'শান্তি জিতলে, জিতবে দেশ' র অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, কেন?

‘শান্তিতে বিজয়’ ক্যাম্পেইন এর ওয়েবসাইট বলছে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সহনশীল রাজনৈতিক চর্চা বিকাশের পক্ষে। জনগণ বিশ্বাস করেন, সহিংসতা কখনও রাজনীতি কিংবা নির্বাচনের অংশ হতে পারে না। কিন্তু অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা ঘটেছে এবং নিরপরাধ সাধারণ মানুষ, দেশের সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ও নারীরা বারবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
‘শান্তিতে বিজয়’ ক্যাম্পেইন এর মূল উদ্দেশ্য হল দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল রাজনীতির সপক্ষে একত্রিত হবার মঞ্চ তৈরি করা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি করার জন্য সারাদেশে ‘শান্তিতে বিজয়’ ক্যাম্পেইনের আওতায় আয়োজিত হচ্ছে শান্তি-শোভাযাত্রা, নির্বাচনী প্রার্থীদের সাথে সংলাপ, রাজনৈতিক নেতাদের সাথে গোলটেবিল বৈঠক ও কর্মশালা। সেই সাথে দেশের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে শান্তিতে বিজয় কর্মসূচি। এই অনুষ্ঠানগুলোতে ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষক এবং স্থানীয় সুধী জনেরা একত্রিত হয়ে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চার সপক্ষে এক সাথে কাজ করার জন্য তরুণ প্রজন্ম ও রাজনৈতিক নেতাদেরকে উদ্বুদ্ধ করছেন।
জনগণ বিশ্বাস করেন যে শান্তিপূর্ণ রাজনীতি এবং নির্বাচনই বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে। তাই তাঁরা চান রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। সুতরাং, রাজনৈতিক নেতাদের সহিংসতাকে না বলার এখনই সময়, কারণ শান্তি জিতলেই জিতবে দেশ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম এরকম একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারণার আয়োজন করেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি সংগঠন ।
‘শান্তিতে বিজয়,শান্তি জিতলে জিতবে দেশ’ শীর্ষক এই জাতীয় ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠান আয়োজনে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে আমেরিকার দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি এবং ব্রিটিশ দাতা সংস্থা ইউকেএআইডি।
সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম এক কলামে লিখেছেন, গত ক’দিন ধরে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে শান্তির সপক্ষে একটা স্লোগানধর্মী বিজ্ঞাপনচিত্র মুহুর্মুহু দেখানো হচ্ছে। কিছু শিশুকিশোর তাদের শিক্ষাঙ্গন চত্বরে গান গেয়ে গেয়ে ‘শান্তি চাই শান্তি চাই’ বলে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে আওয়াজ তুলছে, যার মোদ্দা কথাটি আছে গানের শেষ লাইনে : ‘শান্তি জিতলে জিতবে দেশ’। অর্থাৎ নির্বাচনে কে জিতল কে হারল সেটার চেয়ে বড় কথা হলো, নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলো কি না সেটা। শান্তির জন্য কাঙাল এই দেশে ‘শান্তি জিতলে জিতবে দেশ’ কথাটি আমার কাছে মনে হয়েছে লাখ কথার এক কথা। বিজ্ঞাপনচিত্রটি কারা প্রচার করছেন, সরকার না বেসরকার, এর পেছনে কোনো মতলব-টতলব আছে কি না, আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ নির্মল বক্তব্যের আড়ালে কাউকে ঠেস দিয়ে কিছু বলা হচ্ছে কি না, এসব নিয়ে আমি মোটেই মাথা ঘামাতে চাই না। আমি শুধু এতেই খুশি যে বিজ্ঞাপনের কথাগুলো ভারি সুন্দর। সাধারণ মানুষের মনের কথা যেন প্রতিধ্বনিত হয়েছে এই বিজ্ঞাপনে। অশান্তি নয়, শান্তির জয়গানে মুখরিত এই বিজ্ঞাপন, যে শান্তি সারা দেশের মানুষের প্রাণের দাবি।
তিনি লিখেছেন, ২০১৪ সালের একটি চরম হতাশাব্যঞ্জক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মানুষ বড় আশা করে আছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা তাদের অতি আদরের, নিরতিশয় আকাঙ্ক্ষার ভোটটি নির্বিবাদে যাকে খুশি তাকে দেবে; নির্বাচন হবে সত্যিকার অর্থে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। জাতীয় সংসদের অর্ধেকের বেশি আসনে গেলবারের মত অনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আসীন হবেন না। একটি অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে এবারের নির্বাচনে। এবং ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ী বিজিত সবাই বলবে, ‘না, নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। একটি খুবই সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে এবার।’
জানা গেছে, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাল এর রাজনৈতিক ফেলো ও কো-মাষ্টার ট্রেইনার, আওয়ামীলীগ নেতা ফারহাদ নাঈম।