ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান নয়, সবার আগে মানুষ হও!


১৬ অক্টোবর ২০২১ ১০:০৭

আপডেট:
১৬ অক্টোবর ২০২১ ১০:১০

মো.শাহআলম

‘সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই' – জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এ কথাটিকেই ‘মন্ত্র' ভেবেছি, ভালোবেসেছি মানবজাতিকে৷ অথচ আজ আমারই দেশের মানুষ দেশমাতৃকাকে কলঙ্কিত করছে৷ ধর্মের দোহাই দিয়ে হত্যা করছে ‘মানুষদের৷ সম্প্রতি কুমিল্লার পূজামণ্ডপে ‘পবিত্র কোরআন শরিফ উদ্ধার’ নিয়ে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, এর নেপথ্যে বড় ভূমিকা রেখেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর তথ্য। ফলে চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শান্তিই নাকি পৃথিবীর সকল সম্প্রদায়গত ধর্মের গন্তব্য। তাহলে এই শতাব্দীর দ্বার প্রান্তে এসে এইসব আমরা কি দেখছি ? মানুষের কল্যাণের জন্য যে ধর্ম তা নিয়েই কত রাজনীতি,মত বিভেদ, রক্তপাত, অত্যাচার, লাঞ্ছনা আর অশান্তি।

ঔপনিবেশিক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের কারণে এই ধর্মের নামে সন্ত্রাসের বীজ অনেক আগেই বাংলার মাটিতে বপন করা ছিল যা এখন বড় মহীরুহে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রমাণ করেছে দ্বিজাতিতত্ত্বের কারণে দেশ ভাগ হওয়াটা ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। ভাষা ,সংস্কৃতি এবং ইতিহাসই জাতিসত্তার মূল ভিত্তি। বাঙালির প্রথম পরিচয় সে একজন বাঙালি ।

বাঙালি- বাঙালি ভাই-ভাই না হয়ে, যখন শুধুমাত্র মুসলিম-মুসলিম ভাই-ভাই হিন্দু হিন্দু ভাই-ভাই  খ্রিস্টান খ্রিস্টান ভাই ভাই হবার প্রচেষ্টা চলে, সেখানেই তখন ধর্মীয় হিন্দুত্ব ও মৌলবাদীরা সফলতা অর্জন করে। প্রতিটি ধর্মের অবুঝ ধর্মীয় চেতনাবাজ,দেশের সম্প্রীতির জন্য মারাত্মক!

বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল মন্ত্র ছিল, বাংলার প্রত্যেক মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে জনগণকে মুক্তি দেয়া।

বাঙালি হবে একটি অসাম্প্রদায়িক জাতি। ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মিশ্র আদর্শে এই ভূখণ্ড পরিচালিত হবে।

মানুষ যদি অন্তরাত্মাকে না চেনে, অন্য ধর্মকে সম্মান করতে না শিখে নিজেকে "সর্বশ্রেষ্ঠ" প্রমাণের জন্য ব্যস্ত থাকে ,তাহলে সমাজে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা গড়ে উঠবে না।

'সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই' কিন্তু আজকের বাংলার বাস্তবতা উল্টো 'সবার উপরে ধর্ম সত্য মানুষ সেখানে নাই'!

বাংলাদেশ শুধু মুসলমানের দেশ নয় ! হিন্দু-বৌদ্ধরা মার খেলো বলে প্রতিবাদ শুধু তারাই করবে না। এই প্রতিবাদ আসতে হবে দেশের আপামর মেজরিটি মুসলমানদের পক্ষ থেকে সবার আগে, তাহলে নির্যাতিতরা সাহস পাবে এই ঘোরতর অন্ধকারে নতুন করে বাঁচবার ।

নিঃশ্চুপ থেকে যারা নির্যাতনকারীদের হাতকে আরো বেশি শক্তিশালী করছে তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে। মেজরিটি জনগণের নীরবতা তাদের অজান্তেই পরোক্ষভাবে এই সহিংস ধর্মীয় সন্ত্রাস টিকিয়ে রাখার পক্ষে সমর্থন যোগাচ্ছে।

 

নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আমাদের দিন