রেকর্ড খাদ্যশস্য আমদানি গত অর্থবছরে

-
৬৭ লাখ ৮৫ হাজার টন চাল ও গম আমদানি
-
সরকারিভাবে চাল ও গম আমদানি বেড়েছে ৫৬ শতাংশ
-
চাল ও গম আমদানিতে ব্যয় ছাড়িয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা
সরকারি ও বেসরকারিভাবে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৬ লাখ ২৮ হাজার টন চাল ও গম আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাসেই গত অর্থবছরের তুলনায় বেশি চাল ও গম আমদানি করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৬ জুন পর্যন্ত চাল ও গম আমদানি ছাড়িয়েছে ৬৭ লাখ ৮৫ হাজার টন। এর মধ্যে সরকারিভাবে ১২ লাখ ২৫ হাজার টন এবং বেসরকারিভাবে ৫৫ লাখ ৬০ হাজার টন আমদানি করা হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি জানায়, চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানিতে বেশি নজর দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি বছরের ১৬ জুন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার লাখ টন বা ৫৬ শতাংশ বেশি চাল ও গম আমদানি করা হয়েছে। বেসরকারিভাবে চাল ও গম আমদানিতে কিছুটা শ্লথ থাকায় সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানিতে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় বাজেট বক্তৃতা ২০২৫-২৬ প্রদানকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সেটি উল্লেখ করেছেন। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। গত বছর আকস্মিক বন্যায় আউশ ও আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হওয়ায় খাদ্যশস্যের মজুদে কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। এই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে আমরা ৯ লাখ টন চাল এবং সাত লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিই।
যার আওতায় এরই মধ্যে চাল ও গম আমদানি করা হয়েছে।’ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চাল ও গম আমদানি হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। ওই সময় দেশে মোট আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৯৮ লাখ টন। তবে সরকারিভাবে চাল ও গম আমদানি বেশি হওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরে এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের আমদানি ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে।
সেখানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে চাল ও গম আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চাল আমদানিতে ব্যয় তিন হাজার ৮৬২ কোটি টাকা এবং গম আমদানিতে ব্যয় ১২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই দুটি খাদ্যশস্য আমদানিতে ব্যয় ছিল ২৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছর শেষে এই ব্যয় ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে চাল ও গম আমদানিতেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হতে পারে।
খাদ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে চাহিদার অনুপাতে গমের উৎপাদন না বাড়ার কারণে পণ্যটির আমদানি বাড়ছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে ধান উৎপাদন স্বস্তি দিতে পারেনি। আবার আবহাওয়াজনিত কারণে বোরো মৌসুমে উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না-ও হতে পারে। পাশাপাশি যুদ্ধ পরিস্থিতি বৈশ্বিক খাদ্যশস্য প্রাপ্তি কঠিন করতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে খাদ্যশস্য মজুদ ও আমদানিতে জোর দিতে হবে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তর থেকেও সরকারিভাবে খাদ্যশস্য সংগ্রহে জোর দিতে হবে।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম বেশ জোরদার করা হয়েছে। খাদ্যশস্যের মজুদ পর্যাপ্ত রাখতে সরকারিভাবে সংগ্রহ কার্যক্রমের পাশাপাশি আমদানিকেও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’