ঢাকা শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


আদর্শ আর মানবিকতার মিশেলে নতুন এক যুবলীগ


২ অক্টোবর ২০২০ ০৬:৫৬

আপডেট:
২ অক্টোবর ২০২০ ০৬:৫৭

বাংলাদেশের প্রথম যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। দেশের যুবকদের সংগঠিত করে মানবিক কাজে আত্মনিয়োগের লক্ষে ১৯৭২ সালের ১১ই নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনি কর্তৃক বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। বহু বছর ধরে এদেশের সকল জাতীয় আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে যুবলীগ। আদর্শ আর মানবিকতার ফুলজুড়ি বিলিয়েছে সর্বদা। তবে সম্প্রতি কিছু বহিরাগত নেতাকর্মীদের বিতর্কিত কর্মকান্ডে সমালোচিত হয়েছে সংগঠনটি। পরবর্তীতে তড়িৎ সিদ্ধান্তে বিতর্কিত নেতাদের বহিস্কার করে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে সুপ্রাচীন এই সংগঠনকে ঠেলে সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। নতুন কমিটির পর থেকে নজর দেয়া যাক বর্তমান যুবলীগ পর্যন্ত-

নতুন যুবলীগঃ জননেত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশকে দেয়া হয়েছে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়েছেন আরেক সংগ্রামী ক্লিন ইমেজের মাঠ পর্যায়ের নেতা, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক সভাপতি মাইনুল হাসান খান নিখিল। ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে যুবলীগকে তার পূর্বের ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন এই দুই মানবিক নেতা। তাদের দিক নির্দেশনায় সারা দেশে শুরু হয়েছে এক নতুন যুবলীগের যাত্রা- মানবতাই যার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য।

মানবিক যুবলীগঃ যুবলীগের মানবিক কর্মকান্ডের সুফল ইতোমধ্যেই ভোগ করতে শুরু করেছে দেশের মানুষ। করোনা মোকাবিলায় মানবিক কর্মসূচি নিয়ে শুরু থেকেই তৎপর রয়েছে যুবলীগ। সারাদেশে নানা কার্যক্রম নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম এই সহযোগী সংগঠন। কর্মহীন অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবা ও ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান। কেন্দ্রের পাশাপাশি সংগঠনের কয়েকটি জেলা কমিটি নিয়েছে ব্যতিক্রমী কর্মসূচি তথা 'ভ্রাম্যমাণ বাজার' ও 'ডক্টরস সেফটি চেম্বার'। গত ৮ মার্চ, ২০২০ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরই যুবলীগের মানবিক কর্মসূচি শুরু হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মাঠে নেমে পড়েন নেতাকর্মীরা। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক কার্যক্রম। জননেত্রী শেখ হাসিনা দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে সারাদেশে ত্রাণ কমিটি গঠন করে অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের তালিকা তৈরি ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারসহ প্রশাসনকে সহযোগিতার নির্দেশও দেন।

করোনা সংকট শুরু হলে মানবিক কর্মসূচি যুবলীগ সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে জনমনে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় যে, প্রথমে দেশব্যাপী নাগরিক সচেতনতায় কাজ শুরু করে যুবলীগ। প্রথম দিকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, মাস্ক এবং প্রচারপত্র বিতরণ করেন নেতাকর্মীরা। পরে লকডাউন শুরু হলে কর্মহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তারা। সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা শেখ ফজলে শামস পরশ ও মাইনুল হোসেন খান নিখিল ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার দুস্থ মানুষকে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আলু, লবণ ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী এবং রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রমজানে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। আজ পর্যন্ত সারাদেশেই অনুরূপ কার্যক্রম চলছে।

করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ফ্রি টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে যুবলীগ। সর্দি, জ্বর ও হাঁচি-কাশিসহ যে কোনো রোগে স্বাস্থ্যসেবা দিতে জরুরি টেলিমেডিসিন সার্ভিসের আওতায় সংগঠনের সাবেক উপ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে আট সদস্যের সমন্বয় টিম এবং ৯০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে পাঁচটি পরামর্শক টিম গঠন করা হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘণ্টা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও করোনায় কেউ মারা গেলে দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেশের অনেক জায়গায় শ্রমিক সংকটে পড়া কৃষকদের ধান কেটে দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন নেতাকর্মীরা।

