বরগুনায় বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগী, হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

বরগুনায় ডেঙ্গুর পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দিন দিন। বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগী। এ অবস্থায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায়, জায়গা না পেয়ে রোগীরা মেঝে, করিডর ও সিঁড়ির পাশে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পা রাখার জায়গাটুকুও নেই হাসপাতালে। হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন বাসাবাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। অবস্থার অবনতি হলে কেউ কেউ যাচ্ছেন বরিশাল কিংবা ঢাকায়।
শুক্রবার সর্বশেষ বরগুনা সিভিল সার্জন অফিসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় শুধু বরগুনা হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬২ জন। অন্যান্য হাসপাতালে আরও ভর্তি হয়েছেন ৮ জন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৫১ জন। এ বছর জেলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখন পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৩ জন।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রোজিনা নামে এক রোগী বলেন, ‘ভর্তি হয়েছি পাঁচ দিন হয়েছে, এখনও রোগের কোনও উন্নতি নেই। হাসপাতালে মশারি নেই, বেড নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকায় আরও ভয়াবহ অবস্থা। আমাদের সঙ্গে যারা সেবা দিতে আসেন তারাও এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তখন কে কার সেবা করবে।’
নাসিমা বেগম নামে একজন বলেন, ‘আমার স্বামীর ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। তিনি কিছুটা সুস্থ হতে না হতেই আমিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই। আমরা দুজনই এখন অসুস্থ। হাসপাতালে এলাম স্বামীর চিকিৎসা করাতে, এসে আমিও হলাম রোগী। হাসপাতালে ওষুধ নেই, বিছানা নেই।’
সাইফুল ইসলাম নামে অপর এক রোগী বলেন, হাসপাতালে ছয় দিন ধরে ভর্তি আছি, এখনও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। হাসপাতাল থেকে শুধু একটি স্যালাইন দেয়। অন্য ওষুধ বাইরে থেকে কিনে নিতে হচ্ছে।’
বরগুনা পৌর শহরের নজরুল ইসলাম সড়কের বাসিন্দা টোকোন মিয়া বলেন, ‘মশার উপদ্রবে আমরা অতিষ্ঠ। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ বছর মশার এমন উপদ্রব। পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় নালা-নর্দমায় বর্ষার পানি আটকে রয়েছে। বিভিন্ন ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা আটকে থাকার কারণে এমন পরিস্থিতির শিকার আমরা।’
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘যারা ট্যাংকে পানি ধরে রাখছেন, পানির পাত্রগুলো ঢেকে রাখতে হবে। পাত্রের ঢাকনা একটু ফাঁক থাকলে এডিস মশা ঢুকে ডিম পাড়বে। নিজের ঘরের আঙিনা নিজেই পরিষ্কার রাখা দরকার। বাসাবাড়ি, ছাদ, নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে।’
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাসকিয়া সিদ্দিকী বলেন, ‘২৫০ শয্যা হাসপাতালে ২শ’র বেশি ডেঙ্গু রোগী থাকে। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে অন্য রোগীদের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমরা ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিতেই হিমশিম খাচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের এখানে আইসিইউর ব্যবস্থা নেই। প্লাটিলেট পুশ করার ব্যবস্থা নেই। তাই রোগীর অবস্থার অবনতি দেখলে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করি।’
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, ‘রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)-এর গবেষণা দল ইতোমধ্যে বরগুনায় গবেষণা করেছেন। তাদের গবেষণা মতে, বরগুনার মানুষ সুপেয় পানির জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখেন। আর এই বৃষ্টির পানিতে তৈরি হয় এডিস মশার লার্ভা। যার ফলে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে যেসব ঘরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী থাকে তাকে সব সময় মশারির ভেতরে রেখে চিকিৎসা দেয়া উচিত, কিন্তু তা না করে খোলামেলা রাখা হয়; যার কারণে পরিবারের অন্যরাও আক্রান্ত হয়।’
এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক পরিসরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার তাগিদ দেন তিনি।