ঢাকা শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২


আ.লীগে চমক তিন ‘খান’এক চৌধুরী


২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:১১

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ০০:৫৬

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘকাল অতিক্রম করে নিজেই পরিণত হয়েছে সবচেয়ে বড় চমকে। ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক-বাহক আর সাক্ষী হিসেবে দলটি নেতৃত্বে বিস্ময়েরও সৃষ্টি করেছে বহুবার। মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী এ দলটির মাধ্যমেই রাজনীতির হাতে খড়ি হয়েছে তৃণমূল থেকে বিশ্বনন্দিত বহু নেতার। যারা আলোকিত করেছেন জাতি আর সমাজকে।

বিগত সাত দশকে ২০টি জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলটির নেতৃত্বে এসেছেন অসংখ্য ত্যাগী, পরীক্ষিত, সময়ের সাহসী নেতা। সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, আইনজীবী সবার পদচারণায় মুখর এ দলটি। আর তাই প্রাচীনতম এ দলটির জাতীয় সম্মেলন তথা নতুন কমিটি ঘোষণা মানেই তুমুল কৌতুহল, চমক আর বিস্ময়ের অপেক্ষা।

তবে আলোচনা, তর্কবিতর্ক আছে ২১তম জাতীয় সম্মেলনে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলটির নতুন কমিটিতে কোনো চমকই ছিল না। কয়েকটি নতুন মুখ আর কিছু পদে রদবদল ছাড়া বড় কোনো চমকই দেখা যায়নি। যদিও মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বড় কিছু পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা ছিল প্রবল। তবে দৃশ্যমাণ চমক না থাকলেও চ্যালেঞ্জিং কমিটির যে চমকটা আড়ালে রয়ে গেছে তা রীতিমত বিস্ময়েরও। সাদাচোখে যা হয়তো কারো চোখেই পড়বে না।

আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নবগঠিত নির্বাহী কমিটির এবারের সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছেন তিন খান, এক চৌধুরী। যারা চমকে দিয়েছেন গোটা দলকেই। সেই চার চমক হলেন প্রথমত সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীতে স্থান পাওয়া শ্রমিক নেতা শাজাহান খান। দ্বিতীয়ত সত্তর বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রথম নারী অর্থ সম্পাদক আয়েশা ওয়াশিকা খান আর তৃতীয় চমক সব রেকর্ড ভেঙে অল্প বয়সে উপ-দপ্তর সম্পাদক পদ পাওয়া ছাত্রলীগ নেতা মো. সায়েম খান, চতুর্থ চমক তৃণমূল থেকে সরাসরি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।তিনি বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত মোকাবিলা করে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।।

শাজাহান খান: একসময় জাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা শাজাহান খান শ্রমিক নেতা হিসেবেই বেশি পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর সদর আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়েও।

তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পর্যায়ের সদস্যই ছিলেন না। অথচ ২১তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীতে জায়গা পেয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চমক সৃষ্টি করেছে। যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

ওয়াসিকা আয়েশা খান: তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি দেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিবিদ প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে। তার বাবা স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম প্রতিনিধি। দায়িত্ব পালন করেছিলেন দলটির অর্থ সম্পাদকেরও। তবে তার মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পদেই ছিলেন না।

অথচ, বিগত সাত দশকের রেকর্ড ভেঙে এবারই প্রথম দলটির অর্থ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেলেন একমাত্র নারী, আয়েশা ওয়াশিকা খান। এর আগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শীর্ষ দুটি পদে নারীদের দেখা গেছে। সভাপতি পদে দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

সায়েম খান: ছাত্রলীগের (সোহাগ-জাকির) কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সে সময় বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য দিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছিলেন। তরুণ নেতা সায়েম খান বিগত কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির সদস্য হিসেবেও।

শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: তৃণমূল থেকে সরাসরি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।তিনি বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত মোকাবিলা করে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের ৩৯ পদের মধ্যে যে ৩২ পদের নাম ঘোষণা করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তাতে উপদপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পান সায়েম খান। এরপর থেকেই সর্বত্র আলোচনায় আসে তার নাম। অল্প বয়সে প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে জায়গা পাওয়াটা অনেক বড় চমক হিসেবেই দেখছেন সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ৮১ সদস্যের মধ্যে দুই দফায় ৭৪ সদস্যের কমিটি ঘোষণা হয়েছে। এখনো বাকি আছে সাতটি পদ। এবার কমিটিতে বড় কোনো পরিবর্তন না হলেও একেবারেই নতুন হিসেবে ঠাঁই পাওয়া তিন খানের নামকেই বড় চমক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

এনএম