হিংস্র হয়ে উঠেছে রাস্তার কুকুর, সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণে জনমনে আতঙ্ক

বাগেরহাটের ফকিরহাটে হিংস্র হয়ে উঠেছে রাস্তায় থাকা মালিকবিহীন পথ কুকুর। এদের সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণে মানুষ, গরু, মহিষসহ বিভিন্ন গবাদী পশু আহত হচ্ছে। ছাগল, ভেড়া, খরগোস, হাঁস-মুরগীর মতো ছোট প্রাণী টেনে হিঁচড়ে খেয়ে ফেলছে। এসব দলবদ্ধ কুকুর এখন ফকিরহাটে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম।
ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ দিনে কুকুর ও বিড়ালের আক্রমণে আহত হয়ে ১০২ জন ব্যক্তি জলাতঙ্কের (র্যাবিস ভ্যাকসিন) টিকা গ্রহণ করেছেন। এই হাসপাতাল থেকে গড়ে প্রতিদিন ৭ জন আহত ব্যক্তি র্যাবিস ভ্যাকসিন নিতে আসেন। গত দেড় বছরে এখানে ২ হাজার ৫৯ জন আহত ব্যক্তি ৬ হাজার ১৭৭ ডোজ র্যাবিস টিকা গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. কামাল হোসেন।
তবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, উপজেলায় কুকুর ও বিড়ালের আক্রমণে আহত ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ধনী ব্যক্তিরা টিকা কিনে নেন। এছাড়া, আক্রান্তদের একটি বড় অংশ টিকা না নিয়ে গ্রাম্য ফকিরদের কাছে টোটকা চিকিৎসা ও ঝাড়ফুঁক করাচ্ছেন। মানুষের পাশাপাশি প্রতিদিন বহু গবাদী পশুও কুকুরের কামড়ে আহত হচ্ছে। অনেকেই আক্রান্ত পশুদের টিকা দিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে যাচ্ছেন।
সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও, উপজেলায় আনুমানিক ৮ থেকে ১০ হাজার কুকুর থাকার ধারণা স্থানীয়দের। উপজেলার কাটাখালী মোড়, মূলঘর, বাহিরদিয়া, আট্টাকী, হাউজবিল্ডিং, ফকিরহাট বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গড়ে ৫ থেকে ১৫টি পর্যন্ত কুকুর দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়। ব্যাগে খাবার জাতীয় কিছু দেখলে এসব কুকুর তেড়ে আসে। এছাড়া, স্কুলগামী শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা অহরহ কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, ফলে তাদের চলাফেরায় বাড়তি সতর্কতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উপজেলার পাগলা শ্যামনগর, ছোট হুচলা, টাউন নওয়াপাড়া গ্রামে সম্প্রতি দলবদ্ধ বেওয়ারিশ কুকুর দ্বারা একাধিক ছাগল ও হাঁস-মুরগি মেরে খেয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। কুকুরের কামড়ে আহত অনেক গবাদী পশু চিকিৎসা পেয়েছেন বলে জানান গ্রাম্য পশু চিকিৎসক খান আরিফ।
জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসা সামিহা (৮)-এর মা রেবেকা খাতুন জানান, স্কুলে যাওয়ার পথে কুকুর আক্রমণ করলে পথচারীরা এসে তাকে রক্ষা করেন। তবে, কুকুরের আছড়ে তার পায়ে রক্তপাত হয়। ডাক্তারের পরামর্শে তিনি টিকা নিতে এসেছেন। তার মতো অনেক শিশু, নারী ও বৃদ্ধ এসব হিংস্র কুকুরের আক্রমণে আহত হচ্ছেন।
এসব দলবদ্ধ হিংস্র কুকুরের বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন উপজেলার সচেতন মহল।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান জানান, প্রাচীনকাল থেকে মানুষের পাশে সহাবস্থান করে কুকুর সাধারণত মানুষের ক্ষতি করে না। কিন্তু হঠাৎ তাদের বন্য কুকুরের মতো হিংস্র আচরণ করার পিছনে কিছু সুনিদ্দিষ্ট কারণ থাকতে পারে। কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি, উচ্ছিষ্ট খাদ্যের অভাব, আশ্রয়স্থানের অভাব, নিরাপত্তাহীনতা, শিয়ালের কামড়ে রেবিস ভাইরাসের সংক্রমণসহ নানা কারণে রাস্তায় থাকা মালিকবিহীন কুকুর হিংস্র হয়ে উঠছে। বর্তমানে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী রেবিস টিকার চাহিদা বেড়েছে।
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, ‘শহরে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে কুকুর নিয়ন্ত্রণে কোন সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেই। তবে, উপজেলাবাসীর নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব।’ এছাড়া, তিনি রাস্তাঘাটে শিশু ও বৃদ্ধদের চলাচলের সময় সচেতনতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন।