ঢাকা শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


রাজনীতির ময়দানে মাশরাফি কেন ?


২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:২৪

আপডেট:
১৮ মে ২০২৪ ২২:১১

আসিফ তালুকদার

মাশরাফি বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। প্রায় দুই দশক যাবৎ তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক রকম রাজত্ব করে চলেছেন। 
আইপিএল খেলেছেন, আভ্যন্তরীণ অনেক ক্রিকেট লীগ খেলেছেন, আবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিয়মিত বেতন-ভাতা, বিশেষ উপলক্ষ্যে ঘোষিত পুরষ্কার সব কিছু মিলিয়ে আমার মনে হয় মাশরাফি আর্থিক দিক থেকেও অনেক সচ্ছল। 
কিন্তু অন্যান্য ক্রিকেটারদের থেকে মাশরাফির প্রতি বাঙালির সকল শ্রেণি পেশার মানুষের আবেগটা একটু বেশি কাজ করে। 
এর পেছনের অন্যতম কারন হলো বারবার ইনজুরিতে পড়ে পায়ে একাধিক অস্ত্রপচার নিয়ে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে বারবার ফিরে আসার অদম্য ইচ্ছে শক্তি এবং তা বাস্তবে প্রমাণ করা।

আমার কাছে মনেহয় ১৬ কোটি মানুষের ১৬ কোটি মন মাশরাফির মাঝে একজন অদম্য যোদ্ধাকে খুঁজে পায়, যার একটাই লক্ষ্য হলো স্বল্প সামর্থ নিয়ে ইচ্ছেশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বুকের ভেতর পাহাড় সমান স্বপ্ন-সাহস নিয়ে বিজয়ের হাসি হাসা।
মনে করেন ৬ মাস আগে মাশরাফিকে আনফিট দেখিয়ে বাংলাদেশ টিম থেকে বাদ দেওয়া হলো এবং ঘোষণা করা হলো মাশরাফিকে আর বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমে খেলতে দেওয়া হবে না।
আচ্ছা ভাই, দলমত ভুলে গিয়ে চোখ বুজে একটু ভাবুনতো তখন কী হতো ? তখন সারা বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হয়ে যেতে মাশরাফির পক্ষে। এমনকি সরকার পতনের দাবিও তোলা হতো। দেখুন মাশরাফির কতো জনপ্রিয়তা।

ক্রিকেট বিশ্বে মাশরাফি আইডল যা বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে ইতোমধ্যে প্রমাণিত। কয়েকটা উক্তি শুনতে চান ? আচ্ছা তাহলে শুনুন; মাশরাফি সম্পর্কে ব্রায়ান লারা বলেছেন
"আমার দুর্ভাগ্য, আমি মাশরাফির সাথে এক টিমে খেলতে পারিনি।" গ্রেন মেগ্রা বলেছেন "পৃথিবীতে দুই ধরনের বোলার আছে। এক মাশরাফি আর অন্যটি বাকি সব।" স্যার ভিভ রিচার্ডস বলেছেন, "আমার সৌভাগ্য, আমাকে কোনোদিন মাশরাফির বল মোকাবেলা করতে হয় নি।" মাশরাফির ব্যাপারে ইঙ্গিত করে এডাম গিলক্রিস্ট বলেছেন "অধিনায়ক তো অনেকেই আছেন, 'মা' আছেন কয়জন ?" ভিভিএস লাক্সম্যান বলেছেন "আপনি যদি মাশরাফির পুরো এক ওভার স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে ফেলতে পারেন তার মানে একদিন আপনি লিজেন্ড হবেন।" ইংল্যান্ডের সাবেক ক্যাপ্টেন নাসের হোসাইন বলেন "নেতা, মানুষ আর খেলোয়াড় এই ৩টি শব্দ যোগ করলে মাশরাফির মতো কোনো ক্রিকেটার এর আগে কোনোদিন ক্রিকেট বিশ্ব দেখেনি।" দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক শন পলক বলেন "তোমরা আমাকে একজন মাশরাফি দাও, আমি তোমাদের এগারোটা “সোনার টুকরো” (ক্রিকেটার) উপহার দিবো।"

