আড়াই লাখ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ গ্রামীণ ব্যাংকের

দেশের ব্যাংক খাতে যখন ঋণ বিতরণে ভাটা, ঠিক তখনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি, যা দেশে কার্যরত অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আদায়ের দিক থেকেও সবচেয়ে এগিয়ে ব্যাংকটি। এসব ঋণের মধ্যে ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আদায় সম্পন্ন হয়েছে, যা বিতরণের প্রায় ৯৫ শতাংশ।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গ্রামের অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বকেয়া ঋণের পরিমাণ মাত্র ১৪ হাজার ২০১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংকিং খাতে হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি ব্যাংকের কোনো অভাব নেই। ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ লাখ ২১ হাজার ৭০৪ জন। এসব সদস্যের মধ্যে গৃহঋণ বিতরণ হয়েছে এক হাজার ২২৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এছাড়া ব্যতিক্রমধর্মী এক প্রকার ঋণ দিয়ে থাকে
ব্যাংকটি। সংগ্রামী সদস্যদের (ভিক্ষুক) মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এই টাকার মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপ্ত সংগ্রামী সদস্যের সংখ্যা ৮৩ হাজার ২১৩ জন।
উল্লেখ্য, গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থা এবং সামাজিক উন্নয়ন ব্যাংক। এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে এটি একটি স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত ভূমিহীন এবং দরিদ্র নারীদের পাঁচজনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গঠনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে এবং এ ঋণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে।
তথ্য বলছে, রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকটির মোট শাখার সংখ্যা ২ হাজার ৫৬৮টি। মোট আমানতকারী ৯২ লাখ ২১ হাজার ৭০৪ জন। বর্তমানে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮২৬টি কেন্দ্রের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে গ্রামীণ ব্যাংক। কভিড মহামারির মানবিক সহায়তা হিসেবে ২০ হাজার ৫৯২ জন সংগ্রামী সদস্যকে ত্রাণসামগ্রী ও নগদ টাকা বিতরণ করেছে।
সদস্য ও সদস্যের স্বামীদের জন্য ঋণ বিমা কর্মসূচি চালু করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। বিমা করা থাকলে সদস্য কিংবা স্বামী যে কেউ মারা গেলে ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব পরিবারের কাউকে নিতে হয় না। তহবিল দ্বারাই ব্যাংক তাদের ঋণ পরিশোধ করে দেন। উচ্চশিক্ষা ঋণ কর্মসূচির আওতায় ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরির জন্য ‘নবীন উদ্যোক্তা ঋণ’ কর্মসূচি চালু করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। এই কর্মসূচির আওতায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা বিতরণ করেছেন। এর বাইরেও গ্রামীণ ব্যাংক সহজ ঋণ, গৃহ নির্মাণ ঋণ, উচ্চশিক্ষা ঋণ, সংগ্রামী ঋণ এবং কেন্দ্র ঘর নির্মাণ ঋণÑএই পাঁচটি খাতে ঋণ দিয়ে থাকে।
চলিত অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিনা সুদে ৫৪ হাজার ৪৬৫ জন শিক্ষার্থীকে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা শিক্ষাঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। ২ হাজার ৪৬২ জন নবীন উদ্যোক্তাকে ৫০ কোটি ৭ লাখ টাকা, ভিক্ষুকদের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।