মর্গে লাশের চোখ খাচ্ছে ইঁদুর, নির্বিকার কর্তৃপক্ষ

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থাকা মরদেহ থেকে দুটি চোখ গায়েব হওয়াকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিচার দাবি করেছেন মৃতের স্বজনরা। তবে হাসপাতালের কর্মচারীদের দাবি, ওই দুটি চোখ ইঁদুর খেয়ে ফেলেছে।
মরদেহের চোখ হারিয়ে যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম মাসুম মিয়া। তিনি রংপুর নগরীর বুড়িরহাট বাহারদুর সিংহ জিপেরপার গ্রামের নাসিম উদ্দিনের ছেলে। মাসুম মিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার (২৭ মে) শ্যালক সাইদুরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার জেরে গুরুতর আহত হন মাসুম। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহত মাসুমের মেয়ে মারুফা বেগম বাদী হয়ে সাইদুরসহ তিন জনকে আসামি করে রংপুর মেট্রোপলিটনের পরশুরাম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মঙ্গলবার দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখে। বুধবার রাতে ময়নাতদন্ত করার সময় দেখা যায়, নিহতের দুই চোখ গায়েব। শুরু হয় হইচই। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
এ বিষয়ে নিহত মাসুম মিয়ার মেয়ে মারুফা বেগম অভিযোগ করেন, হাসপাতালের লাশ রাখার ঘরটি অরক্ষিত। দেখভাল করার কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নেই। দুইজন ডোম সেখানে লাশ রাখে। সেখানকার ফ্রিজিং ব্যবস্থা বেশির ভাগ সময় অকেজো থাকে। তার বাবার দুই চোখ কীভাবে গায়েব হয়ে গেছে সেটা তিনি জানতে চান। তিনি দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
তবে সেখানে কর্তব্যরত এক ডোম নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই লাশ ঘরে বড় বড় গর্ত করে ইঁদুর অবস্থান করছে। এক একটা ইঁদুর বিরাট দেহের অধিকারী। এর আগেও কয়েকটি লাশের চোখ খেয়ে ফেলেছে। এ ছাড়া বেশি দিন থাকলে মুখসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খেয়ে ফেলে। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নিলে তাদের করার কিছু নাই।
এ বিষয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মানিক ইসলাম বলেন, লাশ ঘরে ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে লাশের সুরতহাল করা এসআই হানিফ বলেন, লাশের সুরতহাল করার সময় দুটি চোখ তিনি দেখতে পেয়েছেন। দুটি চোখ গায়েব হওয়ার ঘটনায় তিনি নিজেও বিস্ময় প্রকাশ করেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাইরে আছেন বলে জানান। এ বিষয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আ. ম. আখতারুজ্জামানকে একাধিকবার কল করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে রংপুর মেট্রোপলিটন পরশুরাম থানার ওসি মাইদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে সকালে লাশ দেখতে গিয়েছিলাম। লাশের চোখ ছিল না। কী কারণে চোখ ছিল না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।