ঢাকা শনিবার, ৩১শে মে ২০২৫, ১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী কলেজ

মব সৃষ্টি করে বৈষম্যবিরোধী আহ্বায়কের ওপর ছাত্রদলের হামলা


২৮ মে ২০২৫ ১৬:৫২

আপডেট:
৩১ মে ২০২৫ ০৭:১৮

সিসি ক্যামেরার ভিডিও থেকে নেওয়া

রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক লিখন হোসেনের ওপর ‘মব’ সৃষ্টি করে হামলা করেছেন শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

আজ বুধবার (২৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও চিত্রে ধরা পড়েছে এই দৃশ্য। এতে দেখা যায়, শাখা ছাত্রদলের সভাপতি জসীম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুবেলের নেতৃত্বে তাকে মারধর করা হয়। পরে কয়েকজন শিক্ষক এসে ওই নেতাকে উদ্ধার করে অধ্যক্ষের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

জানা যায়, কলেজের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে প্রথমে লিখন হোসেন অধ্যক্ষের রুমে প্রবেশ করেন। এরপরে বাহির থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম কাকে যেন ফোন করেন। পরক্ষণেই উপরে অধ্যক্ষের রুমে এসে জড়ো হতে থাকেন কয়েকজন। এর কিছু সময় পরেই অধ্যক্ষের রুমে প্রবেশ করেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখার ছাত্রদলের সভাপতি জসীম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল। এরপরেই মারতে মারতে অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বের করে নিয়ে আসা হয় হামলার শিকার লিখন হোসেনকে। সেখানে লিখন হোসেনকে আঘাত করেন ছাত্রদলের সভাপতি জসীম উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, রাকিব মোল্লাসহ প্রমুখ ব্যক্তি। তবে ঠিক সময়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক তরীকুল ইসলাম উপস্থিত হয়ে লিখনকে সরান। এরপর অধ্যক্ষের রুম থেকে অধ্যক্ষ এসে লিখনকে নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করেন।

এ বিষয়ে হামলার শিকার লিখন হোসেন বলেন, আজ সকাল ১১টার কিছু পরে আমি কিছু তথ্য নেওয়ার জন্য অধ্যক্ষের কার্যালয়ে আসি। আমার বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলাম অধ্যক্ষ বরাবর সেটার কাজের অগ্রগতি জানতে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে যাই। এসময় অধ্যক্ষ বলেন, ফেসবুক একটি কমেন্টের জন্য তার মান সম্মান নষ্ট হয়েছে। তখন আমি বলি, আমি ম্যাডাম ওভাবে চিন্তা করে কমেন্টটি করেনি। তবে আমার উদ্দেশ্য ছিল যেন আমাদের ওয়েবসাইটটি ভালোভাবে সচল থাকে পাশাপাশি ফেসবুকে একটি ভেরিফাইড পেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন নোটিশগুলো দেওয়া যেতে পারে।

‘‘কথোপকথনের ঠিক দুই থেকে তিন মিনিট পর নিচ থেকে ছাত্রদলের সভাপতি জসীমউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল এবং আরও ১৫ থেকে ২০ জন তারা সন্ত্রাসী কায়েদায় অধ্যক্ষের রুমে প্রবেশ করে। তখন ছাত্রদলের এরা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, প্রিন্সিপালকে এসব বলার তুই কে? প্রিন্সিপালকে এগুলা বলবি কেন তুই? এসব কথা বলেই তারা আমাকে অধ্যক্ষের সামনেই মারতে শুরু করে।’’

তিনি আরও বলেন, মারধরের এক পর্যায়ে অধ্যক্ষের রুম থেকে বের করে বারান্দার সামনে দাঁড় করিয়ে মারতে থাকে। চতুর্দিক থেকে তারা মব সৃষ্টি করে মারতে থাকে আর বলে আজকে তোকে মেরেই ফেলবো। মেরে গাছের সাথে ঝুলিয়ে দিব। এসময় আমার বিভাগের শিক্ষক তরীকুল ইসলাম স্যার এসে আমাকে সার্পোট করেন।

হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রশাসনের কাছে আমরা আইনানুগ বিচার চাইবো। কলেজ প্রশাসনের কাছে হামলাকারীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে দাবি জানাবো।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি জসীম উদ্দিন বলেন, আজকে দোতলায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে লিখন হোসন নামের একটি ছেলের সঙ্গে ঝামেলা হয়। এসময় আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে লিখনকে অধ্যক্ষের রুমে সরে যেতে বলি। যেন কোন মারামারি বা মব সৃষ্টি না হয় এ কারণেই আমরা লিখনকে সরে যেতে বলি। তবে আমরা কেউ লিখনকে আঘাত করিনি। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, লিখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কিনা তা তিনি জানেন না।

তবে প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়কে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে কলেজের অফিসার্স কাউন্সিলের সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, একটা মিটিংয়ে আছি পরে ফোন করেন।