ঢাকা শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


সম্মানিত চাল চোরদের ছোবলে বিধ্বস্ত মানবিকতা!


১০ এপ্রিল ২০২০ ০৭:০১

আপডেট:
১০ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৩৮

ঘরে থাকুন, নিজে নিরাপদ থাকুন, দেশকেও নিরাপদে রাখুন' স্লোগান আর হাতে খাবার নিয়ে গরীবের দুয়ারে দুয়ারে কড়া নাড়ার কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের, অথচ বাস্তব চিত্র উল্টাটা ঘটছে।
আমরা দেখছি রক্ষককে ভক্ষকের দায়িত্বে, দুস্থ অসহায় মানুষের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার দায়িত্বে এখন সম্মানিত চাউল চোরদের স্লোগান আপনরা ঘরে থাকুন, না খেয়ে দেশকে নিরাপদে রাখুন, আমরা আপনাদের হকের চাউল চুরি করে খাওয়ার মহাসুযোগ পেয়েছি ।

দেশে চাল চোরদের জন্য এযেন মহা সুযোগ । সাধারণ মানুষের জন্য মহা দু:সময় হলেও , চাল চোরদের জন্য এযেন মহা সুসময়। চাল চোরদের মহা উৎসব।

গরীব মানুষদের জন্য বরাদ্দ হওয়া সরকারী ত্রাণের শত শত চালের বস্তা উদ্ধার হচ্ছে কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, মেম্বার, স্থানীয় বিভিন্ন  নেতাদের বাড়ি থেকে, গুদাম থেকে।

কোথাও আবার অসহায় পরিবারের 'কাল্পনিক তালিকা ' তৈরি করে চলছে হরিলুট।

যাদের ঘর থেকে, গুদাম থেকে গরীবের ত্রাণের শত শত বস্তা চাল উদ্ধার হচ্ছে তাঁরা সবাই সমাজের 'সম্মানিত', 'প্রভাবশালী' ব্যক্তি।

নগদ অর্থ, সম্পদের কোন অভাব না থাকা সম্মানিত, প্রভাবশালীরা দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষদের কয়েক কেজি চালের লোভ সামলাতে পারছেন না। নিজ দায়িত্বে ওনারা গরীবের চাল নিজেদের ঘরে, গুদামে রাখছেন, ট্রাক ভরে নিয়ে যাচ্ছেন।

ওনারা চোর। দুঃখিত , ওনাদের শুধু চোর লিখে অসম্মান করতে চাইনা। ওনারা আমাদের 'সম্মানিত চাল চোর'। অবশ্য মানীলোকের মান সামান্য চাল চুরিতে নষ্ট হয়না। হবার কথাও না। গরীবের হক চুরি করা মানী লোকদের মান নষ্ট হবার রেকর্ড এই দেশে তেমন একটা নেই। গরীবের ত্রাণের চাল চুরি করে ধরা পড়ে কারো রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও নষ্ট হয়না। উল্টো আরো বড় নেতা হবার সুযোগ তৈরি হয়।

সম্মানিত চাল চোরেরা হয়ত ভাবছেন, করোনা ভাইরাস শুধু গরীবদের আক্রান্ত করবে। ওনাদের আক্রান্ত করবে না। সাধারণ মানুষরা যেমন ভয়ে চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, নেতাদের আশপাশে যায়না করোনা ভাইরাসও ভয়ে ওনাদের কাছে যাবে না। সম্মানিত চাল চোরদের সামাজিক, রাজনৈতিক পরিচয় দেখেই জান নিয়ে পালাবে করোনা ভাইরাস!

'সম্মানিত'রা এখন গরীবের ত্রাণের চাল চুরি করছেন। আগামীতে হয়ত করোনা টেস্ট কিট চুরি করবেন। পত্রিকার শিরোনাম হবে 'চেয়ারম্যানের গুদাম থেকে বস্তা ভর্তি করোনা টেস্ট কিট উদ্ধার' কিংবা '৫০০ করোনা টেস্ট কিট সহ নেতা আটক' ।

এই সম্মানিত চোরদের উদ্দেশ্য করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,‘এত রক্ত দেওয়ার পরে যে স্বাধীনতা এনেছি, চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয় নাই। এখনো ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরকারবারি, মুনাফাখোরী বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে দিয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত আমি এদের অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি। কিন্তু আর না।’

বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমাকে আনতে হয়, আর এই চোরের দল আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ করে এভাবে লুটতরাজ করে খায়। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপরোক্ত বক্তব্য সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রদান করেন। তিনি চেয়েছিলেন এই দেশ থেকে চোরাকারবারি, মুনাফাখোর, ঘুষখোরদের বের করে দিতে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ১৯৭৫ সালের পনের আগস্ট জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তখন থেকেই সেই দূর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোররা পাকিস্তানের মতো এদেশের মানুষকে পদে পদে ঠকিয়ে আসছে। এদেশের হতদরিদ্র মানুষের হক নিজেদের করে নিচ্ছে।

 অসহায় এ মানুষগুলোর ক্ষুধা নিবারণে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে খাদ্য সহায়তা। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা। অথচ এই জনপ্রতিনিধিরা অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের ত্রাণ আত্মসাৎ করছে। চাল চুরি করে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর কাছে গরিবের এ খাবার বিক্রি করে দিচ্ছে। এমন হাজারো ঘটনা ঘটছে। যার কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। যার কল্যাণে প্রশাসন এই নির্লজ্জ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নিয়েছে। আজ যেন সম্মানিত চাল চোরের ছোবলে বিধ্বস্ত মানবিকতা!

লেখক,শাহ আলম,

সাংবাদিক, কলাম লেখক,

সাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