প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল নববধূসহ ৩ জনের

প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় প্রাণ যশোরের ডা. তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশা ও শফিকুল ইসলাম জ্যোতির বিবাহোত্তর সংবর্ধনা ছিল আগামী বৃহস্পতিবার। এ উপলক্ষে আলোকসজ্জা করা হয় জ্যোতির পুরো বাড়ি ও আশপাশ।
পরিবারের সবাই ব্যস্ত দাওয়াতের কাজে। গত শুক্রবার রাতে নিজেদের গাড়ি নিয়ে নবদম্পতিও সে কাজে বেরিয়ে পড়েন। এর পর মধ্যরাতে চলে আনন্দভ্রমণ। ফাঁকা রাস্তায় দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে তাদের গাড়ি। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারান চালকের আসনে থাকা বর জ্যোতি। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বাড়ির প্রাচীরে ধাক্কা লেগে গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নববধূসহ তিনজন। যশোর শহরের পুরাতন কসবা বিমান অফিস মোড়ের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতদের স্বজন ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে শফিকুল ইসলাম জ্যোতি নিজেই প্রাইভেটকার চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে দাওয়াত দিতে বের হন।
রাত ১টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে শহরের বিমান অফিস মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আঘাত করে পাশের দেয়াল ভেঙে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে প্রাইভেটকারে থাকা শিশুসহ সাতজনই আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
তবে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ডা. তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশাসহ তিন নারীর। অন্যরা হলেন- যশোর শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়কের (আরএন) সুমন ইসলামের স্ত্রী তানজিলা ইয়াসমিন ইয়াশা, একই এলাকার মনজুর হোসেনের স্ত্রী তিথী। পিয়াশা ও ইয়াশা আপন বোন। আর তিথী তাদের খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী। আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. কাজল কান্তি মল্লিক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই তিনজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বর জ্যোতি, নিহত তিথীর মেয়ে মানিজুর মাশিয়াব (৪), তাদের আত্মীয় হৃদয় ও শাহিন।
তিথীর স্বামী মনজুর হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার রাতে বর জ্যোতি প্রাইভেটকার নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন। শহরে ঘুরতে বের হওয়ার কথা বলে আমার স্ত্রী ও সন্তানকেও গাড়িতে তুলে নেন। আমার খালাতো দুই বোনও (ইয়াশা ও পিয়াশা) ছিল। তারা শহরের পালবাড়ী, আরবপুর এলাকায় আলোকসজ্জা দেখতে ও বিয়ের দাওতায় দিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।’ নিহতদের স্বজন রোহান উদ্দিন জানান, বছরখানেক আগে পিয়াশার সঙ্গে জ্যোতির বিয়ে হয়। আগামী বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নববধূকে ঘরে তুলে নেওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে এর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছিল। এর মধ্যেই দুর্ঘটনাটি ঘটল।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন ডা. তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশার স্বামী শফিকুল ইসলাম জ্যোতি। তিনি পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছেন। দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটল তা জানার জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
তবে মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে জ্যোতি গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা। এদিকে গতকাল শনিবার ভোর থেকেই যশোরের ঢাকা রোড বিসিএমসি কলেজ এলাকায় পিয়াশাদের বাড়িতে ছিল প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের ভিড়।
পাঁচ দিন পর বিয়ে উপলক্ষে যে বাড়িতে বিয়ের ধুমধাম আয়োজন, সেখানে চলছে শোকের মাতম। ঘরের ভেতর থেকে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসে ইয়াশা ও পিয়াশার মা রেহেনা পারভীন হিরার আহাজারি। সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় এই মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষাই যেন খুঁজে পাচ্ছে কেউ। মায়ের কণ্ঠে শুধু সন্তান হারানোর প্রলাপ, ‘আমার আর মা বলে ডাকার কেউ থাকল না। আমি এখন কাদের নিয়ে বাঁচব।’ অন্য ঘরে নিহতদের বাবা মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী বসে আছেন ভারাক্রান্ত হৃদয়ে।