ঢাকা রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক একটি মানবিক বিশ্ববিদ্যালয়


১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৫

আপডেট:
১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৫

শান্তা তাওহিদা

আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে’...২৮নভেম্বর, ২০১৮ একটি অনলাইন খবরের মাধ্যমএই শিরোনামের প্রতিবেদনটি চোখে পড়ল। যেখানে আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে’ এই কথাটি উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানীকে একটি চিঠি দিয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেরএক শিক্ষার্থী।জরিমানা মওকুফের আবেদন শিরোনামে একটি চিঠিতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রক্টর গোলাম রব্বানী। চিঠিতে ওই শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘আমি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র। চলতি সেমিস্টারের একটি কোর্সের জন্য ডিনস কমিটি আমাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। আমার বাবা হার্ট অ্যাটাকের রোগী, যার ওপর পরিবারের সবাই নির্ভরশীল। তার পক্ষে এত টাকা দেয়া সম্ভব নয়। আগামী শনিবারের ওই পরীক্ষা আমি টাকার অভাবে দিতে পারব না, তাই হতাশায় ভুগছি। আর এই হতাশা থেকে আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।’ প্রতিবেদনটিতে এওউল্লেখ ছিল যে, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় ওই কোর্সটির পরীক্ষা দিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করে ডিনস কমিটি।

...প্রসঙ্গত বলতে হয় যে,এই মুহূর্তে বাংলাদেশ নানান অস্থিরতা ও নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক অস্থিরতার বাইরেও পরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনায় আমরা সত্যিকার অর্থেই মর্মাহত । ঠিক এই সময়ে বিষয়টি সকলের নজরে আনার জন্য সেই অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। একটি পত্রিকার কাজ শুধু খবর প্রকাশ নয়, এরপাশাপাশি তার কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে।বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো এইবিষয়টির চর্চায় গুরুত্ব দিচ্ছে তা আশা জাগায়।

এতো গেল সংবাদ মাধ্যমের মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের প্রচেষ্টার কথা। এর পাশাপাশি যে বিষয়টি বলার জন্য এত কিছু বলা তা হল, একজন মো: সোহেল রানার নিজের অসহায়ত্বের কথা, নিজের হতাশার কথা আমাদের অবহিতকরণের দিকটি । এখন আমাদের করনীয় কী?

আমাদের দায়িত্ব হল, অভিভাবক হিসেবে আমাদের সন্তানদের অভয় দেয়া, তাদের পাশে থাকা। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলা‚ বাবা আমরা আছি তোমার পাশে। তুমি একা নয়। জীবনের ক্ষণিকের অপ্রাপ্তির জন্য সামান্য হতাশ হলেই আত্মহত্যা করার মত চিন্তাগুলো মাথায় আনা যাবে না। মাথায় যদি আসেও তাতেও কোন সমস্যা নেই। তুমি তোমার পরিবারকে জানাও তোমার কেমন লাগছে। তুমি তোমার কাছের মানুষটাকে বলো তোমার কষ্টেরকারণ। তোমার একাডেমিক ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হলে তোমার বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টাকে জানাও। তোমার হলের মনোবিজ্ঞানীর সাথেমন খুলে কথা বলো। তুমি তোমারবিভাগের শিক্ষকের কাছে গিয়ে তোমার অসহায়ত্বের কারণ বুঝিয়ে বলতে পারো। তুমি বিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান কেন্দ্রে গিয়েও পরামর্শ নিতে পারো। এবং অবশ্যই তুমি সন্তান হিসেবে তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রক্টর স্যার এর কাছে যেতে পারো। এমনকি তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক মাননীয় উপাচার্য স্যারের কাছে ওযাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমাদের কাছে তুমি মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি, যারা আমাদের কাছে সন্তানের মত। বিশ্বাস করো এই ‘তুমি’ আমাদের কাছে সত্যিকার অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেই কথাটিই বলতে চাচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রক্টরএর বরাবর সোহেল এর এই চিঠি তাই আমার কাছে খুবই আশাব্যঞ্জক । এখন বাদ রইল যেটি তা হল, হাজার হাজার সোহেল এর কাছে আমাদের ভরসার জায়গাটি বুঝিয়ে দেয়া। বুঝিয়ে দেয়া, আমরা আছি আমাদের সন্তানদের পাশে। সন্তান যদি ভুল করে আমরা তাকে বুঝতে চেষ্টা করতে চাই। তাকে ভুল শোধরানোর সুযোগ দিয়ে তাকে সঠিক পথ দেখাতে চাই। মানুষ নিয়ম করে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য। তাই একটি বিশেষ পরিস্থিতি উদ্ভূত হওয়ায় যে নিয়ম দ্বারাকোন শিক্ষার্থীর সুন্দর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়েপরে সেই নিয়মকে আমারা মানবিক ভাবে বিবেচনা করতে চাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের জন্ম দিয়েছে। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের চেতনার জন্মভূমির আকাশ হতাশার কালো মেঘে ঢেকে না যাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক একটি মানবিক বিশ্ববিদ্যালয় ।

শান্তা তাওহিদা
সহকারি অধ্যাপক
যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়