া করা হবে। উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়েছে , প্ৰথম দুটি প্রস্তাবের কমিটি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে ১০-১৫ ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন । তাঁদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টা নিয়োগ দেবেন ।