ঢাকা মঙ্গলবার, ২১শে মে ২০২৪, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


ডিবির সন্দেহ

সৈকত রুম্পাকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেছে


৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:৩৫

আপডেট:
২১ মে ২০২৪ ০৫:৩৫

রাজধানীর স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পাকে (২১) ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের ধারণা, এ হত্যাকাণ্ডের সময় তার সাবেক প্রেমিক আবদুর রহমান সৈকতসহ (২২) একাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশকন্যা রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল রবিবার সৈকতকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এদিকে রুম্পা ‘হত্যার’ বিচার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো গতকালও তার প্রতিষ্ঠান ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

গত বুধবার রাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর একটি গলি থেকে লাশ উদ্ধারের সময় রুম্পার পরিচয় জানা যায়নি। পরদিন শনাক্ত হয় হবিগঞ্জে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক রোকনউদ্দিনের মেয়ে রুম্পা মালিবাগে মা-ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হওয়ায় একই দিন অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় হত্যা মামলা করে পুলিশ।

এরপর গত শুক্রবার রুম্পা ‘হত্যার’ বিচার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন স্টামফোর্ডের শিক্ষার্থীরা। তাদের মুখে উঠে আসে সৈকতের নাম। পরে গত শনিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সৈকতকে রাজধানীর মিন্টো রোডের কার্যালয়ে ডেকে নেয় ডিবি। একপর্যায়ে রাতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গতকাল সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে সৈকতকে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি দক্ষিণ বিভাগের পরিদর্শক আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, রুম্পার সহপাঠী সৈকতকে মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্র। ভিকটিম রুম্পা একই ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের ভালোবাসার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ঘটনার দিন (৪ ডিসেম্বর) বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তায় দুজনকে একসঙ্গে দেখা গেছে বলেও সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ওই সময় প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে কথাবার্তার একপর্যায়ে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আসামি সৈকত সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য রুম্পাকে অনুরোধ করেন। এতে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়।

একপর্যায়ে বিরোধ চরমে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন রাত পৌনে ১১টার দিকে রুম্পাকে আসামি সৈকত ও একজন অজ্ঞাতনামা সহযোগী মিলে হত্যা করে লাশ ৬৪/৪ সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের একটি বাসার ছাদ থেকে ফেলে দেয় মর্মে প্রাথমিকভাবে জোর সন্দেহ হচ্ছে। মামলাটি তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বিধায় আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

গত বুধবার রাতে রুম্পার লাশ উদ্ধারের পর বিভিন্ন সংস্থা তদন্তে নামে। প্রথমে রমনা থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। চার দিনেও কোন ক্লু না পাওয়ায় তদন্তভার ন্যস্ত হয় ডিবির দক্ষিণ বিভাগে।

ডিবির দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শামসুল আরেফিন  বলেন, ‘রুম্পার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছে। কাজেই হত্যা মামলা ধরেই আমরা তদন্ত করছি। এই তদন্ত আমাদের যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই যাব, তারপরই রহস্য জানা যাবে।’

ডিবির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ মামলার তদন্তের স্বার্থে রুম্পার সহপাঠীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধারস্থলের আশপাশে থাকা সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশেস্নষণ করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন আসামী সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি ময়নাতদ‡ন্তর প্রতিবেদন ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর রুম্পা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হবে।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন সাক্ষ্যপ্রমাণের তথ্যানুযায়ী, রুম্পার লাশ উদ্ধার হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে রুম্পার সঙ্গে সৈকতসহ আরও এক তরুণী ছিল। সৈকতের মাধ্যমে ওই তরুণীর পরিচয় জানতে পেরেছি। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

স্টামফোর্ডের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ মোবাইল ফোনে  বলেন, ‘রুম্পা ছিল আমার বিভাগের ছোট বোন। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে একসঙ্গে কফি খেয়েছি। তখন সে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার কথা জানিয়েছিল। ইউনিভার্সিটির খেলাধুলার বিষয়ে আরও কিছু কথাবার্তা হয় তার সঙ্গে। তারপর সে বিদায় নিয়ে চলে যায়। সে সময় তাকে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করিনি।’

স্টামফোর্ড ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি : গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর স্টামফোর্ড ক্যাম্পাসে রুম্পা হত্যার বিচার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এ কর্মসূচি থেকে তারা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল, ‘রুম্পা হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’, ‘রুম্পার ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই’, ‘বিচার হতেই হবে, আর কত?’, ‘স্টপ, স্টপ, স্টপসহ’ নানা সেস্নাগান লেখা প্ল্যাকার্ড।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাফর বলেন, ‘রুম্পা ছিল একটি হাসিখুশি মুখ, বিভাগের সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। ছোট-বড় সবাই তাকে চিনত ও পছন্দ করত। আমি তার হত্যার বিচার চাই।’ একই বিভাগের শিক্ষক জেরিন বলেন, ‘আমরা কোনো শিক্ষার্থীকে হারাতে চাই না, রুম্পা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রী ছিল, অনেক প্রাণচঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে ছিল। কেন সে খুন হয়েছে, কে করেছে, কীভাবে করেছে তা জানতে চাই।’ দ্রুত প্রশাসনকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

নোবিপ্রবিতে মানববন্ধন : রুম্পা হত্যার বিচারের দাবিতে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, রুম্পাকে হত্যার পর চার দিন পেরিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ে শাস্তির আওতায় আনারও দাবি জানান তারা।