ঢাকা রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


একজন ইমরান মাহফুজের গল্প


২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:২৫

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০০:১৬

একজন ইমরান মাহফুজের গল্প

ছাইফুল ইসলাম মাছুম

গ্রামের অন্য দশজন ছেলের মতোই তার বেড়ে উঠা। পরিবারের ইচ্ছা ছেলে বড় হয়ে গ্রাম্য ডাক্তার হবে। পরিবারের আগ্রহে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়াকালীন ভগ্নিপতির ফার্মেসীতে নিয়মিত বসতেন। অল্পদিনে হয়েও উঠেন গ্রাম্য ডাক্তার। সেই ক্ষুদে গ্রাম্য ডাক্তার একদিন তরুণ গবেষক হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে নিজের নাম লেখাবেন, স্বমহিমায় করে নিবেন নিজের জায়গা, এমনটি হয়তো কেউ ভাবেনি। বলছিলাম তরুণ গবেষক ইমরান মাহফুজের কথা।


ইমরান মাহফুজের জন্ম কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে ১০ অক্টোবর। বাবা নুরুল আলম শিক্ষক। মা বিলকিস বেগম গৃহীনি। বাবা ভালো পুথিঁ পাঠ করতে পারতেন, বাবার পুথিঁ পাঠ ইমরানের মনো জগতে এক দারুন প্রভাব পেলে। ছোট বেলায় সময় দিতেন বাবার অস্থায়ী মুদি দোকানে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন পরিবারের ইচ্ছাই গ্রাম্য ডাক্তার হওয়ার বাসনায় পড়ালেখার পাশাপাশি নিয়মিত বসতেন ভগ্নিপতির ফার্মেসিতে। পল্লী চিকিৎসক ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলাম মনিরের অনুপ্রেরণায় লেখালেখিও শুরু করেন। এইচএসসি পাশের পর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উর্ত্তীন হয়েও পরিবারের অমত থাকায় ভর্তি হতে পারেননি। বাবা মা চাইতেন পরিবারের কাছেই থাকুক ইমরান, গ্রাম্য ডাক্তার হয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিক সে।


কিন্তু উচ্চাকাঙ্খী ইমরানের স্বপ্ন অনেক বড়, জীবনে কিছু একটা করতেই হবে। এমন ভাবনা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সম্বল মাটির ব্যাংকে জমানো ২৭০ টাকা।

 

ইমরান মাহফুজ বলেন, মেইড ইন জিঞ্জিরা টাইপের জীবন নিয়ে লেখালেখির সূত্রে পরিচয় এমন একজনের সাথে চট্টগ্রামে, টানা ৯ দিন ছিলাম। কারো সাথে কোনো যোগাযোগ নেই আমার। আমি যেন এক অন্য মানুষ! ভ্রাম্যমান হকার। চট্রগ্রাম ছেড়ে এবার ঢাকার পথে পাড়ি জমাই। আবারো অন্য ঠিকানায়। ঢাকায় প্রায় ১২ দিন। নিখোঁজ ইমরান। পরিবারের উদ্বেগ বাড়ে, নিখোঁজ সংবাদ ছাপতে স্থানীয় সংবাদপত্র অফিসে যায় বাবা। মন আর মানছিল না ২১তম দিনে বাড়ির পথে পা বাড়াই।’ পরে স্থির করলেন রাজধানীতেই স্থায়ী হবেন তিনি। আবার পাড়ি জমান ঢাকায়। মতিঝিলে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় মাত্র ৫০০ টাকা বেতনে চাকরি নেন। পাশাপাশি দু হাতে লিখতে থাকেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। পাশাপাশি ২০১০ সালে নিজ উদ্যাগে বের করেন কালের ধ্বনি। এই পর্যন্ত ৭টি সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে। সবার কাছে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন | ফেব্রুয়ারি ২০১৫-তে প্রকাশিত ৫ম সংখ্যাটি । রাজনীতিক-সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদকে নিয়ে করেছেন কালের ধ্বনির বিশেষ সংখ্যা। যেটি এমন আলোচনায় আসছে যা তিনি নিজেও ভাবেন নি। এবং পরের সংখ্যাটি নজরুল গবেষক, শিখা পত্রিকার প্রকাশক ও কবি আবদুল কাদিরকে নিয়ে নিয়ে। এখন কাজ করছেন জসীম উদ দীনকে নিয়ে। আর এই পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থ ৭টি। প্রথম যৌথভাবে সম্পাদিত ‘কষ্টের ফেরিওয়ালা: হেলাল হাফিজ’ (বিভাস) , আবুল মনসুর আহমদ স্মারকগ্রন্থ (প্রথমা প্রকাশনা), জীবনশিল্পী আবুল মনসুর আহমদ (সম্পাদনা স্টার বুকস), ‘মুক্তিযোদ্ধ: অজানা অধ্যায়’ (গবেষণা, জাগৃতি), ‘দীর্ঘস্থায়ী শোকসভা’ (কবিতা, ঐতিহ্য) , মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণাগ্রন্থ ‘লালব্রিজ গণহত্যা’ (১৯৭১: গণহত্যা ও নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট) ও দ্য ইকুয়েশন অব লাইফ (কালের ধ্বনি) | তাঁর আলোচিত কাজ ‘দুর্লভ এই আলো’ নামে একটি তথ্যচিত্র, যেটি লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের জীবন ও কর্ম নিয়ে ইমরান মাহফুজ নির্মাণ করেছেন। এই সব কাজে, এই সৃজনশীল তরুণ ইতোমধ্যেই তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘আবুল মনসুর আহমদ গবেষণা পুরস্কার ২০১৫’, ‘শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন স্মৃতি পুরষ্কার ২০১৩’, সেন্টার ফর ন্যাশেনাল কালচার থেকে ‘আবুল মনসুর আহমদ পুরষ্কার ২০১৮সহ পেয়েছেন অনেক পুরষ্কার ও সম্মাননা। শুধু পুরষ্কার বা সম্মাননা নয় পাঠকদের ভালোবাসার পাশাপাশি মিলেছে অনেক প্রাপ্তিও। যেমন তাঁর আবুল মনসুর আহমদ স্মারকগ্রন্থ ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের পাঠ্যসহায়ক গ্রন্থ হিসাবে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে স্থান পেয়েছে। সম্প্রতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে কলকাতার নেতাজী সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশ ভাগ ও সমকালীন বাংলা ইতিহাস ও সাহিত্য পাঠ্য তালিকায় ইমরান মাহফুজ সম্পাদিত ‘আবুল মনসুর আহমদ স্মারকগ্রন্থ যুক্ত হয়েছে।

 

দ্য ডেইলি স্টার বুকস এর সমন্বয়ক ইমরান মাহফুজ নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, আমাদের দেশের প্রখ্যাত লেখক সাহিত্যিকদের নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ খুব কমই রয়েছে। আমি সেসব নিয়ে কাজ করতে চাই। আরো বলেন, ‘আজীবন লেখালেখির সাথে যুক্ত থাকতে চাই। জানতে চাই। জানাতে চাই। জীবনকে উৎযাপন করতে চাই।