কলাই চাষে ভাটার টান: গারো পাহাড়ের কৃষিজ সংকট

শেরপুর জেলার শ্রীবরদীর চরাঞ্চল ও গারো পাহাড়ের সীমান্ত এলাকায় এক সময় জনপ্রিয় মৌসুমি ফসল ছিল কলাই। কম খরচ, স্বল্প সময় ও ভালো লাভের কারণে কৃষকেরা বছরের পর বছর ধরে মুগ, মাসকলাই, খেসারি ও ছোলার মতো কলাইজাত ডালশস্য চাষ করতেন।
তবে বর্তমানে এই ঐতিহ্য প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে শেরপুর জেলায় মাসকলাই চাষ হচ্ছে মাত্র ১৩০ হেক্টর, খেসারি ২৫ হেক্টর এবং মুগ কলাই ২৭ হেক্টর। অথচ আগের বছরগুলোতে এই সংখ্যাগুলো ছিল বহু গুণ বেশি।
শেরপুরের কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির দিলদার জানান, শুধু ডাল ও খাবারের জন্য নয়, কলাই জাত শস্য জমির উর্বরতা বাড়াই প্রতি বিঘা জমিতে চাষের পর ৬-৮ কেজি। নাইট্রোজেল সমতুল্য জৈব উপাদানর মাটিতে জমা পড়ে। এটি পরবর্তী চাষের জন্য বড় সহয়ক। তবে মাঠপর্যায়ের কৃষকরা জানান, বারবার লোকসানের মুখে তারা কলাই চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন্ তারা বলেন, আমরা পরিশ্রম করে ফসল তুলি, কিন্তু বাজারে দাম থাকে না। হঠাৎ করেই দাম পড়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হই, লাভ করে অন্য কেউ। তাদের অভিযোগ, বাজার ব্যবস্তাপনায় স্বচ্ছতা না থাকায় উৎপাদক কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ নিজ পরিবারে ডালের প্রয়োজন মেটাতে এক সময় তারা নিজের প্রয়োজনে মাষকলাই, মুগ, ছোলা বা খেসারির চাষ করতেন। বর্তমানে সে অভ্যাসও ক্রমে বিলুপ্তির পথে।
শেরপুরের কৃষি অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের স্থানীয় জলবায়ু উপযোগী ও মাটির গুণাগুল বৃদ্ধিরকারী এই ধরনের শস্যের আবাদে পুনরায় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। নীতিনির্ধারক,র্কষি বিভাগ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই হারানো ঐতিহ্য হয়তো আর ফিরে আসবে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির জানান, এক দশক আগেও পাহাড়ি উপজেলা ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীসহ চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে কলাই চাল হতো। এখন সে জমিতে ড্রাগন, পেয়ারা, মাল্টা, কুলসহ উচ্চমূল্যের ফলের চাষ বেড়ে গেছে। একইভাবে চারাঞ্চলের নিচু জমিতে ধান চাষের দিকে কৃষকের ঝোঁক বেশে, ফলে ডালশস্য ক্রমেই গুরুত্ব হারাচ্ছে।