এখন ভাবুন মাশরাফির খ্যাতি দেশকে অতিক্রম করে বিশ্ব ক্রিকেটে ছড়িয়ে পড়েছে। মনে প্রশ্ন আসে না কখনো যে মাশরাফির কী নেই ? অর্থ, বিত্ত, সুনাম, খ্যাতি, ক্ষমতা ? কী নেই ? ভেবে দেখুন মাশরাফির সব কিছুই আছে।

এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কেন মাশরাফি রাজনীতিতে আসলেন ? বিষয়টা হলো এমন প্রশ্ন আমাদের মনে দানা বাধার বেশ কিছু কারন রয়েছে। আমরা আমাদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখে বড় হই তাহলো রাজনীতি মানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থ বিত্ত এবং ক্ষমতার মালিক হওয়া। একসময় যাদের কিছুই ছিলনা তারা দেখা যায় রাজনীতি অঙ্গনে এসে বেশ অর্থ বিত্তের মালিক বনে যান। বুঝলাম সমসাময়িক রাজনীতিতে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলই মূল লক্ষ্য থাকে। আমার প্রশ্ন এখানে না, আমার প্রশ্ন হলো তাহলে সব কিছু থাকার পরেও মাশরাফির মতন একজন দেশ-এবং বিশ্ব নন্দিত তারকা কেন রাজনীতিতে আসলেন ? রাজনীতি থেকে মাশরাফির কী পাওয়ার আছে ?

শুনেন, আমার আপনার মতন রাজনৈতিক ব্যক্তির রাজনীতির পেছনে ক্ষমতা বা অন্যান্য লোভ থাকতে পারে। কিন্তু মাশরাফির মতন ইতোমধ্যে ক্ষমতাবান এবং আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা রাজনীতি আসেন রাজনীতির আসল দীক্ষা নিয়ে। 
তারা রাজনীতিতে আসেন কিছু নেওয়ার জন্য নয় বরং ইতিবাচক রাজনীতির দ্বারা মানুষের জন্য কিছু করার প্রয়াস নিয়ে। শুধু মাশরাফি নন, বাংলাদেশের প্রত্যেক তারকা যাদের কোটি কোটি মানুষ অনুসরণ করেন তাদের রাজনীতির অঙ্গনে আসা উচিৎ। তাহলেই দেখবেন রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।

রাজনীতি খারাপ, রাজনীতি নষ্টদের দখলে চলে যাচ্ছে, রাজনীতির বারোটা বেজেছে, রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন করা উচিৎ ইত্যাদি বলতে বলতে তো চায়ের কাপ থেকে টকশোর কফি কাপে ঝড় তুলে ফেলেন , আর মুখে ফ্যানা তুলে ফেলেন তাহলে মাশরাফির মতন একজন ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব রাজনীতিতে আসলে নাক সিটকান কেন ? ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব ছাড়া, রাজনীতিবিদ ছাড়া রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন চাইবেন তা কী করে সম্ভব ? ভেবে দেখেছেন কী ? আমি ভেবে দেখেছি, এবং আমার মনেহয় মাশরাফির মতন ইতিবাচক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠিত মানুষদের রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

শুনুন, সাধারণ জনগণ রাজনীতির অপ সংস্কৃতি দেখে নাক সিকটায় কিন্তু এর ইতিবাচক পরিবর্তনে নিজে কোন ভূমিকা রাখে না। তারা ঠিকই নিজে মাপে কম দিয়ে অন্যের কাছ থেকে মাপে বেশি আনতে চায়। আর সচেতন সাধারণ জনগণ রাজনীতির অপ সংস্কৃতি দেখে নাক না সিটকিয়ে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে এবং নিজেরা রাজনীতি সচেতন হন। সচেতন সাধারণ মানুষের উচিৎ রাজনীতিতে মাশরাফির মতন ইতিবাচক ব্যক্তিত্বের স্বাগত জানানো; অনুপ্রেরণা দেওয়া। সচেতন জনগণ সপ্ন দেখেন এমন মাশরাফিদের হাত ধরেই বদলে যাবে রাজনীতি, বদলে যাবে দেশ।

সাধারণ সম্পাদক , শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়