হত্যার পর ছুরি কেনে স্বামী
গাজীপুরে স্ত্রীকে সাত টুকরো করেন স্বামী

গাজীপুরে গৃহবধূ রেহানা আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ সাত টুকরো করার ঘটনায় তার স্বামী জুয়েল আহমেদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল সোমবার গাজীপুরের আদালতে দেওয়া ওই জবানবন্দিতে সে বলেছে, স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ গুমের জন্য বাজার থেকে ছুরি কিনে সেই ছুরি দিয়ে মরদেহ সাত খন্ড করে ব্যাগে ভরে ময়লার স্তূপে ফেলে রাখে। রেহানা হত্যা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গাজীপুরে গৃহবধূ রেহানা আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ সাত টুকরো করার ঘটনায় তার ভাই মো. হোসাইন শহিদ বাদী হয়ে গতকাল জয়দেবপুর থানায় মামলা করেছেন। একই দিন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার রেহানার স্বামী জুয়েলকে গাজীপুরের আদালতে পাঠানো হলে সেখানে সে বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
রেহানা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জয়দেবপুর থানার এসআই রাকিবুল ইসলাম জানান, জুয়েলকে গতকাল গাজীপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে সে স্ত্রীকে হত্যার পর সাত টুকরো করার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
এসআই রাকিবুল আরও জানান, জুয়েল আগে একটি বিয়ে করে। সেখানে তার একটি মেয়েসন্তান রয়েছে। ছয় মাস আগে জুয়েল-রেহানা পালিয়ে বিয়ে করে। তবে জুয়েলের আগের বিয়ের কথা জানতেন না রেহানা। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এরই জেরে গত বৃহস্পতিবার রেহানাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহ সাত টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখে জুয়েল। পরে গত রবিবার সদর উপজেলার মনিপুর এলাকা থেকে লাশের টুকরোগুলো পুলিশ উদ্ধার করে। এরপর জুয়েলকে আটক ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়।
আটক জুয়েল ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, জুয়েলের বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর থানার পলাশ ইউনিয়নের কাচিরগাতি গ্রামে। রেহানা মনিপুর এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। আর জুয়েল চাকরি ছেড়ে ফেরি করে কাপড়ের ব্যবসা করত। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জুয়েল মারধর করলে রেহানা অচেতন হয়ে পড়েন। পরে রেহানা মারা গেছেন ভেবে লাশ গুম করার জন্য বাজার থেকে ছুরি কিনে আনে জুয়েল। পরে ওই ছুরি দিয়ে স্ত্রীকে শয়নকক্ষে জবাই করে মরদেহ সাত খন্ড করে পলিথিন ও ব্যাগে ভরে রাতের আঁধারে টুকরোগুলো ময়লার স্তূপে তিনটি স্থানে ফেলে রাখে। পরে ময়লার স্তূপের পাশে একটি বস্তা দেখতে পান জুয়েলের প্রতিবেশী বাপ্পী হোসাইন নামে এক যুবক। এরপর জুয়েলের আচরণে পরিবর্তন দেখে সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেন তিনি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের খণ্ডগুলো উদ্ধার করে।
এদিকে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের সময় সংগঠনটির কর্মী ইমন রনি (২৭) হত্যার বিষয়েও বিভিন্ন তথ্য মিলেছে। পাহাড় দখল ও চাঁদাবাজির আধিপত্যের দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এবং এলাকাবাসী দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন।
আধিপত্যের দ্বন্দ্বে খুন ছাত্রলীগকর্মী ইমন : পাহাড় দখল ও চাঁদাবাজির আধিপত্যের দ্বন্দ্বে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজীদ থানার আরেফিন নগর এলাকায় গত রবিবার রাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ চলাকালে সংগঠনটির কর্মী ইমন রনিকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী ও স্থানীয় থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, মূলত ছুরিকাঘাত করে ইমনকে শাসাতে চেয়েছিল একটি গ্রুপ। তবে ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্ষণে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। ইমন সরাসরি রাজনীতি না করলেও ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের অনুসারী ছিলেন বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা।
গত রবিবার রাতে মুক্তিযোদ্ধা কলোনিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শফির অনুসারী সোহেল এবং মহিউদ্দিনের অনুসারী আলিফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ইমনকে একা পেয়ে ছুরিকাঘাত করে এবং মাথায় শক্ত কাঠের কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ইমন এলাকায় সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানায়, রবিবার ইমন নিহত হওয়ার তিন দিন আগে এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন আহত হন।
নিহত ইমনকে সদ্য ঘোষিত বায়েজীদ থানা ছাত্রলীগের বিদ্রোহী কমিটির সদস্য বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগকর্মী পরিচয় দেওয়া মো. ইয়াছিন। তিনি বলেন, ‘তিন দিন আগেও মহিউদ্দিন গ্রুপের ছেলেরা আমাদের ওপর হামলা করে। গত রবিবার ইমনকে কবর দিয়ে ফেরার পথে কবরস্থান থেকে মসজিদের যাওয়ার পথেও হামলা হয়েছে। আহত আকাশের হাতে কোপ দিয়েছে মহিউদ্দিন গ্রুপের ছেলেরা। এর আগে আমাদের ওপর আরও একবার হামলা করা হয়েছে। আমরা পুলিশকে সব জানিয়েছি।’
বায়েজীদের আরেফিন নগরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত ইমন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদের অনুসারী সোহেল গ্রুপের কর্মী। তারা সবাই শফির অনুসারী। ইমনকে খুনের জন্য চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এমএম মহিউদ্দিনের অনুসারী মো. রিপন, মামুন ও ওহাবকে দায়ী করছেন প্রতিবেশীরা।
ইমনের মা আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার ছেলেকে চাঁদাবাজরা মেরে ফেলছে। সে সবসময় এসবের প্রতিবাদ করত। আমার ছেলেকে যারা মেরেছে তাদের যেন ফাঁসি হয়।’
বায়েজীদ বোস্তামী থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, ‘হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে এখনো মামলা হয়নি। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
আটক ছয়জন হলো সোহেল, রুবেল, লিটন, হযরত, কালু ও আহসান কবির।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বায়েজীদ বোস্তামী থানার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও আরেফিন নগর এলাকায় শিল্পকারখানা রয়েছে। এখানে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে বিভিন্ন গ্রুপ। নগরীর বায়েজীদের ভাসমান কাঁচাবাজার, বিভিন্ন মার্কেট, পাহাড় দখল ও গাড়ির স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করত দিদার, মহিউদ্দিন ও জসিম। গেল বছর অভিযানের মুখে আত্মগোপনে চলে যায় তারা। পরে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন যুবলীগ নেতা শফি, তার ভাই খালেক, কুদ্দুস। শফি ও মহিউদ্দিন দুজনই সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
বায়েজীদ তারা গেট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নওরোজ আলী বলেন, ‘এই এলাকায় খুনখারাবি হয় সব কারখানার চাঁদাবাজি, দোকানপাট থেকে টাকা তোলা এবং পাহাড় দখল নিয়ে। পুলিশ এসব দেখেও দেখে না। খুন হলে কয়েক দিন মাতামাতি এরপর আবার চলে মারামারি।’