ঝালকাঠি জেলা
ডেঙ্গু চিকিৎসা দিতে পারছে না হাসপাতালগুলো

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়নের কামরুল ইসলাম তার ছেলেকে নিয়ে এসেছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এমন সন্দেহ নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে রোগীর উপসর্গ দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক পাঠিয়ে দেন বরিশালে।
কামরুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় কোনো চিকিৎসা হয় না। উপজেলায় যদি চিকিৎসা হতো তাহলে আমাদের ভোগান্তি কম হতো। কেউ ডেঙ্গু রোগী হলে তার পরিবার বোঝে কতটা টেনশনে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, বরিশাল মেডিকেলেও যে আধুনিক চিকিৎসা এবং সার্বক্ষণিক ডাক্তার পাচ্ছি, তা কিন্তু নয়। তবুও মন্দের ভালো চিকিৎসা হচ্ছে।
আরও কয়েকজন রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হয় শনিবার (২৮ জুন বিকেলে)। তারাও জানান একই অভিযোগ। ভান্ডারিয়া উপজেলার মাদার্শি গ্রাম থেকে এসেছেন রুহুল আমিন তার বাবাকে নিয়ে। ষাটোর্ধ্ব বাবা ইউসুফ হাওলাদারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর একদিন ছিলেন।
রুহুল আমিন বলেন, ২৮ ঘণ্টার মতো উপজেলা হাসপাতালে ছিলাম। ভেবেছিলাম বাড়ির কাছে অল্প খরচে ডাক্তার দেখাতে পারবো। সেখানে তারা ক্লিনিকে নিতে বলেন। শুধু আমি না, ডেঙ্গুর চিকিৎসা উপজেলায় কেউ পায় না। গত মাসে আমাদের গ্রামের আরেকজনের ডেঙ্গু হয়েছিল। তাকে খুলনা নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়েছে।
যদিও ডেঙ্গু চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে অধিক গুরুত্ব দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারপরও রোগীরা সন্তোষজনক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণ জানতে চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।
এসব চিকিৎসক নাম প্রকাশ করে এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে পিরোজপুর জেলার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন আরএমও জানান, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো উপযোগী নয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ থাকে না। জরুরি মুহূর্তে রোগীকে সাপোর্ট দিতে যা দরকার হয়, তা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না থাকায় ডেঙ্গু চিকিৎসার ঝুঁকি নেন না তারা। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেন।
ভোলা জেলার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও জানান, আমার হাসপাতালে ১৩ জন চিকিৎসকের কাজ চারজনে করছি। শুধু আমার হাসপাতালে নয়, বিভাগের কোনো হাসপাতালে চাহিদার অনুকূলে চিকিৎসক পাবেন না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এসব চিকিৎসা করাতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের পাশাপাশি ব্যক্তির দরকার হয়। তা না থাকলে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে রোগীর ক্ষতি হয়। এজন্য যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড সেখানে রেফার করা হয়।
এসব বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে চাহিদার আপেক্ষিক কতজন চিকিৎসক রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে জানায়নি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য-পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, চিকিৎসক সংকট নেই দেশে, এমন কোনো হাসপাতাল নেই। সবসময়েই চিকিৎসকরা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগে যে পরিমাণ চিকিৎসক চাহিদা আছে তার এক তৃতীয়াংশ রয়েছেন। ফলে যারা আছেন তারা অতিরিক্ত চাপ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন।
শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি সব হাসপাতালে রোগীরা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে মোট ৪৫৮২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জন মারা গেছেন। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪১৬ জন।