ঢাবি উপাচার্যের বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবন

অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম উপাচার্য। ২০১৭ সালের ০৪ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ। ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট অধ্যাপক ড. আ. আ. ম. স. আরেফিন সিদ্দিকের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আখতারুজ্জামানকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন।
ড. মো. আখতারুজ্জামান ১৯৬৪ সালের ১ জুলাই বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কালিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আবুল হাশেম খান এবং মায়ের নাম ঈরন বানু। নিজ জেলা বরগুনার কালমেঘা মুসলিম হাই স্কুল থেকে তিঁনি মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ছাত্র হিসেবে নাম লেখান প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জন করার পর ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে তিনি পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। ১৯৯০ সালে তিনি ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। একজন কৃতী শিক্ষার্থী হিসেবে ভারতের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
তিঁনি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে ‘রিলিজিয়ন ইন আমেরিকান পাবলিক লাইফ’ বিষয়ে গবেষণা করেন। ব্রিটিশ কাউন্সিল গবেষক হিসেবে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং স্কলার হিসেবে কাজ করেন। সেখানে সেন্টার ফর খ্রীষ্টান-মুসলিম রিলেশনস-এ ‘মুসলিম কমিউনিটি ইন ইউকে’ বিষয়ে গবেষণা করেন।
২০০৪ সালে আখতারুজ্জামান অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বিভিন্ন একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ও ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ছিলেন তিঁনি। ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কলা অনুষদের ডিন ছিলেন আখতারুজ্জামান।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে শিক্ষক রাজনীতিতেও পিছিয়ে ছিলেন না তিনি। বিএনপির শাসনামলেও তিনি আওয়ামীলীগ সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল ‘নীল দলের’ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সে সময় ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ ও ২০১১ সালে আরো দুই মেয়াদে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন আখতারুজ্জামান। বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবেও কাজ করেছেন এই গুণী অধ্যাপক।
এখানেই শেষ নয়। ‘মুসলিম ইতিহাসতত্ত্ব’ এবং ‘মধ্যযুগীয় বাংলার সমাজ ও নগরায়ণ’ নামে দুটি বইও রয়েছে। সম্পাদনা করেছেন আরো তিনটি বই। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ৪২টি গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে তাঁর। সর্বশেষ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।