ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২


বিভক্ত কেন্দ্রীয় নেতারা

সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে শেষ মুহুর্তে চলছে দৌড়ঝাপ


১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:১৩

আপডেট:
১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:৩২

 

*সাধারণ সম্পাদক নিয়ে বিভক্ত কেন্দ্রীয় নেতারা

*পছন্দের লোককে নেতা বানানোর বিভিন্ন কৌশল নিয়ে মাঠে 

*পঞ্চাশের অধিক নেতা নিয়েছেন কাদেরবিরোধী অবস্থান

*একটি বড় অংশ চায় নতুন কেউ সাধারণ সম্পাদক 

 

আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলনের বাকি আর মাত্র তিন দিন। আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর হবে দলটির ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনে কে আসছেন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে, তা নিয়ে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনসাধারণেরও জিজ্ঞাসা-কৌতূহল বেড়েই চলেছে। গুঞ্জন আছে অনেককে নিয়ে।

তবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন, নাকি নতুন কেউ দলের গুরুত্বপূর্ণ এ পদে আসছেন তার নিশ্চিত কোনো জবাব নেই কারও কাছে। কখনো শোনা যাচ্ছে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন আবার কখনো শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য কোনো নেতা সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা  বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইস্যুতে বসে নেই কোনো কেন্দ্রীয় নেতাই। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজেদের পছন্দের লোককে নেতা বানানোর বিভিন্ন কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কেউ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, সাধারণ সম্পাদক প্রশ্নে দলে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর বেশিরভাগ সদস্য চান ওবায়দুল কাদেরই থাকুক।

তাদের সঙ্গে আছেন সম্পাদকমণ্ডলীর দুতিন সদস্যও। অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন– এমন পঞ্চাশের অধিক নেতা নিয়েছেন কাদেরবিরোধী অবস্থান। তারা চান নতুন কেউ আসুক এ পদে।

এছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর এমন কয়েক সদস্য রয়েছেন যারা বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের অধীনে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল, বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও নেতাদের বাসায় মাঝেমধ্যেই বৈঠকে বসছেন দুই পক্ষের নেতারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে দলের একটি অংশের নেতারা আলোচনা করেছেন, করেছেন মধ্যাহ্নভোজও। এদিকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য (যিনি সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচিত) ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় একজন রাজনৈতিক নেতার বাসায় বসে কী করা যায় সে সলাপরামর্শ করেছেন। এছাড়া ধানমণ্ডি, বেইলী রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় যেসব রাজনৈতিক নেতার বাসা আছে সেখানেও বৈঠক চলছে। এসব বৈঠকে থাকছেন সম্পাদকমণ্ডলীর বড় একটি অংশ।

তবে তাদের মধ্যে কে সাধারণ সম্পাদক হবেন তা ঠিক না হলেও তারা মূলত বর্তমান সাধারণ সম্পাদককে ঠেকানোর কৌশল খুঁজছেন।

সম্পাদকমণ্ডলীর ওইসব নেতা  বলেন, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীর আওয়ামী লীগকে যেভাবে দেখতে চান সেজন্য অবশ্যই নতুন সাধারণ সম্পাদক প্রয়োজন।

তারা বলেন, মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন এমন কাউকে সাধারণ সম্পাদক করা না হলে দলের জন্য ভালো হবে। সম্পাদকমণ্ডলীর বেশিরভাগ নেতাই মনে করেন, গত তিন বছরে সাংগঠনিক কাজে গতি ছিল না।

দায়সারা গোছে সংগঠন চলেছে। সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা  বলেন, সামনে মুজিববর্ষ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে মুজিববর্ষ উদযাপনে। এখানে দলের দায়িত্ব পালনে কোনো কমতি রাখা যাবে না। সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য  বলেন, গত তিন বছরে দলীয় কাজ ঐক্যবদ্ধভাবে করা সম্ভব হয়নি।

দলীয় কাজে কাউকে যুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে দলীয় কাজে কিছুটা ধীরগতি এসেছে। এসব কারণে বর্তমান সাধারণ সম্পাদককে পুনরায় চান না তারা। তাই একে অপরের বাসাবাড়িতে বৈঠক করছেন।

সম্পাদকমণ্ডলীর একটি বড় অংশ মনে করেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার ওপর বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়াও ঠিক হবে না। তাই তাকে চাপমুক্ত রাখার চিন্তা করছেন অনেকে। এক্ষেত্রে যে-ই হোক দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক তাতে আপত্তি নেই তাদের।

সাধারণ সম্পাদক নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়া আওয়ামী লীগের নেতাদের এই দৌড়ঝাঁপ আগে না থাকলেও গতকাল বেড়েছে। জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে তৃণমূলের সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলে সাধারণ সম্পাদক নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে থাকা কেউই গোপন সলাপরামর্শ করতে পারেননি। এখন সব নেতা ঢাকায় থাকায় নিজেদের ‘মিশন’ বাস্তবায়নে মাঠে নেমে পড়েছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর অন্য এক সদস্য  বলেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কর্মীবান্ধব বলে যেমন পরিচিতি রয়েছে, তেমনি তার বিরুদ্ধে একটি ‘বিশেষ গোষ্ঠীবেষ্টিত’ থাকার অভিযোগও আছে।

তিনি বলেন, আগামীর আওয়ামী লীগের কথা ভাবতে হবে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বড় কোনো অভিযোগ না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে একাধিকবার ইঙ্গিতও দিয়েছেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃতি করে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে ‘ক্লিন ইমেজ’ নিয়ে দল ও আদর্শের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন– এমন কাউকেই এবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।