ঢাকা শনিবার, ২৮শে জুন ২০২৫, ১৫ই আষাঢ় ১৪৩২


শেরপুরে খাদ্য গুদামের সিন্ডিকেটের কবলে ৪০০ কৃষক


২৮ জুন ২০২৫ ১২:১০

আপডেট:
২৮ জুন ২০২৫ ১৯:২১

কৃষক বানিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। ওই ব্যাংকের প্রতি হিসাবে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা আসে, কীসের টাকা আসে হিসাবধারী জানে না।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে এনিয়ে শেরপুর অগ্রণী ব্যাংকে বানানো কৃষক ও গুদাম সিন্ডিকেটের কয়েকজনের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হলে পুলিশ দু’জনকে আটক করে। দিনভর নানা সমালোচনায় ও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে আটক দুই যুবককে গভীর রাতে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, অভিযোগের বাদী পাওয়া যায়নি। তাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর গুদাম সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ওই দুই যুবক ফুজাইল ও মুছা দীর্ঘদিন ধরে গুদাম সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকার আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে সদর খাদ্য গুদামে ২ হাজার মে. টন ধান সংগ্রহ অভিযানে চলছে। বোরো সংগ্রহের আগে খাদ্য বিভাগের অ্যাপসে অনেক কৃষক আবেদন করে লটারিতে বিজয়ী হলেও ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ তেমন না হওয়ায় ও সরকারি কঠিন শর্ত মেনে ধান দেওয়া জটিল বলে সরকারকে ধান দিতে কৃষকের তেমন আগ্রহ নেই। বোরো সংগ্রহে ভাটা পড়লে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় লটারিতে বিজয়ী বা যে কোনো কৃষক জাতীয় পরিচয় পত্র ও কৃষি অফিসের প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে ধান দিতে পারবে। এই সুযোগে গুদামের সিন্ডিকেট বোর ধান সংগ্রহে ভুয়া কুষক দিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলে গুদামে ধান সরবরাহ করা শুরু করে। সিন্ডিকেটটি সাত দিনে একই মহল্লা কসবা নামা পাড়ার চারশত লোক দিয়ে চারটি ব্যাংকে চারশত হিসাব খোলে।

হিসাবধারী ও ওই আটক হওয়া দুই যুবকের বাড়ি শেরপুর শহরের কসবা নামাপাড়া এলাকায়। সিন্ডিকেট মঙ্গলবার থেকে অন্তত ৮০টি অ্যাকাউন্টে খাদ্য গুদাম থেকে ১ লাখ ৮ হাজার করে টাকা জমা হয়। বুধবার কয়েকটি ব্যাংক হিসাব থেকে অন্তত ৪০জন ওই পরিমাণ টাকা তুলে নেয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। ফুজাইল ও মুছা ছাড়াও গুদামের একটি বড় সিন্ডিকেট ভুয়া কৃষক বানিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে লভ্যাংশ হাতিয়ে নিচ্ছে।তবে বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য গুদামে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, টাকা তুলার সঙ্গে সঙ্গে সিন্ডিকেট হিসাবধারী প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা দিয়ে বাকী টাকা সিন্ডিকেট নিয়ে নেয়। বৃহস্পতিবার একই প্রক্রিয়ায় টাকা তুলে ওই দুই যুবক টাকা নিয়ে নিতে চাইলে বাজে বিপত্তি। ব্যাংকের ভিতর গন্ডগোল শরু হলে পুলিশ, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ এসে পড়ে। অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের দাবি তারা জানেই না কেন তাদের নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এই টাকা ওদের সার বীজ কেনার জন্য সরকার টাকা দিচ্ছে বলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা জানিয়েছিল। কেউ কেউ মনে করেছিল ব্যাংক ঋণ করে দিয়ে টাকা নিয়ে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে।ঋণ আতঙ্কে আমরা টাকা দিতে চাইনি। এ নিয়ে পুলিশ গুদাম সিন্ডিকেটের দুইজন এবং ভোক্তভোগী কয়েকজন মহিলা হিসাবধারীকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

শেরপুর সদর উপজেলার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সুপার আব্দুল করিম ও সদর থানার ওসি জুবাদুল ইসলাম ব্যাংক ও গুদামে গিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

কসবা নামা পারার ব্যাংক হিসাবধারী শিল্পী আক্তার বলেছেন, আমাদের এলাকার বিশিষ্ট খাদ্য গুদাম ব্যবসায়ী আনসার হাজীর ছেলে ময়না এলাকা থেকে অনেকের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে এবং বলেছে সরকার থেকে সার বীজ দিবে। আমরা প্রকৃত কোন কৃষক নই।

ব্যাংকে হিসাব খুলার দু-দিন পরে জানতে পারি আমাদের সবার অ্যাকাউন্টে এক লাখ আট হাজার টাকা আসছে। এটা কীসের টাকা আমরা জানি না।

শেরপুর খাদ্য গুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা (এসএমও) সোহেল রানা জানান, নিয়ম মেনেই ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে।কোন সিন্ডিকেট কি করছে জানা নাই।টাকা কৃষক ছাড়া কাউকে দেওয়ার সুযোগ নেই।

শেরপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভূইয়া জানিয়েছে এক এলাকায় এত সংখ্যক কৃষকের নামে ব্যাংক হিসাব হয়ে থাকলে বিষয়টি সন্দেহ জনক।ওরা কৃষক কিনা, যথাযথ প্রক্রিয়া মানা হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা।

শেরপুর সদর থানার ওসি জুবায়েদুল ইসলাম বলেন- কোনো অভিযোগকারী পাওয়া যায়নি। তাই মধ্যরাতে ওই দুইজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।