ঔষধিগুণ সম্পন্ন বৃক্ষ সংরক্ষণে নকলা প্রেসক্লাবের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

যে হারে জনগন বাড়ছে, ঠিক সে হারেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ বালাই। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগণের চাহিদা মিটাতে বাসস্থানসহ তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে বন জঙ্গল কেটে সাবার করা হচ্ছে। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধি গুণ সম্পন্ন বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ।
বিলুপ্তের পথে চলা বৃক্ষ সমূহ সংরক্ষণের লক্ষে শেরপুরের নকলায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন নকলা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকগন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিকেলে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের অন্তত ২ জন করে মোট ১০ জন বৃক্ষপ্রেমীর হাতে অন্তত ৫টি করে পদ্মগুলঞ্চ কাটিং নিজ নিজ বাড়ির আশে পাশে রোপনের জন্য তুলে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন-এঁর নিজ বাসভবন নকলা পৌর শহরের তাসনীম ভিলার সামনে উপজেলার বানেশ্বরদী, উরফা, চন্দ্রকোনা ও পাঠাকাটা ইউনিয়নের আগ্রহী বৃক্ষপ্রেমীদের মাঝে পদ্মগুলঞ্চের কাটিং করা চারা বিতরণ করা হয়। এসময় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী রাজন, দপ্তর সম্পাদক সেলিম রেজা, বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী খন্দকার পাড়া এলাকার উসমান ও বানেশ্বরদী পূর্ব খন্দকার পাড়া এলাকার মনিরুজ্জামানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ক্লাবের সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসেন ও দপ্তর সম্পাদক সেলিম রেজা স্বর্ণ লতা সংরক্ষণে নকলা থেকে নাকুগাঁও স্থলবন্দর পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের গাছে এবং নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দুই দিনব্যাপী স্বর্ণ লতা ছড়িয়ে দিয়ে বংশ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আজ নকলা থেকে নাকুগাঁও স্থলবন্দর পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের গাছের স্বর্ণ লতা পথচারীদের নজর কাড়তে সক্ষম।
নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, ‘যে হারে জনগন বাড়ছে, ঠিক সে হারেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ বালাই। আর মানুষ দ্রুত রোগ মুক্তির আশায় এ্যালোপেথিক তথা রাসায়নিক ঔষধ সেবন করে দেহের ক্ষতি সাধন করছেন। তাই প্রাকৃতিক ভাবে রোগ মুক্তির মহাঔষধ হিসেবে পরিচিত ঔষধিগুণ সম্পন্ন বিভিন্ন বৃক্ষ সংরক্ষণ করা জরুরি।’ এই বিবেচনা থেকেই বিলুপ্তের পথে চলা ঔষধিগুণ সম্পন্ন বিভিন্ন বৃক্ষ সংরক্ষণে নকলা প্রেসক্লাব পরিবার এমন অভিনব উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।
তিনি বিভিন্ন তথ্যের বরাত দিয়ে জানান, পদ্মগুলঞ্চ লতা জাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত অন্য গাছকে অবলম্বন করে এটি বেড়ে ওঠে। পরিণত বয়সে লতাগুলো আঙুলের ন্যায় বা তারচেয়েও বেশি মোটা হয়। লতার গায়ের ছালগুলা কাগজের মত পাতলা। নিচে সবুজ এবং ভিতরে সাদা। স্বাদ তিক্ত ও পিচ্ছিল। পাতা অনেকটা পান আকৃতির সরল ও একান্তর। শীতকালে পাতা ঝরে যায়, তবে বসন্তকালে আবার নতুন পাতা বের হয়। এর বিভিন্ন প্রচলিত নাম আছে যেমন, গুলঞ্চ, গুভুচী। তবে ইউনানী নাম গেলূ, আয়ুর্বেদিক নাম গুডুচা বা গুলঞ্চ। এটি বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলংকা, চীন, ভারত, মায়ানমার এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। মে-জুন মাসে ডালের কাটিং রোপন করতে হয়।
প্রবাল আয়ুর্বেদ এন্ড ইউনানী ক্লিনিকের মালিক ও নকলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কবিরাজ জাহাঙ্গীর হোসেন আহমেদ জানান, এই গুলঞ্চ লতায় অ্যালকালয়েড, কিছু গ্লাইকোসাইড, স্টেরল ও বিভিন্ন তিক্ত রাসায়নিক দ্রব্য বিদ্যমান। এর পাতা ও লতা বিভিন্ন রোগ সাড়াতে ব্যবহার করা হয়। সকল প্রকার চর্মরোগ, পুরাতন বা জীর্ণ জ্বর, অরুচি, বাতের যন্ত্রনা, রক্তঅর্শ, ডায়াবেটিস, অগ্নিমান্দ্য, জন্ডিস, সোরিয়াসিস ও কৃমির আক্রমণ থেকে রক্ষায় অতিউপকারী। পদ্মগুলঞ্চে বিদ্যমান পটাশিয়াম স্নায়ুবিক শক্তিবৃদ্ধি করে, ক্রমিয়াম শর্করা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। আয়রন হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে ও ক্যালশিয়াম স্নায়ু, হৃদযন্ত্র ও পেশি শক্তি বৃদ্ধি করে। এ গাছের রস বেশ তিতা হলেও এর মধ্যে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট, এন্টিহাইপার গ্লাইসেমিক, এন্টি-নিওপ্লাসটিক, এন্টিডোট, এন্টি-প্লাসমোডিক, এন্টি-হাইপারটিক, এন্টি-এলার্জিক, এন্টি-ইনফ্লামেটরি, এন্টিহাইপার লাই পেডেমিয়া, এন্টি-এষ্ট্রেস গুনাবলী রয়েছে। এছাড়াও এলকালয়েড, ডিটারপিনয়ড, ল্যাকটোনস, ষ্টেরয়েডস, গ্লাইকোসাইডস, এলিফ্যাটিক যৌগ ও পলিসাকারাইড রয়েছে। তিনি আরো জানান, আয়ুর্বেদ ও ইউনানী আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মোতাবেক এটি সকল প্রকার চর্মরোগ, জন্ডিস, ডায়াবেটিস, আর্থ-রাইটিস, ক্যান্সার, ডেঙ্গুজ্বর, আমাশয়, হেপাটাইটিস, রক্তশূন্যতা, ব্রনকাইটিস, এজমা, পাইল্স, কিডনি রোগ ও সাপের বিষের এন্টিডোট হিসেবে ব্যবহার হয়।