ভোলার সব নৌপথে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পৌর শহরের অনেক এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার পাঁচটি নৌপথে লঞ্চ ও দুটি পথে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
এ ছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় বেড়ে যাওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বিচ্ছিন্ন চর ও বাঁধের বাইরের হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তীব্র বাতাসে তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইস গেইট এলাকায় সদ্য নির্মিত রিং বাঁধ উপচে মেঘনার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
ভোলা নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তির’ কারণে সমুদ্রবন্দর এলাকায় ৩ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাতিয়া থেকে ঢাকা, ভোলা থেকে লক্ষ্মীপুর, ভোলা থেকে আলেকজান্ডার, ভোলা-তজুমদ্দিন-মনপুরা ও চরফ্যাশন বেতুয়া থেকে মনপুরা নৌপথে সব লঞ্চ চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. কাওসার আহমেদ খান বলেন, বুধবার রাত থেকে ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরী ঘাট ও ভোলার ভেদুরিয়া থেকে বরিশালের লাহার হাট ঘাটে কোনও ফেরি ছেড়ে যায়নি।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ দুটি নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট রয়েছে বলে জানান গ্রাহকরা।
এ বিষয়ে ওজোপাডিকো ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ সাংবাদিকদের বলেন, ঝড়ের কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ও তারে গাছ পড়ে যাওয়া সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১৪টি মাটির কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩ হাজার ৮৬০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন চরগুলো থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সাত উপজেলায় আটটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু রয়েছে এবং গঠন করা হয়েছে ৯৮টি মেডিকেল দল। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ মজুদ রয়েছে।
এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।