কিছুতেই মাথা নত করব না : নুর

২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর। ভোট কারচুপি, আগের রাতে ব্যালটে সিল, হামলা, বিভিন্ন হলে ভোটারদের বাধা, প্রার্থীদের মারধর এমনতর নানা অনিয়মের পরও তার বিজয় ঠেকাতে পারেনি কেউ। ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের প্রার্থী ও বর্তমান সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভনকে দুই হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে ভিপি হন নুর। সংসদে অভিষেক নাকি পুনর্নির্বাচন কোনপথে নুর? বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
দৈনিক আমাদের দিন : নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা কেমন ছিল?
নুরুল হক নুর : ছাত্র সংসদের একটি ভোট হলো। সেখানে আমরা দেখলাম ছেলে ও মেয়েদের হলে ব্যালটে সিল মেরে রাখা হয়েছে। হলগুলো বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের কাছে
অলিখিতভাবে ইজারা দিয়েছে। হলে নামেমাত্র কিছু শিক্ষক ও প্রাধ্যক্ষ রয়েছেন। তারা দায়িত্ব পালন করতে পারে না। আওয়ামী লীগ থাকলে ছাত্রলীগ এবং বিএনপি থাকলে ছাত্রদল হলে সিটসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এরকম একটা বদ্ধ পরিবেশে নির্বাচনটা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমাদের অনেকগুলো দাবি ছিল। একটিও প্রশাসন মানেনি। এখন আমরা নির্বাচনে কেন এলাম, এটাই জাতিকে দেখাতে চেয়েছিলাম। এই প্রশাসন কতটা লেজুড়বৃত্তিক, রাজনীতির কারণে ছাত্রদের জলাঞ্জলি দিতে হয়, ভোটের মাধ্যমে আমরা সেটা দেখিয়েছি।
দৈনিক আমাদের দিন : আপনি পুনর্নির্বাচন দাবি করছেন, আবার দায়িত্ব পালন করতে চাইছেন, কীভাবে?
উত্তর : যেহেতু পুনর্নির্বাচনের একটি ব্যাপার চলে আসছে। মিডিয়ার মাধ্যমে অসংখ্য কারচুপির খবর এসেছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে এই কলঙ্ক আমাদের কাম্য ছিল না। বহু কারচুপি করেও চেষ্টা করেছিল সব পদগুলোতে বিশেষ করে যারা নির্বাচন সংশ্লিষ্টতায় ছিল তাদের পছন্দের সংগঠনকে দিতে। কিন্তু তারা দেখেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাকে এবং আমার প্যানেলের আখতারকে ভোট দিয়েছে। এই দুই পদে তারা কারচুপি করে, নকল সিল দিয়েও সেটার সমকক্ষ করতে পারেনি। এজন্য তারা আমাদের দুটি পদে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেছিলাম এই দুটি পদ ছাড়া নির্বাচন দিতে। কিন্তু পরে দেখলাম যেসব প্যানেল এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল, সবাই বলেছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস কলঙ্কিত করার নির্বাচন হবে মানা হবে না। পুরো নির্বাচন দিতে হবে। আমিও ভেবেছি যদি পুনর্নির্বাচনও হয় তাহলে তারা দ্বিগুণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে আমাকে। তাই যারা দাবি করছে তাদের সাথে আমি ভিপি হিসেবে একমত পোষণ করে পুনর্নির্বাচন দেওয়া দরকার বলে মনে করি।
দৈনিক আমাদের দিন : সবাই বলছে, ছাত্রলীগের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করেই নির্বাচিত হয়েছেন।
উত্তর : এ ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করি। ভবিষ্যতেও করব। কোনোকিছুতেই মাথা নত করব না।
দৈনিক আমাদের দিন: শোভন আপনাকে অভিনন্দন জানাতে এলে আপনি কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন এবং একসাথে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। পরে আবার সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।
উত্তর : এখানে আমাকে ভুল বোঝা হয়েছে। আমি একবারের জন্যও দুই ধরনের বক্তব্য দেইনি। আর আমি তো ছাত্রলীগের মতো না। শোভন এসেছিলেন। আমি তার সাথে ভালো আচরণ করেছি। তার মানে এই নয় আমি সব মেনে নিয়েছি। একদিন আগে ওরা আমাকে মেরেছে। আর পরে এসে কোলাকুলি করলেই সব মিটে যায় না।
দৈনিক আমাদের দিন : কারচুপি হয়েছে। তারপরও আপনি নির্বাচিত হয়েছেন। ভোটও পেয়েছেন অনেক। বেশ বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। কীভাবে সম্ভব হলো?
উত্তর : আপনারা জাতীয় নির্বাচনেও দেখবেন কারচুপি সত্ত্বেও কিছু প্রার্থী জয়ী হয়। কুয়েত মৈত্রী হলে ব্যালট উদ্ধার করা হয়েছে। রোকেয়া হলে যেখানে ভোটকেন্দ্র সেখানে ব্যালট না রেখে অন্য জায়গায় ব্যালট রাখা হয়েছে। আমরা শুনেছি অন্য জায়গায় ব্যালটে সিল মারা হচ্ছে। হলের প্রাধ্যক্ষকে বলেছিলাম আমরা এই রুমটা দেখতে চাই। বুথ ছাড়া নির্বাচনী সরঞ্জাম রাখা যাবে না। আমি যখন বলেছি তিনি আমার সাথে রাফ বিহেভ করেছে। উনি আমাদের লাঞ্ছিত করে, আমাদের মারার জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে এসেছেন। ছাত্রলীগের লেডি মাস্তানরা আমার ওপর হামলা করেছে। তারপরও আমাদের হারাতে পারেনি। এটা হয়েছে আমাদের ওপর তাদের আস্থার কারণে।
দৈনিক আমাদের দিন : রোকেয়া হল এবং কুয়েত মৈত্রী হল ছাড়া তো বাকি হলগুলোতে ঠিকঠাকভাবে ভোট হয়েছে। আর ওই ঘটনা নিয়ে অলরেডি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উত্তর : অন্য হলগুলোতে আমাদের ঢুুকতে দেওয়া হয়নি। নকল লাইন তৈরি করা হয়েছে। স্যার এ এফ রহমান হলে ঢুুকতে দেওয়া হয়নি। এস এম হলে যারা বাইরে থেকে এসেছে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হলে গিয়েছি, সেখানেও অতিরিক্ত লাইন করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখি অলটাইম একটি মাস্তান বাহিনী রাউন্ড দিচ্ছে। এরা ছাড়া অনাবাসিকরা যাতে ভোট দিতে না পারে, সে ব্যবস্থা করেছে। এটা তো জাতীয় নির্বাচন না যে পুলিশ আসবে। কিন্তু শিক্ষকরা তো দায়িত্ব নিয়েছেন। শিক্ষকরা শুধু বুথের ওইখানে ছিলেন। বাইরে কী হচ্ছে সেটা দেখছেন না। মিডিয়া ঢুুকতে দেওয়া হয়নি।
দৈনিক আমাদের দিন : এখন অভিষেকের জন্য কোনো ধরনের চাপে আছেন?
উত্তর : কোনো চাপই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা জোটগতভাবে আলোচনা করে কর্মসূচি ঠিক করি। বিশ^বিদ্যালয়ের মর্যাদা ক্ষুণœ হবে এমন কিছু করব না।