এছাড়াও মানবিক যুবলীগের কার্যক্রম অব্যাহত আছে এবং বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে। খাবার সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করা ছাড়াও যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট শোকাবহ আগস্ট মাসে পথশিশু ও ভবঘুরে মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন। শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় যুবলীগ কেন্দ্রীয় পার্টি অফিস, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও পান্থকুঞ্জ পার্ক মাঠে ১ আগস্ট থেকে পর্যন্ত পথশিশু ও ভবঘুরে মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এ কার্যক্রম মাসব্যাপী চলমান ছিল।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে যুবলীগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সারা বাংলাদেশ অব্যাহত রয়েছে। “গাছ লাগান, জীবন বাঁচাই” স্লোগানকে সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি নেতাকর্মীকে তিনটি করে বৃক্ষ রোপন করার আহ্বান জানান। এরই ফলশ্রুতিতে সারা বাংলাদেশে যুবলীগ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন, শুধুমাত্র অগাস্ট মাসেই ৩১ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করা টার্গেট নিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য কর্মসূচির পাশাপাশি শোকের মাসে যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও পালন করে যাচ্ছেন।

কর্মীদের পাশে যুবলীগঃ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ৭৫টি ওয়ার্ড ও প্রায় তিন শতাধিক ইউনিটের সুবিধাবঞ্চিত আট হাজার কর্মী-সমর্থকের মধ্যে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। গত ৫ মে থেকে শুরু হয়ে ১০ দিন যাবৎ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সেসময় ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় এক হাজার ছয়শ' কর্মী-সমর্থককে উপহার দেওয়া হয়। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, আলু, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ ও সেমাই।

যুবকদের নিয়ে পরিকল্পনাঃ ইতোমধ্যে যুবলীগের সম্মানিত চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ঘোষণা দিয়েছেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক, সারা বাংলাদেশের বেকার যুবকদের তথ্য সংগ্রহ, কাজের ক্ষেত্র, কাজের পরিধি ও পদ্ধতি নিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের স্লোগান ছিল “পরিচ্ছন্ন রাজনীতি, যুবলীগের প্রতিশ্রুতি”। যুবলীগের বর্তমান নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই যুবলীগকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির পাঠশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার সঠিক নির্দেশনায় বর্তমান নেতৃত্বের কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যুবলীগ তার সঠিক গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। আর এরই প্রমাণ হাজির হয়েছে সমগ্র দেশবাসীর সামনে। মহান জাতীয় সংসদে, প্রাণপ্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র যুবলীগের কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ এরই এক উৎকৃষ্ট প্রমাণ।

যুবলীগ নেতারা মনে করেন, অতীতে যারা যুবলীগের সাইন বোর্ড ব্যবহার করে দলকে কলংকিত করেছেন তারা মানবসেবার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন। দলের বর্তমান মানবিক কাজে থাকা যুবলীগ নেতারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন দেশের মানুষের সংকটকালীন সময়ে যুবলীগের হয়ে যারা কাজ করছেন এরাই প্রকৃত মুজিব আদর্শের শেখ ফজলুল হক মনির প্রতিষ্ঠিত যুবলীগের সৈনিক। করোনা আতংকের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন যুবলীগ নেতারা তাদের ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে যুবলীগের রাজনীতির মানবিক দিকটি তুলে ধরতে পারছেন নতুন প্রজন্মের সামনে। তাদের বিশ্বাস মানব কল্যাণের রাজনীতির মাধ্যমে অতীতের গ্লানি মুছে যুবলীগের বর্তমান নেতৃত্ব শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছতে সক্ষম হবে।

যুবলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস নিয়েই যেকোনো কর্মসূচি পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সব ধরনের ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত। প্রাণপ্রিয় সংগঠন, মানবিক যুবলীগ এর জন্য শুভকামনা রইল।


রাজনীতিবিদ ও প্রযুক্তি ব্যবসায়ী