ঢাকা বুধবার, ৭ই মে ২০২৫, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩২


উসকানিদাতা শতাধিক ফেইসবুক আইডি শনাক্ত


২২ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:১১

আপডেট:
৭ মে ২০২৫ ২২:১০

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ফেইসবুকে মহানবী (সা.)-এর অবমাননা করে বক্তব্য প্রচারের সূত্র ধরে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে একদল মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। গত রবিবার পুলিশের ওই সংঘর্ষে চারজন নিহত ও পুলিশসহ দেড়শতাধিক আহত হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনায় উসকানিদাতা হিসেবে শতাধিক ফেইসবুক আইডি শনাক্ত হয়েছে। আইডিগুলো যাদের তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আরও অনেকের আইডি আছে গোয়েন্দা নজরদারিতে। কাজ চলছে উসকানিমূলক পোস্ট ও লিংক সরানোর।

আলোচিত ওই ঘটনা তদন্তে ভোলা জেলা পুলিশকে সহায়তা করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও ঢাকা

মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ। গতকাল সোমবার ভোলা জেলা পুলিশ ও ডিএমপির সিটিটিসির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য নামে যে ব্যক্তির ফেইসবুক আইডি থেকে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট ছড়ানো হয়েছে তাকেসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

পাশাপাশি তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ফেইসবুক আইডির ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ভোলার জজ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, তিনজন আসামির রিমান্ড ও তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতির আবেদন আদালতে পেশ করা হয়েছে। এখনো শুনানির দিন ধার্য হয়নি। শুনানি ও আবেদন মঞ্জুর না হওয়া পর্যন্ত আসামিরা জেলহাজতে থাকবে। ঢাকার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ভোলায় সংঘর্ষের নেপথ্যে হ্যাক হওয়া আইডির পোস্ট ছড়িয়ে যারা ধর্মপ্রাণ মানুষদের উত্তেজিত করেছেন কিংবা এখনো করছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনামুল হক বলেন, বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যর ফেইসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল মর্মে জিডি করেন শুক্রবার। তারপর ওই হ্যাক ছোটানোর জন্য (আইডি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য) শাকিল নামে এক ব্যক্তি তার কাছে ২ হাজার টাকা দাবি করেন। যে নম্বর দিয়ে টাকা দাবি করা হয় ওই নম্বরের সূত্র ধরে ইমন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইমন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি পটুয়াখালীর একটি কলেজের শিক্ষার্থী। বছরখানেক আগে তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। ওই সময় তিনি তার দাদির জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে একটি সিম তুলেছিলেন। সেই সিমসহ তার মোবাইল ফোন বিক্রি করে দেন শাকিল নামে তারই এক বন্ধুর কাছে। পরে পুলিশ শাকিলকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল জানিয়েছেন, তিনি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকরি করেন। বিপ্লবের আইডি হ্যাক করেননি বলে দাবি করেছেন তিনি।

ভোলার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিপ্লব, শাকিল ও ইমনের বাড়ি বোরহানউদ্দিন উপজেলায়ই। একই বিদ্যালয়ে পড়ার কারণে শাকিল ও ইমন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ। আবার শাকিল ও বিপ্লবের বাড়ি একই গ্রামে পাশাপাশি। কাজেই তাদের মধ্যে আগে থেকেই কোনো বিরোধ আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ওসি এনামুল হক আরও জানান, বিপ্লব ও শাকিলের ব্যবহৃত সিম, মোবাইল ফোন ও ফেইসবুক আইডি এবং তাদের বিভিন্ন পোস্ট ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির কাছে পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে আদালতের কাছে। অনুমতি পাওয়ার পর ওইসব আলামত ঢাকার মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

 

উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : ডিএমপির সিটিটিসির একাধিক কর্মকর্তা  জানান, ভোলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। ইতিমধ্যে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করার দায়ে বিভিন্ন এলাকার শতাধিক ফেইসবুক ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের দেওয়া বিভিন্ন পোস্ট ও লিংক ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ওই ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্তের জন্য ফেইসবুকসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্র্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

ডিএমপির সিটিটিসির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়া  বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী বেশকিছু পোস্ট ও লিংক সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা ফেইসবুক কর্র্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এছাড়া ওইসব আইডি পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ভোলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।