ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


দেশে ফিরেও বিপদের শেষ নেই সুমির


২৫ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:০১

আপডেট:
৯ মে ২০২৫ ০২:০৮

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমি আক্তার দেশে ফিরে নতুন করে সংকটে পড়েছেন। শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি স্বামী নুরুল ইসলামের হুমকি-ধামকিতে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তার। এই অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে না চাওয়া সুমি নতুন করে বাঁচতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।

গত ১৫ নভেম্বর সৌদিতে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে দেশে ফিরিয়ে এনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সুমি এখন তার বাবার বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বৈরাতি সেনপাড়া গ্রামেই আছেন।

শনিবার সুমির বাবার বাড়ি গিয়ে জানা যায়, দেশে ফেরার পর থেকেই সুমি ঘরের মধ্যেই সময় কাটান। কারও সঙ্গে তেমন কথাও বলছেন না। শারীরিকভাবেও অসুস্থ্‌ হয়ে পড়েছেন। সুমির বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়ে আমার শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। দোজখ থেকে বেঁচে ফিরেছে কোনো মতে। কিন্তু দেশে এসে পড়েছে আরেক দোজখে। যে স্বামীর জন্য আজ মেয়ের এই অবস্থা সে আবার তাকে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। হুমকি দিচ্ছে।

সুমি বলেন, ‘টাকার অভাবে জেএসসি পরীক্ষা দিতে না পেরে দুই বছর আগে গাজীপুরে এক সোয়েটার কারখানায় কাজ শুরু করি। থাকতাম মামার বাড়িতে। মামী শরিফা খাতুন আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। একদিন সেখানে একদিন জুতা সেলাই করতে বাইরে গেলে নুরুল আমাকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায়। আশুলিয়ার পারভেজ নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে আটকে রেখে জাল জন্মসনদ তৈরি করে বিয়ে করে নুরুল।’

সুমি জানান, নুরুল ইসলাম মাদক চক্রসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মে জড়িত ছিল। তারপরও সংসার শুরু করেন সুমি। কিন্তু নুরুল তাকে বিদেশে পাঠানোর চক্রান্ত শুরু করে। পরিচিত দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠানোর সব বন্দোবস্ত করে। ২০০২ সালে জন্ম হলেও তার বয়স ২৫ দেখিয়ে সৌদিতে পাঠায়।

সুমি বলেন, ‘এখনো আমাকে সৌদি আরবের দুর্বিষহ নির্যাতন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। স্বাভাবিক হতে পারছি না। টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছি না। আমি আর নুরুল ইসলামের সঙ্গে সংসার করতে চাই না। তার জন্যই আজ আমার এই পরিণতি। সৌদিতে গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি সে আমাকে দালালদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি এখন তার সংসার করতে রাজি না হওয়ায় সে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আমার নামে মামলা করবে বলে ভয় দেখাচ্ছে। আমরা নাকি তার কাছে ১২ লাখ টাকা নিয়েছি। অথচ উল্টো সে আমাকে ফিরিয়ে আনার কথা বলে টাকা নিয়েছে। আমার বাবা গরু বিক্রি করে তাকে টাকা দিলে তারপর সে আমার ভিডিওটি প্রকাশ করার ব্যবস্থা করে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সরকার আমাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি যেন নতুন করে আমার ভবিষ্যৎ গড়তে পারি সেই সহযোগিতা সরকারের কাছে চাইছি।’

সুমির মা মল্লিকা বেগম বলেন, ‘মেয়েটি ফেরার পর থেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ওর ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা আমরা ভেবে পাচ্ছি না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি তার চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের যেন ব্যবস্থা করা হয়।’

সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আগে মাদক সেবন করতাম। কিন্তু সুমির সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর আমি ভালো হয়ে যাই। আমি তাকে সৌদি যেতে মানা করি কিন্তু সে নিজেই সৌদি যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে। আমিই তাকে সৌদি থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন অফিসে দৌড়ঝাঁপ করি। সুমি সৌদিতে গেলে আমি তার বাবার বাড়ি এলাকায় জমি কেনার জন্য সুমির বাবার কাছে ১২ লাখ টাকা দিই। তারা জমি কিনেনি এবং আমাকেও টাকা ফেরত দেয়নি। সুমি যদি আমার সঙ্গে সংসার না করে তাহলে আমাকে টাকা ফেরত দিতে হবে। আমি তাকে তালাক দিতে চাই না।’

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন, ‘সুমির বিষয়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি। কোনো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা আমরা ভাবছি। সে জানিয়েছে তার স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চায় না। তারপরও কেউ যদি বাড়াবাড়ি করে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’