সৌর ভূ-প্রকৌশল
পৃথিবী বাঁচানোর নতুন ধারণা

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এই নতুন ধরনের গবেষণা নিয়ে কাজ করছেন। এটি যেমন বিপুল সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র, তেমনি এর ঝুঁকিও রয়েছে। কল্পনা করুন আপনি সাগর থেকে পানি তুলে নিচ্ছেন।
অনেক পানি। ধরুন কয়েক শ বিলিয়ন টন। এবার পুরো পানি জমে কয়েক ট্রিলিয়ন টন তুষার হয়ে গেল। এভাবে অ্যান্টার্কটিকার একটি অংশকে আপনি তুষারে পরিণত করলেন।
বরফের ওপর আরেকটি বরফের চাদর। একটি গবেষক দলের হিসাবে এভাবে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলা ঠেকানো যাবে।
আর বাঁচানো যাবে সাংহাইয়ের মতো শহর অথবা ডুবে যাওয়া থেকে বেঁচে যাবে নিউইয়র্ক। কারণ এই গবেষকরা বলছেন, অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে গেলে পানির উচ্চতা বাড়বে তিন মিটারের বেশি।
বিষয়টি অনেকেটা পৃথিবীর জলবায়ু সিস্টেমের ভেতর ঢোকা যায়। গবেষকরা একে বলছেন, ভূ-প্রকৌশল। এর মতো সোলার জিও ইঞ্জিনিয়ারিং বা সৌর ভূ-প্রকৌশলও একটি নতুন ধারণা।
পদার্থবিদ জেসিকা স্ট্রেফলার বলেন, ‘নানা রকমের উদ্যোগ নিয়ে আমরা ভাবছি। একদিকে গাছ লাগিয়ে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড কমানোর চেষ্টা করছি, অন্যদিকে কারিগরি উদ্যোগ নিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড সরাসরি বায়ুমণ্ডল থেকে বের করে নিয়ে আসা।
যেমন কৃত্রিম গাছ লাগানো। তবে কার্বন ডাই-অক্সাইডেরও প্রয়োজন রয়েছে। একেও ভূ-তাত্ত্বিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। ’ সমস্যা হলো কোথায় রাখা হবে কার্বন ডাই-অক্সাইড? একটা উপায় হলো একে মাটির নিচে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
পাইলট আকারে কিছু প্ল্যান্টও করা হয়েছে। কিন্তু ভাবনার বিষয়ও আছে। জেসিকা বলেন, ‘যে ঝুঁকির কথা সবাই ভাবছে, তা হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড আবার বেরিয়ে আসতে পারে। যদি বেরিয়ে আসেও তার পরিমাণ হবে অনেক কম, যা খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বায়ুমণ্ডলের ওপর। ’
সৌর জিও-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নানা ধারণা নিয়ে কাজ করা হয়। সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়টি হলো, বাতাসে এমন কিছু কণা ছড়িয়ে দেওয়া যা সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলিত করে আবার মহাকাশে পাঠিয়ে দেবে।
যেমন সালফারের কণা। মার্ক লরেন্স বলেন, ‘স্ট্রাটোস্ফিয়ারে যদি পর্যাপ্ত কণা ছাড়া যায় যে এগুলো এর তাপমাত্রাও পর্যাপ্ত পরিমাণে বদলে দিতে পারে, ধরুন ২ ডিগ্রি, তাহলে বায়ুমণ্ডলের রংই বদলে যাবে। আমরা এমনটা দেখেছি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর, খুবই অদ্ভুত রং যেমন ম্যাজেন্টা বা কমলা রঙের সূর্যাস্ত।
এমনকি আকাশ আরও সাদা হয়ে উঠতে পারে, নীল কমে যেতে পারে। এমন পরিবর্তনগুলো হয়তো তখন চোখে ধরা পড়বে।
তবে মনে রাখতে হবে, এর প্রভাব শুধু আমাদের ওপর নয় আরও অনেক জীবের ওপর পড়তে পারে, বিশেষ করে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে সঙ্গে জীবনপ্রক্রিয়া জড়িত যেসব পোকামাকড় আছে সেগুলোর।
’ সোলার জিও-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাবে। তবে একই সময়ে কোনো কোনো এলাকা আরও অনেক শুষ্ক হয়ে যাবে। আর এটা বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে এই গবেষকদের কাছে এখনো সবকিছু চিন্তায় সীমাবদ্ধ। এখনো কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।