ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫, ৪ঠা আষাঢ় ১৪৩২


বিসিবি

সভাপতি পদে পরিবর্তন চাইলেন উপদেষ্টা


২৯ মে ২০২৫ ১৩:১২

আপডেট:
১৭ জুন ২০২৫ ২০:২২

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ

বিসিবি সভাপতির পদে ফারুক আহমেদের অবস্থান টালমাটাল, এমন গুঞ্জন দেশের ক্রিকেটে ভেসে বেড়াচ্ছিল কয়েক দিন থেকেই। সেটিই এবার প্রকাশ্য হয়ে উঠল। বিসিবি সভাপতির দায়িত্বে পরিবর্তন চান বলে ফারুক আহমেদকে জানিয়ে দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে বিসিবি সভাপতি জানালেন, তিনি এখনও কিছু ভাবেননি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই সময়ের বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। পরে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন দেশের বাইরে থেকে। গত ২১ অগাস্ট যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে সভাপতির দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ।

তবে বুধবার রাতে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। আলোচনার বিস্তারিত বলতে চাইলেন না ফারুক।

“উপদেষ্ট বলেছেন, বোর্ডের শীর্ষ পদে তিনি পরিবর্তন চান। আমি এখনও কিছু ভাবিনি। মাত্রই গতকাল রাতের ব্যাপার… কিছুটা সময় নিতে চাই।”

ফারুক আহমেদের ‘ভাবনা’ মানে পদত্যাগ করা। নিয়ম মানলে আপাতত এটা ছাড়া বোর্ড সভাপতি বদলের কোনো সুযোগ নেই। কারণ বোর্ড পরিচালক হয়ে এরপর অন্য পরিচালকদের ভোটে গঠনতন্ত্র মেনেই সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। সরকার বা সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ তাকে সরিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। বরং সরকারের হস্তক্ষেপের প্রমাণ পেলে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসতে পারে বাংলাদেশের ওপর। অতীতে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রে এমন নজির আছে। ফারুক নিজে থেকে পদত্যাগ না করলে তাই মন্ত্রণালয়ের কিছু করার সুযোগ সামান্যই।

এই মুহূর্তে অবশ্য বড় প্রশ্ন পরিবর্তন চাওয়ার পেছনের কারণ নিয়ে। প্রধান নির্বাচক হিসেবে দুই দফায় বিসিবির অধীনে চাকরি করেছেন ফারুক। ২০১৬ সালে সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর বোর্ডের ধারেকাছে ছিলেন না তিনি। ব্যস্ত ছিলেন মূলত ব্যবসা নিয়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফারুকের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে সরাসরি পরিচালক করে তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ৯ মাস পরই কেন চিত্র এতটা বদলে গেল, এটা নিয়েই এখন কৌতূহল।

ফারুকের বিরুদ্ধে অবশ্য আর্থিক অনিয়মসহ কিছু অভিযোগ উঠেছে গত কিছুদিনে। গত বিপিএলে নানা অব্যবস্থাপনা নিয়েও তুমুল বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাকে। সেসময়ও একবার গুঞ্জন উঠেছিল, কোনো প্রক্রিয়ায় তাকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। তবে বিপিএলে এবার মাঠে প্রচুর দর্শক উপস্থিতি ও টিকেট বিক্রির আয়ে রেকর্ড গড়েও প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি।

আগামী অক্টোবরের মধ্যে বিসিবি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। কয়েক মাস ধরেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতিসহ সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ফারুক। এর মধ্যেই তার জন্য ধাক্কা হয়ে এলো উপদেষ্টার চাওয়া।

পদত্যাগ না করলে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে তিনি দায়িত্ব কতটা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারবেন, সেটিও এখন প্রশ্ন। শনিবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের একটি পূর্ব নির্ধারিত সভা আছে। এখন তা রূপ নিয়েছে মহাগুরুত্বপূর্ণ এক সভায়। ফারুক যদিও তেমন কিছু বলতে চাইলেন না সভা নিয়ে, “এই সভায় আলোচনার অনেক বিষয়ই আছে। আমার ব্যাপারটি এখানে মুখ্য নয়।”

শেষ পর্যন্ত ফারুক আহমেদ পদত্যাগ করলে তার জায়গায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়েন পরিচালক হবেন আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তাকে পরিচালক হওয়ার প্রস্তাব বেশ কদিন আগেই দেওয়া হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

পরিচালক হওয়া মানে যে বোর্ড সভাপতি হওয়ার দিকেও এগিয়ে যাওয়া, সেটিও পরিষ্কার। যদিও আমিনুল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব নিলে সেটি স্রেফ আগামী বিসিবি নির্বাচন পর্যন্তই হবে। দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব নেওয়া বা বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে তার নেই।